Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবৈধ কল টার্মিনেশনে জড়িত চার প্রতিষ্ঠান

প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৮ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

স্বীকার করলেও শো-কজ নোটিশ দিয়ে কাজ শেষ করেছে বিটিআরসি
ফারুক হোসাইন : অবৈধ কল টার্মিনেশনে জড়িত চার আইপিটিএসপি (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার) প্রতিষ্ঠান। টেলিযোগাযোগ খাতের এই প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছে ৯৩ কোটি টাকা। ফাঁকি দিয়েছে সরকারি রাজস্ব এবং বঞ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী অংশীদারদেরও।
অবৈধ এই ব্যবসার কথা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে স্বীকার করলেও কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে কাজ শেষ করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। সর্বশেষ কমিশন সভায়ও অবৈধ কল টার্মিনেশনের ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির ব্যাপারে সুস্পষ্ট প্রস্তাব আনতে লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অবৈধ কল টার্মিনেশনে জড়িত চার আইপিটিএসপি প্রতিষ্ঠান হলোÑএইচএন টেলিকম, জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেস, মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া এবং প্রীতি ইন্টারন্যাশনাল। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেবল অবৈধ কল টার্মিনেশনই নয়, একইসাথে রাজস্ব ফাঁকি, অবৈধ টেলিযোগাযোগ ব্যবসা, বার্ষিক লাইসেন্স ফি, রেভিনিউ শেয়ারিং পরিশোধ না করারও অভিযোগ রয়েছে। বিটিআরসি’র কাছেই তাদের রাজস্ব বকেয়া রয়েছে ৫৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়ে গেলেও এখনো তা নবায়ন করেনি। অনিয়ম ও অবৈধভাবেই রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনি সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্সপ্রাপ্ত চার প্রতিষ্ঠান এইচএন টেলিকম, জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেস, মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া এবং প্রীতি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে অবৈধ কল টার্মিনেশনের অভিযোগ অনেক পুরনো। তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দেয়া হয়। কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে এবং কমিশনের দুর্বলতার সুযোগে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। গত ১৪ আগস্টের হিসেব অনুযায়ী এই চার প্রতিষ্ঠান ৪০ কোটি মিনিট অবৈধ কল টার্মিনেশন করেছে। এর মধ্যে প্রীতি ইন্টারন্যাশনাল প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মিনিট, এইচএন টেলিকম ১৩ কোটি ৩০ লাখ মিনিট, জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেস প্রায় ১১ কোটি ৩২ লাখ মিনিট এবং মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া প্রায় ৩ কোটি মিনিট অবৈধ কল টার্মিনেশন করেছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো ৯৩ কোটি ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, যার মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ঢুকেছে প্রীতি ইন্টারন্যাশনালের পকেটে, ৩২ কোটি ২২ লাখ এইচএন টেলিকমের কাছে, জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেস ২৬ কোটি ১৩ লাখ এবং মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়ার হতে গেছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। বিটিআরসি বলছে, হাতিয়ে নেয়া এই ৯৩ কোটি টাকার মধ্যে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে (সরকারের ক্ষতি হয়েছে) ৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, আইজিডব্লিউ (ইন্টারনেট গেইটওয়ে) অপারেটরদের ক্ষতির পরিমাণ ১৮ কোটি ৯৫ লাখ, আইসিএক্স (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ) অপারেটরের ক্ষতি ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং এএনএস (মোবাইল অপারেটর) অপারেটরের ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এছাড়া এই চার প্রতিষ্ঠান সরকারের রাজস্ব পরিশোধেও অনীহা প্রকাশ করছে বলে কমিশন সূত্রে জানা যায়। গত আগস্ট পর্যন্ত তাদের কাছে রাজস্ব বকেয়া রয়েছে ৫৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। যদিও গতবছর ২৮ ডিসেম্বর কমিশনের ১৯২তম সভায় এইচএন টেলিকম, জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেস, মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া এবং প্রীতি ইন্টারন্যাশনালের অবৈধ কল টার্মিনেশন ও লাইসেন্সের শর্তাবলী লঙ্ঘনের দায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ ও লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কমিশনের ওই সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চার প্রতিষ্ঠানেরই কার্যক্রম বন্ধ, লাইসেন্স বাতিল, ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং প্রশাসনিক জরিমানাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এইচএন টেলিকম, ও জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেসকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি, মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়াকে ২৩ ফেব্রুয়ারি এবং প্রীতি ইন্টারন্যাশনালকে ১৬ ফেব্রুয়ারি লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগ থেকে পৃথক পৃথক প্রশাসনিক কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করা হয়। এইচএন টেলিকমের ব্যবস্থাপক মোঃ মামুনুর রশিদ ওই নোটিশের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অবৈধ টেলিযোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। তবে তিনি অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দূর্বল মনিটরিং এবং গ্রাহকদের দায়ি করেন। জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেসের মালিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে জানান তার অনুপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করে নির্বাহী (সিও) কর্মকর্তা মো. সাউদ আল প্রিন্স। তার সময়ে কোনো ধরনের অবৈধ কার্যক্রম সংঘটিত হয়নি তবে গ্রাহক পর্যায়ে যদি কোন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে তার জন্য কমিশনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১০ থেকে ১৪ পর্যন্ত তারা কোনো কল টার্মিনেশন করেনি। তবে ২০১৫ সাল থেকে তাদের কলের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানান। বেড়ে যাওয়া কলের বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য কমিশনকে জানাতে পারেনি। আর অপর আইপিটিএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান প্রীতি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে অবৈধ কল টার্মিনেশনের বিষয়ে নোটিশ প্রদান করলেও তারা কোনো জবাব প্রদান করেনি। এরপরও কমিশনের সর্বশেষ সভায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়নি বিটিআরসি।
তবে বকেয়া পাওনা টাকা পরিশোধ এবং ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ২১ দিনের সময় দিয়ে এইচএন টেলিকম, জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিসেস, মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া এবং প্রীতি ইন্টারন্যাশনালকে চিঠি প্রদান করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ এবং ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তী কমিশন সভায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়। বিটিআরসি’র লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার কমিশন সভায় জানান, আইপিটিএসপি লাইসেন্সএর শর্তানুযায়ী লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রতিবছর বার্ষিক লাইসেন্সফি এবং প্রতি কোয়ার্টার শেষ হওয়ার প্রথম ১০ দিনের মধ্যে অডিটেড গ্রেস রেভিনিউ শেয়ারিং এর উপর ২ শতাংশ অর্থ কমিশনে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে প্রীতি ইন্টারন্যাশনালের কাছে ১৫ লাখ টাকা, মিডিয়া অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া ১২ লাখ ৯০ হাজার, জেএফ অপটিক্যাল সার্ভিস ২০ লাখ এবং এইচএন টেলিকমের কাছে বকেয়া পাওনা ১০ লাখ টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অবৈধ কল টার্মিনেশনে জড়িত চার প্রতিষ্ঠান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ