পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় কাজী সাবিরা রহমান লিপি (৪৭) নামে এক চিকিৎসককে নৃশংসভাবে শ্বাসনালী কেটে খুন করা হয়েছে। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দাহ্য পদার্থ না থাকায় আগুন তেমন ছড়ায়নি। তবে, সাবিরার শরীরের কিছু অংশ এতে দগ্ধ হয়। নিহতের পিঠেও দুটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
পুলিশের ধারণা এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। গতকাল সোমবার কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের বাড়ির নিজ ঘর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন জনকে হেফাজতে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- সাবলেটের বাসিন্দা কানিজ সুবর্ণা, তার এক বন্ধু ও বাসার দারোয়ান রমজান।
অন্যদিকে গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালী থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন একটি খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে দুপুরে বনানী লেক থেকে লাল রংয়ের ব্যাগের ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো বিচ্ছিন্ন মাথাটি উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডের পর ওই ব্যক্তির দেহ ৬ টুকরা করেছে দুর্বৃত্তরা।
নিহতের ওই ব্যক্তির নাম ময়না মিয়া (৩৮)। তার বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ডিবির রমনা বিভাগের ডিসি আজিমুল হক বলেন, নিহত সাবিরার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পিঠেও দুটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা মনে হচ্ছে না। ডা. সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ ফার্স্ট লেনের বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তিনি ফ্ল্যাটের দুটি রুম এক তরুণীকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন।
সকালে সাবলেটে থাকা তরুণী হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হেঁটে আসার পর তিনি বাসায় ফিরে দেখেন চিকিৎসক সাবিরার রুম বন্ধ। রুমের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। পরে তিনি দারোয়ানকে ডেকে চাবি এনে রুমের তালা খুলে দেখতে পান চিকিৎসক সাবিরা ফ্লোরে পড়ে আছেন। সবাই ভেবেছিলেন চিকিৎসক আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। পরে ডিবি এসে তার গলায় একটি আঘাতের চিহ্ন ও পিঠে দুটি আঘাতের চিহ্ন পায়। আমরা তদন্ত করছি। আশা করছি দ্রুত রহস্য উদঘাটন করব।
কলাবাগান থানার এসআই রব্বানী বলেন, লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ওই বাড়িতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে ডিবি হেফাজতে (আটক নয়) নেয়া হয়েছে।
ডিবি সূত্র জানায়, ডা. সাবিরা দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্বামী চিকিৎসক ছিলেন। তিনি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। পরে সাবিরা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ, তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তবে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না তার। সাবিরার দুই সন্তান রয়েছে। তার আগের স্বামীর ঘরে একটি ছেলে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে ৯ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েকে নিয়ে কলাবাগানের এই বাড়িতে থাকতেন সাবিরা। গত রাতে মেয়েটিকে গ্রিন রোডের নানার বাসায় রেখে এসেছিলেন তিনি। রাতে বাসায় একা ছিলেন সাবিরা।
সাবিরার মামাতো ভাই মো. রেজাউল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড। বিষয়টিকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য আগুনের ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা এখনো কাউকে সন্দেহ করছি না। তদন্তের পর পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে।
সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের ইন্সপেক্টর শেখ রাসেল কবির বলেন, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাবিরার শ্বাসনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার দেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও পোড়ার ক্ষত আছে। আমরা আপাতত নিশ্চিত হয়েছি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। আলামত দেখে মনে হয়েছে, মধ্যরাতের যেকোনো সময় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদরদফতরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, আমরা সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ওই বাসায় একটি আগুনের সংবাদ পাই। সেখানে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধোঁয়া দেখতে পান। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সেখান থেকে একটি লাশ উদ্ধার করেন।
স্ত্রী চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি স্বামী সামসুদ্দিন আজাদ গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, শাশুড়ি ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলেন, লিপি হয়তো বেঁচে নেই, তুমি একটু ঘটনাস্থলে যাও। এরপর বাসায় ছুটে আসি। তবে প্রথমে পুলিশ আমাকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। দুপুর আড়াইটার দিকে ঘরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর স্ত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।
তিনি বলেন, আমার স্ত্রীকে নিঃসন্দেহে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো খুনিরা হত্যার মোটিভ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে। এখানে ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। তাদের ওপর আশ্বাস রাখতে চাই। আমি মনে করি, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক তদন্ত ও দোষীদের বিচার হবে।
স্ত্রীর সঙ্গে না থেকে কেন তিনি আলাদা বাসায় থাকতেন- জানতে চাইলে সামসুদ্দিন আজাদ বলেন, তার ১১ বছরের মেয়ে কলাবাগানের একটি স্কুলে পড়াশোনা করে। আমার বৃদ্ধা শাশুড়িকে দেখভালের সুবিধার্থে লিপি কলাবাগানের ওই বাসায় থাকতেন। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী বিউটি আক্তার বলেন, লিপি নিঃসন্দেহে ভালো মানুষ। তার সঙ্গে কারও যে শত্রুতা থাকতে পারে এটা বিশ্বাস করি না।
খন্ডিত লাশ উদ্ধার : শিল্পাঞ্চল থানার ওসি বিপ্লব কিশোর শীল বলেন, গত রোববার রাতে বনানী থানা পুলিশ মহাখালী থেকে হাত-পা ও মাথা কাটা লাশ উদ্ধার করে। আমাদের থানা এলাকায় অর্থাৎ মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় ডাস্টবিন থেকে কাটা অবস্থায় ওই লাশটির হাত পা উদ্ধার করা হয়। পরে দুই থানার সুরতহাল প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়া যায় কাটা হাত পা এবং কাটা শরীর একই ব্যক্তির।
বিপ্লব কিশোর শীল আরও বলেন, পরে আমরা কাটা হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে ডাটা সার্ভারে মেলাতে থাকি। মেলানোর একপর্যায়ে নিহতের জাতীয় পরিচয়পত্রটি আমরা খুঁজে পাই ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে। তার নাম ময়না মিয়া। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাসিন্দা। দুটি বিয়ে করেছেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তিনি প্রথম স্ত্রী শিল্পীকে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে শিল্পীকে এখনও আমরা খুঁজে পাইনি। তাকে খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া তার কিশোরগঞ্জের শ্বশুর বাড়িতে খবর দেয়া হয়েছে, তারা ঢাকায় আসছেন। তারা ঢাকায় এলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী নাসরিন কিশোরগঞ্জ থেকে এলে হয়তো মামলা হবে। তবে আমরা তদন্ত করে দেখছি এই যুবককে কীভাবে মারা হয়েছে বা তার কীভাবে মৃত্যু হয়েছে।
মহাখালি বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) হারুন অর রশিদ জানান, খবর পেয়ে রাতে মহাখালি বাস টার্মিনালের ভেতরে এনা বাস কাউন্টারের সামনে থেকে একটি ব্যাগ ভর্তি দুই হাত ও দুই পা পাওয়া যায়। অজ্ঞাতনামা কোনো ব্যক্তি যাত্রী বেসে ব্যাগে করে হাত পা চারটি বাস কাউন্টারের সামনে ফেলে রেখে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে দুপুরে বনানী লেক থেকে লাল রংয়ের ব্যাগের ভিতরে পলিথিনে মোড়ানো বিচ্ছিন্ন মাথাটি উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডের পর ওই ব্যক্তির দেহ ৬ টুকরা করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।