Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধ হোক : এগিয়ে আসতে হবে সরকার ও পরিবারকে

মোহাম্মদ আবদুল অদুদ | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ৮:৫৯ পিএম

আমাদের কোনো জিনিসপত্র নষ্ট হলে তা যেমন ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া স্বাভাবিক, সন্তানের নৈতিকতার অবক্ষয় হলে তাকে বর্জন করা বা ফেলে দেওয়া কিন্তু ততটা সহজ নয়, বরং ভীষণ কঠিন। আমাদের মধ্যে ভালো-মন্দ পাশাপাশি অবস্থান করে। জীবন চলার পথে দিকনির্দেশনায় বা সিদ্ধান্তে ভুল হলেই সেটা মন্দের খাতায় গিয়ে জমা হয়। আমরা দেখি, সবাই তো সুখী হতে চায়, সবাই তো ভালো হতে চায়, তারপরও কেউ সেটা হয়, কেউ হয় না। এই হতে চাওয়াটাকে পাওয়ায় পরিণত করা জীবনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর জীবনকে সফল করতে আমাদেরকে নিতে হয় হরেক রকম চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি করোনা মহামারির কারণে গোটা বিশ্বকে লকডাউনের আওতায় আনা হয় ক্রমান্বয়ে।কিন্তু প্রযুক্তির লকডাউন তো হয়নি বরং সব ধরনের চাহিদা পূরণে নানান জিনিসপত্র দিয়ে আইটি সেক্টরকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমন কোনো বিনোদন নেই যা গুগলে নেই। ছোট-বড় সবাই পছন্দ করে এমনসব ব্যবস্থা করা আছে ওখানে। আমাদের সমাজব্যবস্থা এমনিতেই প্রথম থেকে ভালো নয়। এখানে বিবেকের অধঃপতন লকডাউনের আগেই আমরা লক্ষ করছি। লকডাউনে সবাই ঘরে বসে কী করবে? শেষে শুরু হলো গুগল সার্চ, কী চাই, যা দরকার সবই আছে সেখানে। প্রাপ্ত, অপ্রাপ্তবয়স্ক, তরুণ প্রজন্মের হাতে বইয়ের পরিবর্তে এখন রয়েছে স্মার্টফোন, ঘরে বসেই শুরু হলো ভালো-মন্দের বিনোদনমূলক আলো-আধারীর খেলা। যার ফলে বর্তমান এবং আগামীর দিনগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠতে শুরু করেছে। খুবই আশঙ্কার মধ্যে আছি আমরা। একটি প্রজন্ম চোখের সামনে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে খুবই দুঃখবোধ হয়।

আজকাল অনেক অভিভাবক ফোন করে বলছেন, তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করে এমনসব গেম বিশেষ করে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমস মুঠোফোনে বন্ধ করতে। কেউ আবার ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে সন্তানদের নৈতিকতা সংরক্ষণে সাংবাদিক হিসেবে আমাদেরকে তাদের পাশে চান।এমন অনেক অভিভাবক বলেছেন বিপজ্জনক এই পাবজি-ফ্রি ফায়ার বন্ধের কথা। কেউ মানববন্ধন করে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমস খেলা বন্ধ করতে আওয়াজ তুলছেন। কিছু সচেতন ছাত্র-ছাত্রীও তাদের জীবননাশে সহযোগী এই খেলা বন্ধের পক্ষে। কেউ বলছেন, নিজ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা শিশু–কিশোরদের সচেতন করতে। এসব বিষয়ে সবসময় খেয়াল রাখতে। কেউ বলছেন, আমরা তাদের হাতে বই তুলে দিই, সুস্থ বিনোদনের সুব্যবস্থা করি, খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে তারা আর বিপথগামী হবে না।

কেউ বলছেন, অন্তত পাবজি খেলে টিকটকের মতো গ্রুপিং করে কেউ মেয়েদের হয়রানি করবে না। বন্ধ করতে হলে আগে দ্রুত টিকটক ও লাইকি বন্ধ করা উচিত। জানা যায়, ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেমের পার্থক্য আছে। ফ্রি ফায়ারের ডাউনলোড সারা বিশ্বে ৫০০ মিলিয়ন প্লাস আর পাবজি ১০০ মিলিয়ন প্লাস। আর ৮০ শতাংশের বেশি পাবজি খেলোয়াড়দের বয়স ২০–এর বেশি। তারপর পাবজি খুব ব্যয়বহুল গেম, তাই বাচ্চারা এটা খেলে না। কারও মতে, সন্তানদের মা–বাবার যথেষ্ট আহ্লাদ দেয়া এর পেছনে দায়ী। হেসে হেসে বলে যে নিষেধ করলেও শোনে না। কিন্তু তাদের কি এটা ভেবে খারাপ লাগে না যে, তারা অভিভাবক হিসেবে ব্যর্থ?

অন্যদিকে এখনকার মা–বাবারাও মডার্ন। বাচ্চারা বিরক্ত করলেই মুঠোফোন দিয়ে শান্ত করে রাখতে চান। ঠিকমতো খায় না বলে ফোন দিয়ে খাওয়াতে হয় তাদের।খুব কম বাবা মা আছেন, যারা মনে করেন, না খেলে না খাবে, ক্ষুধা যখন খুব লাগবে, ফোনও লাগবে না, নিজেই খাবে। এরকমটা বাবা মায়েরা বুঝতেই চান না। কারও মতে, বাবা–মা একটু কঠোর না হলে এসব বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

অনেকে বলছেন, এখন দীর্ঘমেয়াদী স্কুল বন্ধ। করোনার আগে থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, পড়ার মধ্যে এখন আর কোনো মজা নেই, শিক্ষকেরা শুধু শিট ধরিয়ে দেয় হাতে, পড়াকে কঠিন করে তুলে ধরা হচ্ছে বিদ্যালয় থেকে। এটা পড়ো, ওটা পড়ো, যে কোনো মূল্যে এ প্লাস পেতে হবে। শিক্ষার পরিবেশকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে প্রশ্নফাঁস নামের একটি সর্বনাশী প্রথা। না বুঝে মুখস্থ করো। সময় নেই তাদের ঘুরতে যাওয়ার। বিকেলে কোচিং, কিংবা বাসায় স্যার। কী করবে ওরা, সুযোগ পেলেই মোবাইল, এই মোবাইল হলো বড় ছোট সবার বন্ধু, কিংবা টাইম পাস করার মেশিন, কখনোবা মন ভালো করার বাক্স।আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বিপথগামী হচ্ছে আমাদের সোনার টুকরো ছেলে আর হিরের টুকরো মেয়েরা। সুনামগঞ্জ থেকে কানিজ নাসরিন নামে এক অভিভাবক এই প্রতিবেদককে বললেন, মুঠোফোনের অপব্যবহার আজ সন্তানদের লেখাপড়ার বারোটা বাজাচ্ছে। তারা এখন আর পড়তে বসতে চায় না।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইকবাল আনোয়ার এই প্রতিবেদককে বলেন, পাবজি-ফ্রি ফায়ারসহ খিছু গেম আছে, যা নেশার মত। কিছু গেমে টাকা খরচ করতে হয়। নেশায় পড়লে টাকার সংস্থানে ছেলে মেয়েরা অপরাধমূলক কাজেও জড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অভিভাবককেই রাখতে হবে মুখ্য ভূমিকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক ড. তানিয়া রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার বন্ধ হওয়া জরুরি। দীর্ঘমেয়াদী এতে চোখের বেশ ক্ষতি হয়। তাদের মনমানসিকতায় নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এবার তাহলে কথা হলো, অভিভাবককেই নিতে হবে সন্তানের পুরো দায়িত্ব। এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে অনেকেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশের পরিবেশ, অবকাঠামোর উন্নতিতে সরকারকেও সঠিক, দ্রুত এবং সুপরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। কারণ, একসময় অভিভাবকের দায় সরকারের ঘাড়ে এসে পড়বে। আবার অভিভাবকদের বলব, শুধু সরকারকে দায়ী না করে বরং আপনার বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটান। বাচ্চারা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, মুঠোফোনে কী কী করছে তার দিকে সঠিক পদ্ধতিতে কড়া নজর রাখুন। সবাই মিলে সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসুন। সন্তানকে একরকম ‘পোলট্রি ফার্মে’র মতো ঘরবন্দী না রেখে তাদের সামাজিক মূল্যবোধ চর্চা, সৃজনশীল পরিবার গঠন, স্বার্থপরতা বর্জন এবং নৈতিকতা কী, সে বিষয়ে শিক্ষা দিন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদী বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। যা পুষিয়ে নিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা খুবই দরকার বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। সন্তানের প্রতি অভিভাবকের সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা, গঠনমূলক পরামর্শ ও সরকারের দিক থেকে যতটা সম্ভব ক্ষতিকর গেম বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকা দরকার।

 

লেখক : সাংবাদিক



 

Show all comments
  • Hossain ৪ জুন, ২০২১, ৯:১৪ পিএম says : 0
    Poribar oshohai, shorkarer Kisi korar Ase.
    Total Reply(0) Reply
  • সামসুল আলম ৪ জুন, ২০২১, ১০:১৩ পিএম says : 0
    আমি গেমস্ গুলো বন্ধ হবার পক্ষ। কিশোর বয়সের নবীনরা গোল্লায় যাচ্ছ।
    Total Reply(0) Reply
  • পিউ ১১ আগস্ট, ২০২১, ২:২৪ পিএম says : 0
    সরকারের উচিত ফ্রী ফায়ার এবং পাবজি বন্ধ করার জন্য যথাসম্ভব ব্যাবস্থা নেয়া।ছাত্রসমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ????।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাবজি-ফ্রি ফায়ার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ