Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ট্যাম্পাকো ট্র্যাজেডি ‘আমরা সাহায্য চাই না অন্তত লাশটি খুঁজে দিন’

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টঙ্গী থেকে মোঃ হেদায়েত উল্লাহ : টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকায় ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের হাত ধরে কেঁদে বললেন, “আমরা সাহায্য চাই না, আমাদের হারানো স্বজনদের অন্তত লাশটি খুঁজে দিন।”
গতকাল সোমবার পর্যন্ত নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে গেলে তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে এ আবেদন জানান। এসময় সংসদ সদস্যকে কাছে পেয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। স্বজনরা এসময় তাদের প্রিয়জনের অন্তত লাশটি যেন পেতে পারেন সে ব্যাপারে বার বার সংসদ সদস্যের সহযোগিতা কামনা করেন। এমপি জাহিদ আহসান রাসেল এসময় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের উদ্দেশ্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে, একটি লাশ অবশিষ্ট থাকলেও উদ্ধার অভিযান যেন অব্যাহত রাখা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত একজনও নিখোঁজ থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ট্যাম্পাকোতে উদ্ধার অভিযান চলবে বলে নিখোঁজদের স্বজনদের তিনি আশ্বস্ত করেন। এসময় তিনি নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের হাতে শান্তনা হিসেবে পাঁচ হাজার টাকার নগদ অনুদান বিতরণ করেন।
গতকাল দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্ব ঘোষিত টঙ্গীর ট্যাম্পাকো দুর্ঘটনায় নিহত স্বজনদের হাতে নগদ ২০ হাজার টাকা এবং আহত শ্রমিককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। নিহত ৩৪ জনের মধ্যে ২০ জন এবং তালিকাভুক্ত আহত ৬৫ জনের মধ্যে ২৫ জনকে প্রথমবারের মত গতকাল এই অনুদান বিতরণ করা হয় বলে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার ট্যাম্পাকোর পাশে টঙ্গী বিসিক কার্যালয়ের সামনে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে হতাহতদের স্বজনদের মধ্যে সরকারি অনুদানের এই টাকা বিতরণ করা হয়। উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত না হওয়ায় সরকারি অনুদানের এই তালিকায় ছিলেন না নিখোঁজদের স্বজনেরা। শুধু মৌখিক শান্তনাই ছিল তাদের ভরসা। পরে অবশ্য তাদের শান্তনা হিসাবে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল নগদ ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন। সরকারি অনুদানের টাকা বিতরণ অনুষ্ঠানে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীসহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সেনা ও দমকল বাহিনীর উদ্ধার কর্মীরা গতকালও বিরামহীন উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন। তারা ভারি যন্ত্রপাতির সাহায্যে কারখানার পূর্বপাশ থেকে ধ্বংস্তুপ সরিয়ে ভেতরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস.এম আলম গতকাল অনুদান বিতরণকালে নিখোঁজদের স্বজনদের আকুতি মিনতির প্রেক্ষিতে বলেন, আশা করি আমরা দুই-এক দিনের মধ্যে কারখানার ভেতরের ধ্বংসস্তুপ অপসারণ শুরু করতে পারবো। কারখানার কেমিক্যাল ডিভিশনের নিখোঁজ তিন জনের ভাগ্যে কি ঘটেছে এব্যাপারে আমরা আশঙ্কায় আছি। নিখোঁজদের সন্ধ্যান না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এদিকে গতকাল পর্যন্ত ধ্বংসস্তুপ অপসারণ করে মৃত বা জীবিত কাউকে পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত ১১ জনই নিখোঁজ রয়েছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টঙ্গী মডেল থানার এসআই সুমন ভক্ত জানান, নিখোঁজদের ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে গতকাল সোমবার স্বজনদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এব্যাপারে আজ (সোমবার) আদালতের পারমিশন হাতে আসার কথা। পারমিশন পেলে আগামীকাল (আজ) এই তালিকা মহাখালি সিআইডিতে পাঠানো হবে। এর পর তারা (সিআইডি) যখন বললে তখন নমুনার জন্য স্বজনদের হাজির করা হবে। ডিএনএ টেস্টে পরিচয় সনাক্ত হলে ঢামেকের মর্গে সংরক্ষিত ৬ লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, গাজীপুর মহানগরির টঙ্গী বিসিক শিল্প এলাকায় সিলেট-৬ গোলাপগঞ্জ আসনের সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য ড. সৈয়দ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় ১০ সেপ্টেম্বর সকালে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভবনের তিনটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। গুরুতর আহত ৩৫ জন এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে সঙ্কটাপন্ন ৩ জনের অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত বলে জানা গেছে। এখনো নিখোঁজ আছেন ১১ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্যাম্পাকো ট্র্যাজেডি ‘আমরা সাহায্য চাই না অন্তত লাশটি খুঁজে দিন’
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ