পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ চারজন গত ৮ জুলাই থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। ত্ব-হার সন্ধান দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন তার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। তিনি বলেন, আমার স্বামী নিরীহ মানুষ। ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। নয়তো আমাকে তার কাছে নিয়ে যান।
গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ত্ব-হার স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। এছাড়া স্বামীসহ অন্যদের সন্ধান পেতে পুলিশের আইজি ও র্যাবের ডিজির কাছেও আবেদন করেছেন তিনি। তবে গতকাল পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পায়নি পরিবার। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও কোন তথ্য নেই ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানসহ চারজন সম্পর্কে।
সংবাদ সম্মেলনে সাবিকুন্নাহার বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে তিনি কোনো অপরাধে যুক্ত থাকেন তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে তার বিচার হোক। আমি কিছু বলব না। তিনি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। আমি এবং কিছু যুবক ছাড়া তার পাশে কেউ নেই। চারজন মানুষকে গাড়িসহ নিয়ে যাওয়া কোনো প্রাইভেট (ব্যক্তিগত) লোকের কাজ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পথে বিকেল ৪টার দিকে তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। দুটি মোটরসাইকেল তাদের অনুসরণ করছিল। তিনি (ত্ব-হা) বলছিলেন, দোয়া করো যেন কিছু না হয়। এর ২০ থেকে ২৪ মিনিট পর ফোন করে জানান বাইকগুলো চলে গেছে।
খুতবা ও বক্তব্যে জিও পলিটিক্স নিয়ে কথা বলতেন আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান। ফিলিস্তিন-ইসরায়েস ইস্যুতে কথা বলতেন তিনি। তার স্ত্রী বলেন, আমার এখন অনেক কিছু মনে হয়। তিনি জিও পলিটিক্স নিয়ে কথা বলতেন। ইন্টারন্যাশনাল গোয়েন্দাদের বিষয় হতে পারে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে কী কথা বলতেন? এমন প্রশ্নে সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘সব মুসলিম আল-আকসা মসজিদকে ভালোবাসে। ঘটনার দিন বিকেল ৩টার দিকে বগুড়ার একটি প্রোগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন ত্ব-হা। তার দুই সহযোগী ও প্রাইভেটকার চালক আমির। উদ্দেশ্য ছিল প্রোগ্রাম শেষে তিনি ঢাকায় আমার কাছে আসবেন। কিন্তু বিকেল ৪টার দিকে আমি তাকে ফোন করে বলি রাতে বাসায় ফিরে কি খাবা? কি রান্না করবো?
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি রেগে গিয়ে বলেন, আমাদের প্রাইভেটকারের পেছনে দুটি বাইক ফলো করছে। আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন ঠিকভাবে বাসায় পৌঁছাতে পারি। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি নিজেই আমাকে ফোন করে বলেন, বাইক দুটি আর দেখা যাচ্ছে না। তুমি রান্না করো, আমরা চারজন বাসায় এসে ভাত খাবো।
সাবিকুন্নাহার বলেন, তার সঙ্গে যখনই কথা হয় তখনই তিনি লোকেশনসহ আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে স্ক্রিনশট পাঠান। ওইদিনও একাধিকবার আমাকে লোকেশন পাঠিয়েছেন। রাত ২টার দিকে সর্বশেষ আমি তাকে ফোন করি। কিন্তু তিনি ঘুমানোর কারণে আমার ফোন রিসিভ করতে পারেননি। ঘুম ভাঙার পরে রাত ২টা ৩৭ মিনিটে একটা ম্যাপ শেয়ার করেন। তখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম।
তিনি বলেন, এরপর তার মেসেজ দেখে ঘুম থেকে উঠে খাবারের ব্যবস্থা করতে যাই। তার ম্যাপে দেখাচ্ছিল বাসায় পৌঁছাতে ১৮ মিনিট লাগবে। এরপর অপেক্ষা করতে করতে রাত ৩টার দিকে তার নম্বরে ফোন করি। কিন্তু তখন থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাই। এরপর প্রাইভেটকার চালক আমিরের নম্বরে ফোন করি। তার মোবাইলও বন্ধ পাই। তখন আমার সন্দেহ হয়। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে ভোর ৫টা বেজে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে ত্ব-হার স্ত্রী বলেন, বগুড়ায় যে প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়নি। তিনি রাস্তায় থাকার কারণে বিস্তারিত কথা বলার সুযোগ ছিল না। ভেবেছিলাম বাসায় আসার পর তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞেস করবো। আমার ওপর রেগে যাওয়ার কারণে জিজ্ঞাসা করিনি। শুধু এতটুকুই জানি বগুড়ায় তার প্রোগ্রামটি হয়নি।
এর আগে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি? সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জ্বি না। এর আগে কখনো এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি কিংবা কখনো বলেনওনি। তবে তিনি মজসিদে খুতবা বা লেকচারের কারণে মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলার সম্মুখীন হতেন বলে আমাকে বলতেন। এ বিষয়গুলো তিনি তার লেকচারেও তুলে ধরেছেন।
বগুড়ার প্রোগ্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আয়োজকদের কোনো ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। সংবাদ সম্মেলনেও আমি অভ্যস্ত নই, এর আগে কখনো এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে আসিনি।
কারো প্রতি সন্দেহ করছেন কি? জবাবে তিনি বলেন, কারো প্রতি কোনো ধরনের অভিযোগ নেই। অনেক সময় অনেকে তার প্রতি বিরূপ মন্তব্য করতেন। অনেক রকমের কথা বলতেন। এজন্য কোনো প্রেসার এলো কি-না তা বলতে পারছি না। আবার কখনো মনে হয় তিনি জিও পলিটিক্যালের কথা বলতেন, পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে আলোচনা করতেন। আন্তর্জাতিক কোনো গোয়েন্দা সংস্থার কাজ কি-না তাও বুঝতে পারছি না।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনির বিষয় নিয়ে ত্ব-হার আলোচনার বিষয় সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই মুসলিম। আর মুসলিম বলতেই সবাই আল-আকসা মসজিদকে ভালোবাসি। আল-আকসার ব্যাপারে যাদেরই রক্তচক্ষু থাকবে তাদের কারণে আমাদের দিল থেকে একটা যন্ত্রণা থাকবেই।
পড়াশোনার বিষয়ে ত্ব-হার স্ত্রী বলেন, তিনি ফিলোসফিতে মাস্টার্স করেছেন এবং সালাফি মাদরাসা থেকে আরবিতে অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। কিন্তু সানাফি, হাম্বলি, কওমি, দেহবন্দি কিংবা আহালে হাদিসের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
তিনি সংকীর্ণ মনের ছিলেন না। হকটা সব জায়গা থেকে গ্রহণ করতেন এবং প্রচুর পড়াশোনা করতেন। বিশেষ করে ত্বকী উস্মানীর বইগুলো বেশি পড়তেন। এ ছাড়াও বিদেশি লেখকদের বইও তিনি পড়তেন। তার ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল জেনারেল।
ত্ব-হার পরিবারকে আইনি সহায়তা দেয়া ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসাইন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটি গাড়ি ও চারজন মানুষকে এক সঙ্গে এভাবে গায়েব করে দেয়া কোনো প্রাইভেট সংঘের কাজ নয়। এই ঘটনায় রাষ্ট্র বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেয় তাহলে এটা উদ্ধার করা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ খুবই এফিশিয়েন্ট, তারা বিদ্যুৎ গতিতে ব্যবস্থা নিতে পারে। যেটা পরীমণির ব্যাপারে নিয়েছে। পরীমণি নিজেও স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। এ ঘটনায় যদি রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন মহলে থেকে নির্দেশনা যায়, তবে এটি মাত্র ঘণ্টার ব্যাপার বলে আমি মনে করি।
এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আবু ত্ব-হা সন্ধানে মানববন্ধন করে ‘আমরা আবু ত্ব-হার ভাই’ ব্যানারে। সেখানে সাধারণ ছাত্ররা বলেন, এটা কোনো দলের পক্ষ থেকে না। আমরা সাধারণ মুসলিম শিক্ষার্থীরা এখানে একত্র হয়েছি। আমাদের ভাই আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান প্রায় ৬ দিন ধরে নিখোঁজ। আমরা তার সন্ধান চাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।