Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রস্টেট ক্যান্সার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য : চিকিৎসার উপর গুরুত্বারোপ

প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : প্রস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কীভাবে তার চিকিৎসা করা হবে অথবা আদৌ তার চিকিৎসা করা হবে কিনা সে ব্যাপারে যে সব মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যার সম্মুখীন, এক নতুন গবেষণায় তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হয়েছে।
গবেষকরা ১০ বছর ধরে রোগীদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। যে সব লোককে বাছবিচার না করে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বা যাদের রেডিয়েশন দেয়া হয়েছে অথবা ক্যান্সার চিকিৎসায় কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা দেখার জন্য সক্রিয় মনিটরিং করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য তারা দেখতে পাননি।
ক্যান্সারের রোগীদের মৃত্যুর হার কম, মাত্র ১ শতাংশ। তবে যে সব মানুষ শুরুতে চিকিৎসার বদলে মনিটরিং-এর আওতায় থাকেন তাদের রোগ বৃদ্ধি পেতে ও ছড়িয়ে পড়তে পারে। গবেষণাধীন রোগীদের প্রায় অর্ধেক যারা মনিটরিংয়ের আওতায় ছিলেন তারা শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করান বা রেডিয়েশন নেন।
রোগীদের এখনো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে যা থেকে জানা যাবে যে চূড়ান্ত পর্যায়ে মনিটরিংয়ে থাকা রোগীদের মৃত্যুহার বেড়েছে কিনা।
ডাক্তাররা বলছেন, এ গবেষণার ফল মানুষকে পুনরায় আশ^স্ত করবে যে ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্রোপচার ও রেডিয়েশনকে সমান যৌক্তিক পছন্দ।
গবেষণার নেতা ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের ডা. ফ্রেড্ডি সি. হামদি এক সাক্ষাতকারে বলেন, আমি এখন রোগীদের আরো ভালো কাউন্সিল করতে পারি। আমি তাদের একদম সঠিক করে বলতে পারি দেখুন, ক্যান্সারে আপনার মৃত্যুর আশঙ্কা খুব, খুবই কম। আপনি যদি চিকিৎসা নেন তাহলে কিছু উপকার পাবেন।  চিকিৎসা প্রস্টেটের বাইরে ক্যান্সারের ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে, তবে এর ফলে পাশর্^প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
সক্রিয় মনিটরিং-এর মধ্যে রয়েছে প্রস্টেট-স্পেসিফিক এন্টিজেন বা পিএসএ’র জন্য প্রস্টেটের শারীরিক পরীক্ষা, মাঝে মাঝে বায়োপ্সি ও রক্ত পরীক্ষা করা। পিএসএ হচ্ছে একটি উপাদান যা রোগের অবনতি ঘটার আভাস দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশই সক্রিয় মনিটরিংকে বেছে নেয়।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ গবেষণায় ক্যান্সার চিকিৎসার পাশর্^ প্রতিক্রিয়া বিষয়ে রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রথম বিশদ তথ্য রয়েছে।
যে সব রোগী অস্ত্রোপচার করে প্রোস্টেট অপসারণ করেছেন তারা খুব সম্ভবত নপুংসকতা ও প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। যাদের রেডিয়েশন দেয়া হেেছ তারা চিকিৎসার ৬ মাস পর (সাধারণত ধীরে ধীরে উন্নতি দেখা যায়) সমস্যার কথা জানিয়েছেন, প্রস্রাবের সমস্যার কথা নয়। রেডিয়েশন নেয়ার পর যৌন ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়, তবে তা পুনরুজ্জীবিত হয়।
এ গবেষণায় সম্পৃক্ত না থাকা নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল সেøায়ান কেটারিং ক্যান্সার সেন্টারের এক প্রস্টেট সার্জন ও অস্ত্রোপচার বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. পিটার টি. স্কার্ডিনো বলেন, এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রাথমিক প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন ও সতর্ক মনিটরিং-এর তুলনামূলক তথ্য এর আগে কম ছিল।
ডা. স্কার্ডিনো বলেন, এই গবেষণা এটা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে যে বহু লোকের জন্যই সক্রিয় মনিটরিং একটি মূল্যবান বিষয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক প্রস্টেট ক্যান্সার আক্রান্তদের এক তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক লোকের জন্য এটা যথাযথ এবং এ সব রোগীদের এক তৃতীয়াংশের ১০ বছরের মধ্যে চিকিৎসা প্রয়োজন।
তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে একজন রোগীকে সারাজীবন নিয়মিতভাবে ও যতেœর সাথে মনিটরিং করতে হবে। তিনি বলেন, এই গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হচ্ছে যে প্রাথমিক প্রস্টেট ক্যান্সার বিপদজনক নয় এবং সেক্ষেত্রে মানুষের সামনে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় থাকে।
ক্যান্সার বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সর্বশেষ বার্ষিক উপাত্তে বলা হয়, বিশে^ ১১ লাখ লোক প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত। ২০১২ সালে এতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮১ হাজার, ২০১৬ সালে ২৬ হাজার লোক মারা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিকিৎসাধীন রোগীদের গড় বয়স ৬৬ এবং ৪০ বছরের নিচে আক্রান্তের সংখ্যা বিরল। আমেরিকান ক্যান্সার সমিতির মতে, যাদের প্রস্টেট ক্যান্সার হয়েছে তাদের অধিকাংশই এতে মারা যায় না।
এ রোগ প্রায়ই খুব ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়, তবে সব সময় নয়। কিছু ক্ষেত্রে তা সম্ভাব্য প্রাণঘাতী, তবে পরীক্ষায় তা বলা যায় না তিনি কে।
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের একটি নিরপেক্ষ প্যানেল যুক্তরাষ্ট্র প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস টাস্ক ফোর্স পিএসএ পরীক্ষার সাথে প্রস্টেট ক্যান্সারের রুটিন স্ক্রিনিং-এর বিরুদ্ধে সুপারিশ করে। প্যানেল বলে, স্ক্রিনিং-এ বহু টিউমার দেখা যায় যেগুলো রোগীর জন্য ক্ষতিকর নয় । অথচ সে জন্য অস্ত্রোপচার করা বা রেডিয়েশন দেয়া হয় যা সমস্যাজনক পাশর্^ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
ক্যান্সারে মৃত্যুর হারে যদিও পার্থক্য দেখা যায় না, সক্রিয় মনিটরিং-এ থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা যায়। মনিটরিং-এ থাকা ৩৩ জনের শরীরের দূরতম অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ে, যাদের ১৩ জনের অস্ত্রোপচার করা হয় ও ১৬ জনের রেডিয়েশন দেয়া হয়। পার্থক্য পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসা লাভের পর অধিক থেকে অধিক সংখ্যক রোগী সুস্থ হয়ে উঠছে।
ডা. হামদি বলেন, মনিটরিং ছেড়ে দেয়া সকল লোকেরই চিকিৎসা প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, আমরা জানি যে তাদের ৮০ শতাংশেরই কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যায়নি। রোগী বা তাদের চিকিৎসকদের উদ্বেগ অথবা উন্নতির ক্ষেত্রে সন্দেহ তাদেরকে চিকিৎসা গ্রহণের দিকে ঠেলে দেয়।
অবসরপ্রাপ্ত রবার গ্লাভস তৈরীকারী ৭৬ বছর বয়স্ক রবার্ট বুলটন প্রাথমিকভাবে সক্রিয় মনিটরিংভুক্ত হন। কিন্তু তার পিএসএ বেড়ে যাওযায় তাকে রেডিয়েশন চিকিৎসা দেয়া হয়। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, দু’জন ডাক্তার তাকে এ চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেন এবং একজন বিরোধিতা করেন। তাই তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠের পরামর্শ নেন।  তিনি বলেন, তার একমাত্র পাশর্^প্রতিক্রিয়া ছিল তার পুরুষালি স্তনের স্ফীত হওয়া। রেডিয়েশনের সাথে হরমোন চিকিৎসার কারণে এটা ঘটেছিল। তিনি বলেন, আমি এখন ভালো বোধ করছি, কোনো সমস্যা নেই।
ডগলাস কলেট নামে ৭৩ বছরের আরেক রোগী বলেন, ২০০৮ সালে তিনি সক্রিয় মনিটরিংভুক্ত হন। এখনো আছেন। তাকে প্রথম যখন বলা হয় যে তার ক্যান্সার হয়েছে তিনি তাড়াতাড়ি তা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যখন এ রোগ ও এর চিকিৎসার পার্শ^ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আরো জানতে পারলেন তখন ধৈর্য ধরেন এবং তাকে মনিটরিংভুক্ত করা হয়। তিনি উপলব্ধি করেন যে রোগের উন্নতি হতে পারে। সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস।





 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রস্টেট ক্যান্সার গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য : চিকিৎসার উপর গুরুত্বারোপ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ