Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবারো গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন হলে মানবে না বিএনপি-মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রস্তাবিত সার্চ কমিটিকে ‘নাটক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে আবারো গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন করা হলে তা মেনে নেবে না বিএনপি। আলোচনা সাপেক্ষে সকল রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছে দলটি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বিএনপির অবস্থানের কথা জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, অবশ্যই নির্বাচন চাই। অবশ্যই একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ও স্বাধীন নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা সেই নির্বাচন চাই।
তিনি বলেন, সেই গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন আপনার সরকারকে দিয়ে আপনি নির্বাচন পরিচালনা করবেন, আপনার মতো করে সব কিছু সাজিয়ে নেবেন, নির্বাচন করবেন, সেই নির্বাচন আমরা বিশ্বাস করিনা, এদেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। সার্চ কমিটি করেন, আর যাই করেন, জনমতের বাইরে গিয়ে কোনো কমিটি এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের কাছে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আগের বারের মতো ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে নতুন ইসি করার কথা বলার পর বিএনপির পক্ষ থেকে এই বক্তব্য আসলো।
সংবিধানের আলোকে প্রেসিডেন্ট সবসময় সিইসি ও ইসি নিয়োগ দিলেও ২০১২ সালে সর্বশেষ কমিশন হয় সার্চ কমিটির মাধ্যমে। সে সময় প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নামের সুপারিশ তৈরি করতে চার সদস্যের সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। অবশ্য ওই কমিটি নিয়ে আপত্তি তোলে বিএনপি
রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে খালেদা জিয়ার নবম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে মহানগর বিএনপি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেফতার হওয়া বেগম খালেদা জিয়া ২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তি পান। এরপর থেকে এই দিবসটিকে কারামুক্তি দিবস হিসেবে বিএনপি পালন করে আসছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, সরকার বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে ধ্বংস করার জন্য কাজ করছে। আওয়ামী লীগের লোকজনকে নিয়ে দেশের সকল জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে ১০ জনের সন্ত্রাস দমন কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিগুলো এখন তালিকা তৈরি করছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বলছে, এতো টাকা দাও, তাহলে তোমার নামে জঙ্গির মামলা দেয়া হবে। আজকে এভাবে তালিকা করে নতুন করে তারা নির্যাতন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই বিরোধী দল, বিএনপিকে নির্মূল করতে হবে। ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা তারা ভিন্ন মোড়কে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়।
গত রমজানের ঈদের আগে জঙ্গিবাদ দমনে ‘সাঁড়াশি অভিযান-এর নামে বিরোধী দলের ১৬ হাজার নেতা-কর্মী গ্রেফতারের কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বর্তমানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে বিএনপি চেয়ারপার্সনের একাগ্রতার বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২৯টা মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। যতই মামলা দেন, যতই জেলে দেন, দেশের মানুষ কখনই আপনাদের দমননীতিকে মেনে নেবে না। আসুন আমরা এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হই। দেশনেত্রীর নেতৃত্বে ইনশাল্লাহ আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে সফল হবোই।
নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের প্রসঙ্গ টেনে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন কমিশন গঠনে এখন সার্চ কমিটি গঠনের মূলা ঝুলিয়েছে। সার্চ কমিটি গঠন করবে কে? প্রেসিডেন্ট, সেটা অনুমোদন দেবেন কে ? প্রধানমন্ত্রী। তাহলে সেই সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ হবে, একজন ব্যক্তিত্বশালী লোক নির্বাচন কমিশনে বসাইবেন- এটা আমরা বুঝি কী করে?
আমি বলব, এই সার্চ কমিটির নাটক না করে, যেহেতু সংবিধানের কোনো সুনির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা নাই, কোন শ্রেণী-পেশা থেকে সার্চ কমিটির সদস্য হয়। সেই কারণে বলব, সার্চ কমিটির সদস্য হোক- ইতিপূর্বে যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না শুধু, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো বিশেষ করে এই কয়টি দল। তার সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও। আলোচনা সাপেক্ষে সকল রাজনৈতিক দল থেকে সার্চ কমিটি গঠন করা হউক।
তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দল মিলে পাঁচ জন নির্বাচন কমিশনের সদস্য নির্বাচন করা হউক এবং প্রেসিডেন্ট তাতে স্বাক্ষর করবেন। সংকট উত্তরণে এটা একটা পথ হতে পারে। আর তা নাহলে এই সার্চ কমিটি দিয়ে, আরেকটা রকীবউদ্দিন মার্কা নির্বাচন কমিশন দিয়ে দেশের জনগণের কথামতো নির্বাচন হবে না, সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির বিষয়ে বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এদেশের মানুষের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নাই। তারপরে আজকে আবার সেই সার্চ কমিটির নাটক শুরু হয়েছে।
সার্চ কমিটির নাটকের ফলাফল কয়েক বছরের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বুঝেছে। আবার সেই কমিটি দেশের মানুষকে প্রতারণা করার জন্য। এই সার্চ কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগ, পরিচালনায় আওয়ামী লীগ, অভিনয়ে হচ্ছে আওয়ামী লীগ, এই নাটকের কোনো দর্শক নাই। বাংলাদেশের মানুষ এই নাটক আর গ্রহণ করবে না। এটা জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। এ ব্যাপারে জনগণকে সজাগ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অঙ্গসংগঠনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরফত আলী সপু, লিটন মাহমুদ, মহিলা দলের নুরে আরা সাফা, ফরিদা ইয়াসমীন, যুব দলের আব্দুস সালাম আজাদ, এসএম জাহাঙ্গীর, রফিকুল আলম মজনু, মহানগর বিএনপির কাজী আবুল বাশার, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, ছাত্র দলের রাজীব আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবারো গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন হলে মানবে না বিএনপি-মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ