ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই শিশু অধিকার একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। জাতিসংঘ সনদে শিশু অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ও এই সনদে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তাই এ দেশের শিশুদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। শিশু অধিকারের আওতায় আঠারো বছরের নিচে সকলকে শিশু হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। শিশু অধিকার আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, অনৈতিকভাবে শোষণ শিশুদের অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। শিশুর সামাজিক উন্নয়নের পথে বাঁধা সৃষ্টি করবে যেসব, সে সব বিপদ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে। শিশুদের সকল প্রকার হয়রানি, নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শিশুর শিক্ষালাভের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মোট কথা, একজন শিশু পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন,
“এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান।
এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি,
নবযাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।”
কবি সাহিত্যিকদের এ কথার সফল বাস্তবায়ন আদৌ পুরোপুরি হয়নি। এ সুন্দর পৃথিবীর নানা জায়গায় নানা জাতি এখনো যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে যার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার শিশু। শিশুদেরকে অনেক সময় বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের দিয়ে নানা অমানবিক কাজ-কর্ম করাচ্ছে। শিশুদের যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার রয়েছে তা শুধু খাতা-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। শিশুদের জীবন গড়ে উঠেছে অমানবিকতায় এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে। আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে এবং শহরাঞ্চলে বস্তি এবং পথশিশুদের জীবন এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের জন্য নাই কোন সুষ্ঠু পরিকল্পনা। তারা বিদ্যালয়ে গেলো কিনা, কেনা বা যেতে পারছে না নাই কোন তদারকি। তাই আমাদেরকে সে ব্যাপারে আরো সচেতন হয়ে কাজ করে যেতে হবে। নচেৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাবে আমাদের লক্ষ লক্ষ শিশুর ভবিষ্যৎ স্তিমিত হয়ে যাবে তাদের আশা-আকাঙ্কা এবং জীবন। বাংলাদেশ যেহেতু একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। এদেশের প্রায় অধিকাংশ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। পরিবারের আর্থিক চাপে শিশুরা শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। দরিদ্র পরিবারের অধিক জন্মের হার শিশুদের শ্রমের অন্যতম কারণ। আবার দরিদ্র পরিবারের একাধিক বিবাহও শিশু শ্রমের অপর একটি কারণ বটে। বাংলাদেশ সরকার শিশুশ্রম প্রতিরোধে এবং শিশুদেরকে বিদ্যালয়মুখী করার জন্য নি¤œলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
১. শিশুদের মধ্যে শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ।
২. মেয়েদের জন্য ডিগ্রি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন।
৩.বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এবং বিনামূল্যে শিক্ষা সামগ্রী প্রদান।
৪. উপবৃত্তি প্রদান এবং বাস্তবায়ন।
৫. পোশাক শিল্পে বেতন নির্ধারণ এবং শিশু শ্রমিকদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
৬. গণসচেতনতা সৃষ্টি করে অভিভাবক এবং শিশুদেরকে শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করা।
৭. শিক্ষা সপ্তাহ পালন করা এবং বেতার, টিভিতে শিক্ষামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা।
শিশু শ্রমকে প্রতিরোধ করার জন্য নি¤œলিখিত সুপারিশগুলি বাস্তবায়ন করা জরুরি :
১. সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলো প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে। এই ব্যবস্থায় পথশিশু ও অবহেলিত শিশুদের সম্পৃক্ত করা উচিত।
২. কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে কারিগরি শিক্ষাকে বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে।
৩. শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের শিশু মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
৪. শিশু শ্রমের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। এর জন্য সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমকে কাজে লাগাতে হবে।
৫. শিশু পাচার কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। শিশু পাচারকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
৬. দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে দরিদ্র শিশুদের সম্পৃক্ত করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা উচিত। এদের সাহায্যের জন্য অন্য কোন কর্মসূচি দেয়া যায় কিনা, তা যাচাই করা দরকার।
৭. দরিদ্র শিশুদের মৌলিক অধিকার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে। শিশু অধিকারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
৮. শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
৯. প্রতি পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লা-মহল্লায় কমিটি গঠন করে যে সকল শিশু অনাহারে-অর্ধাহারে থাকে, বিদ্যালয়গামী নয় তাদেরকে পুনর্বাসন করে বিদ্যালয়মুখী করতে হবে।
মোদ্দা কথা, শিশু শ্রমকে সম্পূর্ণরূপে না বলতে হবে।
পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে শিশুশ্রম একটি বিরাট অংশ জুড়ে আছে। তড়িঘড়ি করে শিশুশ্রম বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করার আগে চিন্তা করতে হবে কেন শিশুরা শ্রম দিতে বাধ্য কেনইবা তারা শ্রমিকের কাজ করবে? এর কারণগুলি চিহ্নিত করে বাস্তবমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুশ্রম হ্রাস করতে হবে। সরকারের যেমন যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি জনগণকেও শিশুশ্রমের ভবিষ্যৎ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে অভিহিত করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ থেকে শিশুশ্রমকে চিরতরে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।