Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমার অতিরিক্ত রিজার্ভ খরচ করছেন পরিচালকরা

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক ঃ বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে সীমার অতিরিক্ত রিজার্ভ রাখছে কিছু কোম্পানি। শুধু তাই নয় বছরের পর বছর এই রিজার্ভ বাড়িয়ে কেউ কেউ রিজার্ভের পাহাড় বানিয়ে ফেলছে। কিন্তু কেউ নজর দিচ্ছে না এই দিকে। আর দিবেই বা কিভাবে? কি পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে পারবে কোথায় সেই রিজার্ভ ব্যয় করবে কিংবা কারা হবে এই রিজার্ভের হকদার সে ব্যাপারে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত প্রণীত হয়নি কোনো নীতিমালা। ফলে যে যার মতো করে স্বেচ্ছাচারিভাবে একদিকে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড বঞ্চিত করে জমানো হচ্ছে রিজার্ভ আরেকদিকে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই স্বাধীনভাবে কোম্পানির লোকজন সেই রিজার্ভ ব্যয় করছে দেদারছে।
অথচ শুধু আমাদের দেশেই নয় সারা বিশ্বে প্রচলিত বিধান, কোনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাই সংরক্ষিত রিজার্ভে থাকা টাকার প্রকৃত দাবিদার। কারণ প্রতি বছর মুনাফার একটা অংশই যা বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য ছিল সেটাই রিজার্ভ ফান্ডে জমা রাখা হয়। বিনিয়োগকারীদের পাওনা অংশকে কোম্পানির রিজার্ভ ফান্ডে জমা করে আপদকালীন ব্যয় মেটানোর পর এক সময় এই অর্থ বিনিয়োগকারীদের সমবণ্টন করে দেয়ার নিয়ম বহির্বিশ্বে চালু রয়েছে। শুধু আমাদের দেশেই কোম্পানিগুলোর রিজার্ভে থাকা অর্থ কোথায় কোন কাজে বিনিয়োগ করা হচ্ছে অথবা কে কোন খাতে খরচ করছে তা কোম্পানির মূল অংশীদার শেয়ার হোল্ডারদের থাকে অজানা। এখন দাবি উঠেছে এই টাকা আর রিজার্ভে নয়, বণ্টন করে দিতে হবে শেয়ার হোল্ডারদের।
অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় কোম্পানির পরিচালকরা মুনাফা কম হওয়ার অজুহাতে ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কমাচ্ছে। আর রিজার্ভের নামে অর্থ সংগ্রহ করে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করছে। তাই বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এসব কোম্পানিগুলোকে রিজার্ভ থেকে ডিভিডেন্ড প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কতিপয় কোম্পানি তাদের পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রিজার্ভ সংরক্ষণ করছে। আবার কিছু কিছু কোম্পানি তার অনুমোদিত মূলধনের চেয়েও অনেক বেশি রিজার্ভ সংরক্ষণ করছে। বছরের পর বছর এসব কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ালেও ডিভিডেন্ডের পরিমাণ কমছে। মূলত বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির ঝুঁকি এড়াতে এই অর্থ রাখা হচ্ছে বলে প্রচার করা হলে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তার ভিন্ন চিত্র। আবার কোন কোন কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নিট মুনাফা থেকে কম ডিভিডেন্ড দিয়ে রিজার্ভ ফান্ড বাড়াচ্ছে। কারো কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, একাধিক কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সুযোগ থাকার পরও তাদের মূলধনের পরিমাণ বাড়াচ্ছে না। রিজার্ভের টাকা বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য। এ টাকা বিনিয়োগকারীদের দিয়ে দেয়া দরকার। অন্যান্য দেশে এই টাকা বিনিয়োগকারীদের দেয়া হয়। আর আমাদের দেশে কিছু কিছু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা লুটেপুটে খাচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আফতাব অটোর পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৯৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অনুমোদিত মূলধন ১২০ কোটি টাকা। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সমাপ্ত ২০১৫ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ২৯ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অথচ কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ ২৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যা তাদের অনুমোদিত মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ। এছাড়া অ্যাটলাস বাংলাদেশের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৬ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সমাপ্ত ২০১৫ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অথচ কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা তাদের অনুমোদিত মূলধনের তুলনায় ৪ গুণেরও বেশি। হাইডেলবার্গ সিমেন্টের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সমাপ্ত ২০১৫ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ১৪০ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ৫২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যা তাদের অনুমোদিত মূলধনের তুলনায় ৫ গুণ বেশি। কনফিডেন্স সিমেন্টের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪৫ কোটি টাকা। অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সমাপ্ত ২০১৪ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ২৩ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ১৭৯ কোটি ২ লাখ টাকা। যা তাদের অনুমোদিত মূলধনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। মুন্নু সিরামিকসের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২৩ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সমাপ্ত ২০১৫ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ৩০ লাখ ৭ হাজার টাকা। অথচ কোম্পানিটির রিজার্ভের পরিমাণ ২০৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। যা তাদের অনুমোদিত মূলধনের তুলনায় চার গুণেরও বেশি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কোন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের দ্বিগুণ টাকা রিজার্ভ ফান্ডে রাখা যুক্তিসংগত। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানির রিজার্ভ বেশি থাকাও যথোপযুক্ত। অন্য খাতের যেসব কোম্পানি দ্বিগুণের বেশি রিজার্ভ রাখছে তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা বলেন, বিএসইসিকে কোম্পানিগুলোর রিজার্ভ বেশি রাখার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। কারণ কোম্পানির উৎপাদনে লোকসান হলে পুনরায় উৎপাদনে ফিরে আসতে রিজার্ভ ফান্ড রাখা দরকার।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ ফান্ড কোম্পানিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখে। তবে দ্বিগুণের বেশি রিজার্ভ রাখা অনৈতিক। কারণ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রিজার্ভ ফান্ড বেশি থাকতে পারে। কোম্পানিগুলোর ২ বা ৩ গুণের বেশি রাখা প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। রিজার্ভ ফান্ডের টাকা বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড হিসেবে দিয়ে দেয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য, পরিশোধিত মূলধন ও নিট মুনাফা অনুসারে কোম্পানিগুলোকে সরকারকে কর দিতে হয়। সে জন্য বেশিরভাগ কোম্পানি নিট মুনাফা কম দেখায় এবং পরিশোধিত মূলধন বাড়াচ্ছে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। -ওয়েবসাইট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সীমার অতিরিক্ত রিজার্ভ খরচ করছেন পরিচালকরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ