Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানহীন ওষুধে সয়লাব বগুড়া

মহসিন রাজু | প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

সুষ্ঠু তদারকির অভাবে বগুড়ায় অনুমোদন ছাড়া মানহীন হোমিও ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ওষুধ উৎপাদনের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে ভারত থেকেও আসছে বিভিন্ন যৌন উত্তেজক ওষুধ। ফলে মান ও অনুমোদনহীন এসব ওষুধ অবাধে কেনাবেচা হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

স্বাস্থ্য বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুগের চাহিদা ও দাবির সাথে সংগতি রেখে সরকার ইউনানী, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের সরকারি হাসপাতালে একজন করে ইউনানী ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে। দাবি উঠেছে হোমিও চিকিৎসক নিয়োগেরও। যেন সাধারণ মানুষ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হারবাল ওষুধে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে। আর এটাকেই সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে কিছু অর্থলোভী হোমিও, ইউনানী ও আয়ুর্বেদ ওষুধ কোম্পানির মালিক। স্বাস্থ্য বিভাগের গাইডলাইন অমান্য করে অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদন করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় ৪/৫টি হোমিও এবং ১৯টি ইউনানী এবং ৮টি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি কোম্পানির লাইসেন্স দীর্ঘদিন যাবৎ নবায়ন করা হয়নি। নবায়নহীন এসব কোম্পানির আবার কোন কোনটির ৫-১০ বছর পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। এগুলোর লাইসেন্সের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও এসব কোম্পানি সরকারি নিয়মকানুন উপেক্ষা করে ওষুধ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। উৎপাদন করে যাচ্ছে মানহীন ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ওষুধ ।

তবে মারাত্মক অভিযোগ হল এসব ওষুধ কোম্পানির জন্য বরাদ্দ এ্যালকোহলিক পারমিটের কাগজ ব্যবহার করে চোরাই পথে এ্যালকোহল এনে তা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, সাধারণভাবে এ্যালকোহলকে মাদক হিসেবে ব্যবহারের জন্য শুধুমাত্র হোমিও ওষুধ প্রস্তুতকারকদের দায়ী করা হলেও এরসাথে যে অন্যান্য ওষুধ প্রস্তÍতকারকরাও জড়িত এ বিষয়টি কারো আমলেই আসে না।

ওষুধ তত্ত্বাবধায়কের অফিসের একটি সূত্রে জানা যায়, বগুড়ার যেসব ইউনানী ওষুধ কোম্পানীর লাইসেন্স দীর্ঘদিন নবায়ন করা হয়নি তার মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন ল্যাবরেটরীজ, এ এস এ ল্যাবরেটরী, ফার্মাজেম ল্যাবরেটরী, ইউনাইটেড ফ্রেন্ডস ফার্মাসিউটিক্যালস, জর্জ ইউনানী ল্যাবরেটরী, রেমেক্স ল্যাবরেটরী, ইষ্টল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল(বর্তমানে স্থগিত), পিএম ল্যাবরেটরী, রেডরোজ ফার্মাসিউটিক্যাল, আর কে ল্যাবরেটরীজ, প্রিভেন্টিস বাংলাদেশ ইউনানী। এছাড়া আয়ুর্বেদিক ফার্মাসিউটিক্যালস এর মধ্যে নিকো আয়ুর্বেদিক ফার্মাসিউটিক্যাল, ইউনাইটেড ল্যাবরেটরী ও কনফিডেন্স ফার্মাসিউটিক্যালসও দীর্ঘদিন ধরে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেনি। অপরদিকে সম্প্রতি পারুল হোমিও ও পুনম হোমিও নামের দুটি হোমিও ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে ওষুধ প্রশাসন। তবে এই প্রতিষ্ঠানদুটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বড় ধরনের চক্রান্তের শিকার।

এদিকে বগুড়ার লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া বেশিরভাগ কোম্পানির অনুমোদনহীন ওষুধে বাজার ছেয়ে গেছে। ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক স্থগিত করা একটি কোম্পানির ওষুধও উৎপাদন অব্যাহত রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোম্পানিগুলো ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে নিষিদ্ধ কেমিক্যাল সিলডেনাফিল সাইট্রেট (এসএস ) ও ক্যাফেইন ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে যৌন উত্তেজক ওষুধ উৎপাদন করছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। আর এসব যৌন উত্তেজক ওষুধ শুধু ফার্মেসির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জের পান বিড়ি ও মুদি দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপকভাবে।

ফলে সহজলভ্য এসব ওষুধ ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ লিভার, কিডনি, হৃদরোগসহ মারাত্মক সব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উঠতি বয়সের কিশোর-যুবকরা এসবে আসক্ত হয়ে অনৈতিক কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে বগুড়ার একটি আয়ুর্বেদিক কোম্পানিতে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে ৫০ কেজি নিষিদ্ধ কেমিক্যাল ক্যাফেইন আটক করে। অবৈধভাবে কেমিক্যাল ক্যাফেইন মজুদ করার দায়ে ঐ কোম্পানির মালিকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।

বগুড়া জেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি রফি নেওয়াজ খাঁন রবিন বলেন, যেসব ইউনানী, আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানি অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদন করে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির মাঝে ঠেলে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি অহবান জানান। এছাড়া অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রিকালে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে তার দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি তার দায় দায়িত্ব বহন করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

যৌন উত্তেজক ওষুধ ব্যবহার সম্পর্কে বগুড়ার বিশেষজ্ঞ চিকিসক ডা. সামির হোসেন মিশু বলেন, যৌন উত্তেজক ওষুধ ব্যবহারে মানসিক সমস্যাসহ হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাছাড়া লিভার ও কিডনি নষ্ট হতে পারে। এসব কারণে যৌন উত্তেজক ওষুধ কোন ক্রমেই ব্যবহার করা উচিত নয়। বগুড়ার ড্রাগ সুপার অবশ্য বিভিন্ন কোম্পানির অনুমোদনহীন ওষুধ উৎপাদন সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান। বগুড়ার প্রধান ওষুধের মার্কেটে এসব অনুমোদনবিহীন ওষুধ বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে এ্যাকশানে যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে তারা বসে নেই আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহনের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানহীন ওষুধে সয়লাব বগুড়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ