পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুই ঈদে ঝরে গেছে ৪০১ প্রাণ : মহাসড়কে মৃত্যু থামছে না
নূরুল ইসলাম : ঈদ এলেই মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ে। এবার ঈদুল আযহার আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২১১ জনের। এর আগে ঈদুল ফিতরে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৯০। সব মিলে সড়কে দুই ঈদে প্রাণ গেছে ৪০১ জনের। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে প্রায় ৫০ হাজার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাড়ে ৪২ হাজার মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনারোধে সরকারকেই সর্বপ্রথম কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর পাশাপাশি রাস্তা সংস্কার, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, আইন পরিবর্তন ও মানুষের বিবেকবোধকেও জাগ্রত করতে হবে। এদিকে দুর্ঘটনারোধে সামনের দিনগুলোতে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিবহন শ্রমিকদের মতে, ঈদে অবিরাম কাজ করার কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। এজন্য তারা দূরপাল্লার বাস চালকদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সময়সীমা নির্ধারণে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে, দেশে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর গড়ে ছয় হাজার মানুষ নিহত হয়। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে দুই সহ¯্রাধিক মানুষ। এ হিসাবে সারাদেশের মহাসড়কে বছরজুড়েই দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে, ঘটছে প্রাণহানী। ঈদ এলে দুর্ঘটনার সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়। এই ঈদকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে ছুটে যায় গ্রামের বাড়িতে। ঘরমুখো বেশিরভাগ মানুষই যায় সড়ক পথে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে সেই যাত্রা শুরু হয়। ঈদের ছুটির পর আবার সেই একই কায়দায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করে মানুষ। ঈদের আগে ও পরে এই ছুটে চলার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীদের চাপ থাকে বলে এ সময়কার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেশি। বিভিন্ন পরিসংখ্যান মতে, ঈদুল আযহার আগে-পরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২১১ জন। এর মধ্যে ঈদের পরে প্রাণহানি বেশি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মহাসড়কে ‘ভয়ঙ্কর যান’ হিসেবে চিহ্নিত নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানসহ ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং চালকদের অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক চাপে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করতে পারছে না পুলিশ। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হকের মতে, দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা হয় মহাসড়কে এবং মাত্র ৪ শতাংশ স্থানে। তার মতে, সরকার চাইলে এর সুনির্দিষ্ট সমাধান করতে পারে।
ঈদকে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনার বিষয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা বিভিন্ন দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চালকদের বিরামহীন পরিশ্রমকে দায়ী করেছেন। তাদের দাবি, একজন চালককে লং রুটে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর পরপরই কোনো বিশ্রাম ছাড়া ফিরতি পথের গাড়ি চালাতে বাধ্য করা হয়। আর এতেই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসেন অনেক চালক। চালকদের এমন নির্ঘুম গাড়ি চালানোর বিষয়টিকে মহাসড়কে দুর্ঘটনার বিশেষ করে ঈদের মৌসুমে ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর অন্যতম কারণ হিসেবে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এর সাথে আরও অনেক কারণই উল্লেখ করেছেন তারা। সেই কারণগুলো হলো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং করার প্রবণতা, ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, আনফিট গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের বেহালদশা, গাড়ি চালোনার সময় চালকের মোবাইল ফোনে কথা বলা, খেয়ালিপনা, ফাঁকা রাস্তা পেয়ে প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালানো, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, ফুটপাত দখলে থাকা, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জেব্রা ক্রসিং না থাকা ও তা না মানা, নির্ধারিত গতিসীমা অমান্য করা এবং ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ঈদের সময়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা ইত্যাদি। চালকদের দীর্ঘক্ষণ না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর বিষয়টিকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে কেয়া পরিবহনের এক চালক বলেন, ঈদে যাত্রীদের চাপ থাকায় বারবার আসা যাওয়া করতে হয়। অনেকক্ষণ বিশ্রাম ছাড়া গাড়ি চালালে হাত-পা ধরে আসে, চোখে ঘুম থাকে। সে ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ঘটার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ঢাকা-দিনাজপুর রুটে চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের এক গাড়ি চালক বলেন, একবার একসাথে তিন রাত না জেগে গাড়ি চালানোর সময় তিনি নিজেও ঘুমিয়ে পড়ায় গাড়িটি মহাসড়কের পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খায়। সেই দুর্ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। ওই চালক দাবি করেন, সেই থেকে তিনি আর ডাবল ট্রিপে গাড়ি চালান না।
এ প্রসঙ্গে বুয়েট অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, বিরামহীনভাবে চালাতে মালিকের যে তাগাদা, পুলিশের যে অবহেলা সবকিছু মিলিয়েই মানুষ কিন্তু তার স্বাভাবিক যে বিহেভিয়ার সেটাই করছে। দুজন ড্রাইভার থাকবে, চার ঘণ্টা চালানোর পর কিছু বিরতি দিয়ে আবার দুই ঘণ্টা চালাবে। সড়কেরও মাঝে মাঝে চিকিৎসা দরকার হয় মন্তব্য করে এই অধ্যাপক বলেন, কখনো কনজেশন (গাড়ির চাপ) হয়, ক্রনিক কনজেশন হয়, কখনো অ্যাকসিডেন্ট হয়, ব্ল্যাক স্পট হয়, কখনো পলিউশন (দূষণ) হয়, তাহলে ট্রিটমেন্ট কে করবে? বিজ্ঞান বলে দিচ্ছে এর যে ডাক্তার সে হলো ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার। সে করবে। কিন্তু আমাদের এখানে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারের পোস্টই নেই।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সড়ক দুর্ঘটনারোধকল্পে মহাসড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ ১৪৪টি স্পট চিহ্নিত করে। এসব স্পট সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্পের অধীনে ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সারাদেশে ১২৬টি দুর্ঘটনাপ্রবণ বাঁক চিহ্নিত করার পর নতুন করে ১৮টি স্পট ওই প্রকল্পে যুক্ত করা হয়। একই প্রকল্পের আওতায় পথচারীদের ক্রসিংয়ের উন্নয়ন, মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করতে ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, বাঁক সরলীকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান সংস্কার, সিগন্যালিং, রোড মার্কিং স্থাপন, সাইন সিগন্যাল, দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা হবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প শুরু করার পরেও শুধু তিন চাকার ধীর গতির যানবাহন ও চালকদের অদক্ষতার কারণে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না।
মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে আইন এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ঈদের তিন দিন আগে এবং ঈদের তিন দিন পরে ট্রাক চলবে না, কিন্তু এবার কীভাবে চলল? কেন এই নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলো না? একটা ঈদের মধ্যে, আনন্দের মধ্যে এত মানুষ মারা যাবে, একটা যুদ্ধেও এত মানুষ মারা যায় না।
গবেষণায় দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটে মহাসড়কেই, এসবের ৯৩ ভাগই ট্রাক, বাস ও মিনিবাসের। দুর্ঘটনা বাড়ছে লেভেল ক্রসিংয়েও। সারা দেশের প্রায় আড়াই হাজার লেভেল ক্রসিংয়ের ৮৫ ভাগই অরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
২০১৪ সালে সারাদেশে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন, করিমন, ভটভটি চলাচলের উপর উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত বছরের ২২ জুলাই মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় মহাসড়কে সবধরণের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করার ঘোষণা দেন। এরপর ২৭ আগস্ট নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হয়। কিন্তু তারপরেও রাজনৈতিক কারণে মহাসড়কে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন, করিমন, ভটভটি, চাঁন্দের গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশাসহ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করা যায়নি। রুট পারমিট ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন এসব যানবাহন থেকে সরকার কোনো প্রকার রাজস্বও পায় না। মহাসড়ক ছেড়ে এসব তিন চাকার যানবাহন এখন রাজধানীর অলিগলিতেও অবাধে চলছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।