পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে দেশের মানুষের যখন ত্রাহি অবস্থা; টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা; ১৫ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোটি কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত; তখন টক অব দ্য কান্ট্রি নায়িকা পরীমনি। ঢাকাই সিনেমার এই দ্বিতীয় গ্রেডের নায়িকা পরীমনি কয়টা সিনেমায় অভিনয় করে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করেছেন. সে তথ্য এখানে অপ্রাসঙ্গিক।
কিন্তু রাত ১২টার পর ঢাকার এক ক্লাবে গিয়ে মদ্যপান, রাত সাড়ে তিনটায় মদ্যপ অবস্থায় ‘ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা’ মামলা করতে গেলে থানা থেকে ‘আপনি অসুস্থ, চিকিৎসা করে সকালে আসেন’ বলে পরামর্শ দেয়া, ঘটনার পর ৫ দিন নীরব থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসিখুশি ছবির পোষ্ট দেয়া, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের বক্তব্য ‘আমাদের কাছে ঘটনা গোপন করেছে’ এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের বক্তব্য ‘পরীমনি প্রায়ই রাতবিরাতে ঘর থেকে বের হন’সহ নানা বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলছে। এমনকি বিষয়টি সংসদে পর্যন্ত গড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফোকাস হচ্ছে কিছু ব্যক্তি, এনজিও নেত্রী, সাংস্কৃতিকর্মী, টিভি উপস্থাপিকা, নারী নেত্রীর ‘পরীমনির ঘটনা’ প্রতিবাদী হয়ে ওঠার দৃশ্য।
সিনেমা ও নাটকের নায়িকা, অভিনেত্রী, সাংস্কৃতির কর্মী, এনজিওকর্মীরা ‘পরীমনি নারী’ এই জন্যই তাকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। তাদের বক্তব্য স্বাধীন দেশে মেয়েরা গভীর রাতে বের হতে পারবে না কেন? মেয়েদের কেন এভাবে হেনস্তার শিকার হতে হবে? নারীদের দমিয়ে রাখা, সামাজিকভাবে মেয়েদের ‘হেয়প্রতিপন্ন করা’ পুরুষশাসিত সমাজের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ। তারা পরীমনি নারী হওয়ায় এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করছেন। প্রশ্ন তুলেছেনÑ ‘দেশে নারীদের এভাবে আর কত দমিয়ে রাখার চেষ্টা হবে’।
পরীমনি নারী তাই তার পক্ষে এরা দাঁড়িয়েছেন এটা সমর্থনযোগ্য। কিন্তু অন্যান্য নারীদের হেনস্তা করা হলে কি এই মুখচেনা ব্যক্তিত্বরা প্রতিবাদ করেন? চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির সঙ্গে আরো তিনজন নারী লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪) গ্রেফতার হয়েছেন। আদালত তাদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
ওই মেয়েরা কি নারী নয়? এই তিন নারীর গ্রেফতার, ‘রক্ষিতা’ হিসেবে প্রচার এবং অপরাধী প্রমাণের আগেই ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ করা কি নারী নেত্রী ও সংস্কৃতিসেবীদের কাছে নারীর প্রতি অবমাননা মনে হয় না? তাহলে তাদের ব্যাপারে নীরব কেন বিবেকবান সংস্কৃতিকর্মীরা? নাকি তাদের পরীমনির মতো পরিচিতি নেই, সে জন্যই তাদের মানসম্মান রক্ষার প্রয়োজন নেই? তাহলে কোন নারীদের জন্য এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, নারী নেত্রী, সাংস্কৃতিকর্মীদের মায়াকান্না?
প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। কাজের জন্য সউদী আরবে গিয়ে ‘নির্যাতন ও ধর্ষণের’ শিকার হয়ে হাজার হাজার নারী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। নির্যাতনের শিকার নারীরা নিজেদের দুর্দশার করুণ বর্ণনা মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন। তাদের মুখে ভয়াবহ বর্ণনা শুনে অনেকেই চোখের পানি ফেলেছেন। আবার কয়েকদিন আগে টিকটিক হৃদয়ের ভারতে নারী পাচারের ঘটনা প্রকাশ পায়। গ্রেফতারকৃতরা জানান, তারা টিকটকের আড়ালে শত শত নারীকে সীমান্ত দিয়ে পাচার করে ভারতের পতিতা পল্লিতে বিক্রি করে দেন।
অসহায় এই নারীরা কি দেশের নাগরিক নয়? তাদের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নেই? নারী নেত্রী ও সাংস্কৃতির কর্মীরা ওই সব শুনে নীরব থাকেন কেন? নাকি অসহায় ওই সব নারী বেলেল্লাপনার সাঁরথি নন, নারী হিসেবে তাদের মর্যাদা নেই বলে মনে করেন নারী নেত্রীরা?
রাজধানীর ক্লাব ও বারে মধ্যরাতে কি হয় তা সবার জানা। পরীমনি রাত ১২টার পর ক্লাবে গেছেন সেখানে তার সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু যে তিন নারী এখন রিমান্ডে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে দিনে এবং উত্তরার একটি বাসা থেকে। তারা অপরাধী হলে তাদের বিচার হবে প্রচলিত আইনে।
কিন্তু এই তিন নারীর গ্রেফতারের পর তাদের ‘রক্ষিতা’ প্রচার করা এবং ছবি প্রকাশের প্রতিবাদ কি নারীর অধিকার আদায়ের সোচ্চার নেত্রী ও সংস্কৃতিসেবীরা করেছেন? গ্রেফতার হওয়া এই নারীরা তো কারো বোন, কারো মেয়ে। এদের সামাজিক মর্যাদা কি নেই? নাকি অন্যের সঙ্গে লীফ টুগেদার করা পরীমনিদের কেবল নারী হিসেবে সামাজিক মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব এই নারী নেত্রীদের?
আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া লিপি, সুমি, নাজমা শুধু নয়; প্রায়ই বিভিন্ন ঘটনায় নারীদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর পর বিচারের আগেই তাদের ছবি প্রকাশ করা হয়। বিচারের আগে ওই সব নারীর ছবি প্রকাশের বিরুদ্ধে কখনো কি নারী নেত্রী, সংস্কৃতির কর্মীরা প্রতিবাদ করেছেন? ওই নারীরা যদি আদালতে দোষী প্রমাণিত না হন, তাহলে বিনাদোষে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা নষ্ট হয়ে যাবে।
সমাজে বেঁচে থাকতে হবে গিনিপিগের মতোই। নারীর অধিকার আদায় এবং নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার নারী নেত্রী ও সাংস্কৃতি অঙ্গনের নায়িকা অভিনেত্রীরা কি বলেন? আপনারা নারীর অধিকার বলতে শুধু কি সিনেমা নাটকের অভিনেত্রী, মহিলা সংস্কৃতিকর্মী, এনজিও’র নারী কর্মীদের অধিকার বোঝান। নাকি সমাজের ধনীগরিব সব শ্রেণির নারীর অধিকার বোঝান?
পরীমনির ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে। আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়। পরীমনি ইস্যুতে একটি টিভি চ্যানেলে টকশোর আয়োজন করা হয়। মিথিলা ফারজানা নামের এক উপস্থাপিকার অনুষ্ঠানে একজন সাংবাদিক ছাড়াও অতিথি ছিলেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, পরিচালন সমিতির সভাপতি সোহনুর রহমান সোহান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সিরাজ উদ্দিন। মিশা বললেন, ‘পরীমনি আমাদের কাছে প্রকৃত ঘটনা লুকিয়েছেন। সমিতিকে পরীমনি জানান, তিনি একটা সমস্যায় রয়েছেন; আইজিপির সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করতে হবে’।
সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘পরীমনি প্রায় রাতে বের হতেন। তার সঙ্গে প্রায় এমন ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনা সিরিয়াস হয়েছে। পরীমনি আমাদের জানায়নি; নিজেই সংবাদ সম্মেলন করেছে’। সোহানের বক্তব্যের সত্যতা মেলে চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে গুলশান থানায় গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবের জিডির খবরে। জিডিতে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব অভিযোগ করেছে গত ৮ জুন পরীমণি ক্লাবে ভাঙচুর চালিয়েছেন।
টিভির আলোচনায় অংশ নেয়া ওই সাংবাদিক প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ঘটনা ঘটে ৯ জুন। এরপর কয়েকদিন পরীমনি ফেসবুকে হাসিখুশি ছবি পোস্ট করেছেন। পোষ্টে বিভিন্ন কথা বলেছেন, হাসিঠাট্টা করেছেন। ১৩ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করে ১৪ তারিখে মামলা করলেন। এই কয়দিন অপেক্ষার রহস্য কি’? এ তিন আলোচকের কারো বক্তব্যই পছন্দ হয়নি উপস্থাপিকার।
তিনি নিজের আয়োজিত টকশোতে একই একশ’ হয়ে যা বলেন, তা যেন পরীমনির ওই ঘটনা গোটা নারী সমাজের জন্য কলঙ্ক। পরীমনি মেয়ে হিসেবে রাত ১২টা-১টায় ক্লাবে যাবেন- তাতে তার কি? কেন তাকে হেনস্তা করা হবে। উপস্থাপিকাকে খুশি করতে অপর অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘রাত ১২টার পর দেশের নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না, এটা মেনে নেয়া যায় না। এটা কেমন সমাজ? নারীদের এভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে’। তথাকথিত ওই শিক্ষাবিদকে প্রশ্ন করি- আপনি কি নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে রাত ১২টার পর বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।