Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এমএনপি নিলাম হঠাৎ স্থগিত

প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অপেক্ষা বাড়ল নম্বর পরিবর্তন সেবা গ্রহণের
ফারুক হোসাইন : হঠাৎ করেই স্থগিত করে দেয়া হয়েছে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবার লাইসেন্সের নিলাম অনুষ্ঠান। এর ফলে ফের পিছিয়ে গেল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে যে কোনো মোবাইল ফোন অপারেটরের সেবা গ্রহণের সুযোগ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরই এমএনপি সেবার লাইসেন্স প্রদানের জন্য নিলাম অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গত মঙ্গলবার অনিবার্য কারণ উল্লেখ করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি’র এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়, ওই নিলাম অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। যদিও এর আগে নিলাম অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১ সেপ্টেম্বর। পরে তা পরিবর্তন করে ২৮ সেপ্টেম্বর করা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয় আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কবে হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তীকালে নিলামের তারিখ জানানো হবে।
পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এমএনপি নিলামের আবেদন বাতিল ও গ্রহণের দিন ছিল গত মঙ্গলবার। আর ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল নিলামের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে পরামর্শ বৈঠক। এসব কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই নিলামের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিটিআরসি এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর এমএনপি নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুক পাঁচটি যোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেÑপোল্যান্ডের টিফোরবি এসপি জেড ও ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিভ নাম্বার লিমিটেড, লিথুনিয়ার মিডিয়া ফোনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রীনটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, স্লোভেনিয়ার টেলিটেক ডিও ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড, ব্রাজিলের ক্লিয়ার টেকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্রাজিল বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এবং নরওয়ের সাইসটর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রুটস্ ইনফোটেক লিমিটেড। নিলামের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্য থেকে যে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান এমএনপি সেবা প্রদানের জন্য নির্বাচিত হওয়ার কথা। এ পাঁচ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিটিআরসির কাছে বিড আর্নেস্ট মানি বা নিরাপত্তা জামানত জমা দিয়েছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, এই সেবা প্রদানের সাইসেন্স পাওয়ার জন্য মোট ১৮টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের আবেদন বিটিআরসিতে জমা দেয়। এর একটি ছাড়া বাকি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য হবে ঘোষণা করে কমিশন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোই নিলামে অংশগ্রহণ করবে।
গত ১৪ জুন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছিলেন, নিলাম প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর লাইসেন্স হস্তান্তর করে এ বছর সেবা চালু করা যাবে বলে তারা আশা করছেন। সেবায় সন্তুষ্ট না হলেও এখন অনেকে নম্বর পরিবর্তনের ঝক্কিতে যেতে চান না বলে অপারেটর বদলান না। এমএনপি চালু হলে তারা নম্বর ঠিক রেখেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এর আগে বহু প্রতীক্ষিত এই সুযোগ তৈরির জন্য গতবছরের ২ ডিসেম্বর এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। মোবাইল ফোন নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদলের কাজ কারা পাবে, সেই প্রক্রিয়া ‘স্বচ্ছ’ করতে কয়েকটি মূল্যায়ন মানদ- যুক্ত করে গত জানুয়ারিতে এমএনপি নীতিমালার সংশোধিত খসড়া চূড়ান্ত করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর পর মে মাসে তা চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিতে পারবে। একবার এমএনপি সুবিধা নেওয়ার পর গ্রাহক আবার নতুন কোনো অপারেটরে যেতে চাইলে তাকে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি বা এমএনপি পরিষেবা চালু রয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানা যায়, নিলাম প্রক্রিয়ায় আবেদন ফি এক লাখ টাকা, বিড আর্নেস্ট মানি ১০ লাখ টাকা, নিলামের ভিত্তি মূল্য এক কোটি টাকা, বার্ষিক লাইসেন্স ফি ২০ লাখ টাকা, রাজস্ব ভাগাভাগি বাবদ প্রথম বছর শূন্য শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ব্যাংক গ্যারান্টি বাবদ এক কোটি টাকা দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে এই লাইসেন্স দেওয়া হবে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এর মেয়াদ হবে ১৫ বছর। পরে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন করা যাবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে বলেও শাহজাহান মাহমুদ জানান। যে প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাবে তার ১৮০ দিনের মধ্যে দেশের মোট মোবাইল ব্যবহারকারীর এক শতাংশকে, এক বছরের মধ্যে পাঁচ শতাংশকে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে দশ শতাংশকে ‘পোর্টিং ও রাউটিং’ সেবা দিতে হবে। ১৮০ দিনের মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে জমা রাখা ব্যাংক গ্যারান্টি থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন কেটে নেবে। নির্ধারিত বাকি সময়ের মধ্যে রোলআউট টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হলে অবশিষ্ট ব্যাংক গ্যারান্টি কেটে নিয়ে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। লাইসেন্স দেওয়া হবে নিলামের পরবর্তী বিডারকে।
এমএনপি লাইসেন্সের নীতিমালা অনুসারে বাংলাদেশে বসবাসকারী যেকোনো ব্যক্তি/প্রোপ্রাইটরশিপ/পার্টনারশিপ কোম্পানি এবং আরজেএসসি’র (যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়) অন্তর্ভুক্ত যেকোনো কোম্পানি এ লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশি, প্রবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যৌথভাবে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মূলধনের অনুপাত ৫১ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের কোনো মোবাইল ফোন অপারেটর অথবা তাদের মালিকানাসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে না। এ ছাড়া বিটিআরসির লাইসেন্সধারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে প্রাপ্য বকেয়া আছে তারাও আবেদন করতে পারবে না। আর এ লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কাজে তিন বছরের এবং কমপক্ষে এক কোটি গ্রাহককে সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অভিজ্ঞতার এ শর্তের কারণেই সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া ছাড়া কোনো বাংলাদেশির পক্ষে এ লাইসেন্স পাওয়া সম্ভব নয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমএনপি নিলাম হঠাৎ স্থগিত

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ