পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : তার মামলায় সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় যে, তার সহযোগিতা মার্কিন সরকারকে কতটা সাহায্য করেছিল। তবে তার আইনজীবী রুবেন অলিভার মতে, ভেলোজা একটি পূর্ণাঙ্গ স্বীকারোক্তি দেন, যা তার নিজের অভিযুক্ত করার ভিত্তি তৈরি করে এবং তার সহযোগিতা প্রধান মাদক পাচার সংগঠনগুলোর সাথে যেসব সহিংস ও দুর্নীর্তিগ্রস্ত সংস্থা তাদের সেবা ও শোষণ দুই-ই করত, তাদের প্রতি মারাত্মক আঘাত হানে।
আমেরিকা সরকার ভেলোজাকে ৪৫০ কেজি কোকেইন পাচারের জন্য দায়ী করে। তার সাড়ে ১৬ বছর কারাদ- হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে সাড়ে ৭ বছর অতিবাহিত করার পর এই শরতে তিনি মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। এভাবে জজ উইলিয়াম এইচ পাউলি তৃতীয় ভেলোজার রায়ে বলেছিলেনÑ আপনার জীবনে যেসব ভয়ঙ্কর কাজ আপনি করেছেন সেই ভয়ঙ্কর কাজ করা লোকটি আবার তার পুরনো কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন।
ওলিভা বলেন, ভেলোজা যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার আশা করছেন যদিও নির্যাতন ও মানুষ হত্যাসহ ৮৫টি অপরাধের জন্য স্বদেশ কলম্বিয়ায় তার জন্য জাস্টিস ও পিস শাস্তি অপেক্ষা করছে। এ পর্যন্ত দু’জন আধা সামরিক সহযোগী কারামুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় লাভ করেছেন। তারা হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে ৫ বছর কারাদ- ভোগকারী এল তুসো নামে পরিচিত জুয়ান কার্লোস সিয়েরা ও ৭ বছর কারাদ- ভোগকারী কার্লোস মারিয়া আগুইলার ওরফে রোগেলিও।
উভয়ের বিরুদ্ধে কলম্বিয়ায় দু’টি গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের অপেক্ষায় আছে। সিয়েরার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা বলে কলম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস জানায়। তাদের দু’জনের পরিবারই যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে। তেমনি পেয়েছে ইভো নামে পরিচিত আধা সামরিক বাহিনীর তৃতীয় সহযোগী মরিসিও লোপেজ কারডোনার পরিবার। তিনি নিজেও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। একইভাবে আবেদন করেছেন জিরাল্ডোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরিত আধা সামরিক নেতা গুইলেমো পেরেজ আলজেট। তিনি তার কারা মেয়াদের অর্ধেক ভোগ করার পর জুনে মুক্তি পেয়েছেন।
দ-প্রাপ্ত মাদক চোরাচালানি বলে এসব লোক যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পওয়ার উপযুক্ত নয়। পরিবর্তে তারা টর্চার এগেইনস্ট কনভেনশনের আওতায় বহিষ্কারের বিরুদ্ধে সুরক্ষার এক বিরল ফরমের জন্য অনুরোধ জানান এ যুক্তি দেখিয়ে যে, তারা সম্ভবত তাদের সরকার কর্তৃক নির্যাতিত হবেন। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এখন মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট জুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস।
সাবেক বিচার কর্মকর্তা ও ৯০-এর দশকে কলম্বিয়ার এক প্রেসিডেন্টের পুত্র সাম্পার এ যুক্তিকে অবিশ^াস্য বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তি সুরক্ষা কর্মসূচি, যা আন্তঃআমেরিকান মানবাধিকার কমিশনের অনুমোদিত।
একজন যুদ্ধবাজ ও মাদক স¤্রাট হিসেবে সালভাটোর মানকুসো জিরাল্ডোর চেয়েও বড় খেলোয়াড় ছিলেন। তবে জিরাল্ডোর মতো শয়তান ছিলেন না। তিনি মৌখিকভাবে নিজের দোষ স্বীকারকারী ছিলেন। একবার তিনি কলম্বিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন বিচার প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করলে কথা বলতেই থাকতেন। যদি তাকে তার দ্বারা নির্যাতিতদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হতো তিনি এমনকি কেঁদে ফেলতেন।
তারপর তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। প্রায় এক বছর পর জাস্টিস ও পিস-এর অচলাবস্থা ও কার্যত মৃত্যু রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে দায়বদ্ধতা বোধ করেন। তিনি কলম্বিয়ার লিবারেল পার্টির এক সিনেটর ও আধা সামরিক বাহিনীর অপহরণের এক ভুক্তভোগীকে একটি আবেগময় চিঠি লেখেন। তাতে বলেন, আমাদের প্রত্যাবাসনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি ঘটনার শিকার লোকজন ও আমাদের উভয়ের জন্য এক অসহায়জনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
বেসরকারিভাবে সত্য ও সমঝোতার চেষ্টায় মিস কর্দোবা সেপেডাসহ নির্যাতিতদের আইনজীবীদের সাথে মানকুসোর সাথে জেলে বৈঠক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তবে কারা কর্মকর্তারা মানকুসো ও অন্য যুদ্ধবাজদের সাথে টাইমস পত্রিকার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে দেননি।
সেপেডা বলেন, তিনি আধা সামরিক নেতাদের একজনের কাছে জানতে চান যে, তার পিতাকে কে হত্যা করেছে তা তিনি জানেন কি না। তার বাবা ছিলেন একজন বামপন্থী সিনেটর যাকে ১৯৯৪ সালে হত্যা করা হয়। আধা সামরিক বাহিনীর নেতা ডন বারনা শুধু কিছু নামই জানাননি, তাদের কথা কলম্বিয়ার কৌঁসুলিদের কাছে বলতেও রাজি হন। সে ব্যবস্থা করতে ৬ মাস লাগে।
তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হলো। আমরা কলম্বিয়ার কৌঁসুলিদের কাছে পৌঁছতে পারলাম, বিচার বিভাগ থেকে কেউ এলেন এবং তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হলো। তবে আমি বলেই তা পারলাম। কর্দোবা বা এন্টিওকুইয়ার হাজার হাজার নির্যাতিতের পক্ষে কখনোই এটা সম্ভব নয়।
বিচারের প্রত্যাশা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে আইনজীবীদের সাথে কলম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারকরা ওবামা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। এ অবস্থায় বিচার দফতর ২০১০ সালে জেলে থাকা প্রায় একডজন প্রধান আধা সামরিক বাহিনীর নেতার ব্যক্তিগত বা ভিডিও সাক্ষাৎকার গ্রহণের একটি অ্যাকসেস প্ল্যান অনুমোদনের প্রতিশ্রুতি দেয়।
কলম্বিয়া সরকারের তথ্যমতে, জাস্টিস অ্যান্ড পিস প্রক্রিয়ায় গত দশকে সাবেক আধা সামরিক বাহিনীর ১২৮ জন সদস্যকে দ-িত করা হয়েছে, এক হাজারেরও বেশি লোককে আটক করা হয়েছে। এখন দেশটি ফার্ক-এর জন্য আরেকটি অন্তর্বর্তী বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আধা রাজনৈতিক তদন্তে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউরাইবের ছোট ভাই সান্তিয়াগোকে আধা সামরিক বাহিনীর ডেথ স্কোয়াড টুয়েলভথ অ্যাপোসল-এর সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়।
আধা সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউরাইব নিজেও তদন্তের সম্মুখীন হন, তবে তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। বর্তমানে তিনি একজন সিনেটর। তিনি তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তদন্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন। তিনি ফার্ক গেরিলাদের সাথে তার উত্তরসুরি প্রেসিডেন্ট সান্তোসের শান্তিচুক্তির কঠোর সমালোচক। তিনি নিজে মিলিশিয়াদের সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য যেমনি অভিযুক্ত তেমনি সান্তোসের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরিহার করার অভিযোগ করেন।
প্রেসিডেন্ট সান্তোস বলেন, ফার্কের সাথে শান্তিচুক্তির ফলে মাদক পাচার হ্রাস পাবে, যা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র লড়াইয়ে অর্থ জোগায়। গত দু’বছর ধরে মাদক চাষের তুলনায় কোকা চাষের পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণভাবে বেড়েছে।
সমস্যা সমাধানের পন্থা হিসেবে কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বহিঃসমর্পণের হার হ্রাস পেয়েছে। আধা সামরিক নেতাদের বহিঃসমর্পণের সংখ্যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৯। নতুন চুক্তিটি ভোটারদের দ্বারা সমর্থিত হলে তা ফার্ক গেরিলা নেতাদের মাদক পাচারের দায়ে বহিঃসমর্পণ না করা নিশ্চিত করবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে।
এ বছর দুই তরুণী সান্তা মারটা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে। তারা বলে যে, জিরাল্ডো আত্মসমর্পণ করার পর এবং অপরাধ না করার অঙ্গীকার করার পরও তারা তার যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। তারা জানায়, তাদের ১৪ বছরেরও কম বয়সে তাদেরকে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ আটক কেন্দ্রে ও পরে জেলে জিরাল্ডোর সাথে যৌন সংসর্গ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
তাদের এ অভিযোগ জিরাল্ডোর জন্য সম্ভাব্য ক্ষতিকর হওয়ায় দুই তরুণীকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। সান্তা মারটার নিরাপত্তা প্রধান মিস জুনিগা বলেন, জিরাল্ডোর ছেলেরা তাদের হত্যা করতে যাচ্ছিল বলে আমরা তাদের এলাকার বাইরে রেখেছি। এদিকে জিরাল্ডো এ অভিযোগকে মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দুই তরুণীর অভিযোগ প্রমাণিত হলে জাস্টিস অ্যান্ড পিস-এর আওতায় ৮ বছর বিকল্প কারাদ- বাতিলের জন্য জিরাল্ডোর চেষ্টা ব্যর্থ হবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র তাকে দেশে ফেরত পাঠায় তাহলে বাকি জীবন তাকে কলম্বিয়ার কারাগারে কাটাতে হবে।
হেনরিকুয়েজ পরিবারের জন্য এটি এক নতুন খবর, যা তারা জানতেন না।
জিরাল্ডোর আমেরিকার মামলায় নির্যাতিত হিসেবে আদালতে দাঁড়ানোর অনুমতি পেতে তাদের ৮ বছর লেগেছে। তাদের আইনজীবীরা অবশেষে এ যুক্তিতে জয়ী হন যে, যদিও হেনরিকুয়েজ বিদেশী অপরাধের বিদেশী ভিকটিম, কিন্তু তার হত্যা মাদক ষড়যন্ত্রের ফল যাতে জিরাল্ডো দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
হেনরিকুয়েজের বড় মেয়ে বেলা আদালতের এ অনুমতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ছোট মেয়ে নাদিয়েঝদা হেনরিকুয়েজ সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এ অধিকার নিছক আইনি পদ্ধতি। এটা অর্থবহ, তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মামলার বিচারপ্রার্থীর অধিকার, সত্য, ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে তার প্রভাব খুবই সীমিত।
কলম্বিয়ার যুদ্ধবাজদের বিচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমেরিকার সরকার ন্যায়বিচার নিয়ে আলোচনায় নিয়োজিত, আর তা ন্যায়বিচার নয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কী ক্ষতি হয়েছে সেদিকে গুরুত্বারোপ করছেন, তারা আমাদের কী ক্ষতি করেছে তা দেখছেন না।
হেনরিকুয়েজ পরিবার জিরাল্ডোর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি চানÑ তা মৃত্যুদ- নয়, আজীবন কারাবাস।
বেলা হেনরিকুয়েজ বলেন, হারনান জিরাল্ডো কি ভাবছেন জানি না, তবে তাকে এটা দেখতে হবে যে, তিনি কলম্বিয়ায় যে অপরাধ করেছিলেন তা বিস্মৃতির তলে চাপা পড়েনি। তাকে স্বীকার করতে হবে যে, তার ব্যবসা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তা শুধু একজন নেতা বা একটি কম্যুনিটির সদস্যদের নয়, অসংখ্য প্রাণ। যেসব পরিবার সহিংসতার স্বীকার হয়েছে তাদের সে ভার বয়ে চলতে হবে। অনাগত প্রজন্ম ধরে তা গোটা দেশের ইতিহাসের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। সূত্র : দি নিউইয়র্ক টাইমস। (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।