Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আ’লীগের লোকজন বিরোধী নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে : বিএনপি

জঙ্গি প্রতিরোধে ‘সরকারের প্রশাসনিক কমিটি’ গঠন

প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত সরকারের প্রশাসনিক কমিটিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের লোকজন। তার বিরোধী নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। এ অভিযোগ করেছে বিএনপি
ঈদে মানুষের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে সরকার শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনিক কমিটি গঠন করেছে। এসব কমিটিতে তারা (ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা) রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মিথ্যা-কাল্পনিক অভিযোগে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীদের জড়িত করে নানাভাবে হয়রানি করছে।
বিএনপি মনে করে দেশব্যাপী প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের পরিবর্তে বিএনপির নেতা-কর্মীদের তালিকা করে গ্রেফতার, হয়রানির মাধ্যমে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার প্রকারান্তরে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল ও উৎসাহিত করছে। অবিলম্বে এই দমন-নিপীড়ন বন্ধ করার দাবি জানান নজরুল ইসলাম খান।
ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা ও ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ‘অসংখ্য’ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে অবিলম্বে তাদের মুক্তির দাবিও জানান বিএনপির এই নেতা।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান এবং সাম্প্রতিকালে বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানের কথা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের নেত্রী জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানালেও সরকার তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো বিএনপিসহ বিরোধীদলকে দোষারোপ করছে। ফলে তারা (সরকার) জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা নসাৎ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র প্রশাসন দিয়ে বা প্রশাসনিক বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ যে দমন করা যায় না, এটা প্রমাণ হয়েছে। আগে এক-দুইজন খুন হতো, এখন ১৮/২২ জন খুন হয়। আমরা সেই জন্য বলেছি যে, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা আমাদের নেত্রী বলেছেন। সেই জাতীয় ঐক্য বিএনপিকে বাদ দিয়ে হতে পারে না। এই দল ভোটের হিসাবে শতকরা ৪০ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে যদি বলা হয়, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে, তাহলে তো এটা ভুল। আমরা মনে করি যে, সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। জনগণের প্রতিরোধেই জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সরকার সাড়া দেয়নি, সেক্ষেত্রে বিএনপিকে বাদ দিয়ে প্রশাসনিক কমিটি হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে বিএনপি কি পৃথক কিছু ভাবছে কিনা জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আমরা আগেও বলেছিলাম, শুধু সরকার একাও জঙ্গিবাদ দমন করতে পারবে না, আবার বিরোধী দল একাও পারবে না। সেজন্য সবাই মিলে এটা করতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার আসলেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করতে চায় না। তারা এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধীদলকে দমন করতে চায়। সেজন্য আমরা এর নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আমাদের মতো করে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির চেষ্টা করছি। সেই চেষ্টাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য, আরো বিভিন্ন যে রাজনৈতিক দল আছে যারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, তাদেরকে নিয়ে আমরা হয়ত সাংগঠনিকভাবে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করবো। সেটা যখন হবে, তখন আপনাদের জানানো হবে।
কানাডায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, অনৈতিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কানাডায় বলেছেন, নারী নির্যাতনে জিরো টলারেন্সে তার সরকার। অথচ একই দিন পত্রিকায় এসেছে সাতক্ষীরায় এমপি পুত্রের নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনা। তার বিরুদ্ধে অন্যের বাড়ি-ঘর-গাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, অন্যের বাড়ি থেকে জোর করে গরু নিয়ে বিক্রি, যখন-তখন রড হাতুড়ি দিয়ে মানুষ পেটানো, মাতলামিসহ বিস্তর অভিযোগ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জনগণের সোচ্চার প্রতিবাদ ও গণমাধ্যমে সমালোচনার প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত গতকাল (রোববার) তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আজ দেশের নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনিই নারী ধর্ষণের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। আজো (সোমবার) গণমাধ্যমে ধর্ষিতা নারীর আত্মহত্যার মর্মান্তিক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ঈদের সময়ে ঘরমুখী মানুষের যানবাহন সংকট, ব্যাপকহারে সড়ক দুর্ঘটনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পশুর চামড়ায় সরকারির দলের সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজী-টেন্ডারবাজী, রাজধানীতে ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে আহত-নিহতের ঘটনাবলীর চিত্র তুলে ধরে নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার এসব ঘটনায় নির্বিকার। এগুলো প্রমাণ করে যে তারা দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ ও অযোগ্য। আমরা তাদের এই ব্যর্থতার নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করার আহ্বান জানাচ্ছি।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, তকদির হোসেন মো. জসিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আ’লীগের লোকজন বিরোধী নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে : বিএনপি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ