পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিতাসে অবৈধ সংযোগকে বৈধ করা, গ্রাহক বিল সময় মতো জমা না করা এবং গভীর রাতে সার্ভারে ঢুকে অবৈধ গ্রাহককে বৈধ করাসহ বিভিন্ন ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে তিতাসে। রাতের আধারে কোম্পানির সার্ভারে ১ হাজার ২৪৭টি সংযোগ এন্ট্রি দিয়ে বৈধ করার অভিযোগে ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মামলা করেছে তিতাস। দুর্নীতির ইনোভেটিভ আইডিয়ার জন্য অ্যাওয়ার্ড থাকলে তিতাস গ্যাসেই সবগুলো পেত বলে মনে করেছেন সাবেক একজন বোর্ড সদস্য।
জানা যায়, গভীর রাতে সার্ভারে ঢুকে অবৈধ গ্রাহককে বৈধ করা হয়েছে। রাতের আধারে কোম্পানির সার্ভারে এন্ট্রি দিয়ে বৈধ করার অভিযোগে ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মামলা করে তিতাস। প্রাথমিকভাবে এক রাতেই ১ হাজার ২৪৭টি সংযোগ বৈধ করে দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলাটি (৭ সেপ্টেম্বর ২০২০) দায়ের করা হয়। এসব কর্মকর্তারা হলেনÑ উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রতন চন্দ্র দে, ব্যবস্থাপক রকিব উদ্দিন সরকার, উপ-ব্যবস্থাপক রজব আলি, মো. রেজাউল করিম খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন জাবেদ, সিনিয়র নিরাপত্তা প্রহরী মো. মাসুদ রানা, আবুল কালাম আজাদ ও মাকসুদুল হক।
আবার এমন ঘটনা ঘটেছে গ্রাহকরা বিল জমা দিয়েছেন কিন্তু সেই বিল জমা হয়নি লেজারে। কিছু অসাধু কর্মকর্তা গ্রাহকদের এসব টাকা মেরে দিয়েছেন। আর ঘটনাটি ধরে পড়ে বকেয়ার দায়ে লাইন কাটতে গেলে। গ্রাহক তখন তাদের জমার রশিদ দেখান। এই ঘটনাটি ধরা পড়েছে গত জানুয়ারি মাসের দিকে।
এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, কত অবৈধ সংযোগ রয়েছে তার কোনো তথ্য নেই। গত এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখে যে উচ্ছেদ অভিযান করা হয়েছে তাতে আমরা জানতাম ৯টি গ্রাম। সেখানে হয়তো ভুল করে ইমামপুর বাঘাবন্দি গ্রামের নাম উঠে এসেছে। দুর্নীতির বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আপনারা দেখছেন করোনার মধ্যেও আমরা অনেক অভিযান পরিচালনা করছি। যারা দুর্নীতি করেছে তারা চাকরি হারাচ্ছেন। এতোদিন সকল অফিসারের জন্য সার্ভার উন্মুক্ত ছিল, এখন মাত্র দুইজনের এক্সেস থাকবে, আমার অনুমতি নিয়ে তবেই পোস্টিং দিতে পারবে। ২০১২ সালে অবৈধ গ্রাহকদের জমাকৃত ১০০ কোটি টাকার বিষয়ে তার জানা নেই।
২০১৯ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে তিতাস নিয়ে একটি সার্বিক অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে তিতাসের দুর্নীতির ২২টি খাত চিহ্নিত করে ১২ দফা সুপারিশ প্রদান করে। এতে বলা হয় অবৈধ চুলার জন্য বৈধ চুলার সমান টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করার তথ্যও পেয়েছে দুদক। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জিনজিরা, ফতুল্লা, সোনারগাঁ, নরসিংদী ও গাজীপুর এলাকায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৪৫৫টি অবৈধ চুলা বা সংযোগ চিহ্নিত করা হয়। প্রতি মাসে প্রতি চুলা বাবদ ৬৫০ টাকা হারে ওই গ্যাসের দাম হয় ৯২ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। কিন্তু উক্ত অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করে বিচ্ছিন্ন না করায় ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে দুদক মনে করছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১২ সালে আবার সংযোগ চালু হলেও ২০১৩ সালের শুরু করে তা ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পরে তা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সরকারের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই প্রতিবছর সংযোগের তথ্য উঠে এসেছে তাদেরই বার্ষিক প্রতিবেদনে। অনেকে মনে করেন, তিতাসের প্রতিবেদনে সামন্যই উঠে এসেছে। এর চেয়ে ঢের বেশি রয়েছে অবৈধ সংযোগ, যেগুলো ঘুষের বিনিময়ে সংযোগ দেয়া হয়েছে আর প্রতিমাসেই বিল আদায় করা হয়। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তিতাসের বোর্ড সভায় সাত লাখ গ্রাহকের সংযোগ বৈধ করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক ছিল ২৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯, যা ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ছিল ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৩। অর্থাৎ চার বছরে সংযোগ বেড়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬টি।
তিতাস অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রাহক পর্যায়ে অনুমোদনের কম, বেশি গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু সরবরাহের পরিমাপ করার জন্য ইভিসি (ইলেকট্রনিক ভলিউম কারেক্টর) করে না। ওই মিটারের মাধ্যমে প্রবাহিত গ্যাসের তাপ ও চাপ সংক্রান্ত তথ্যাদি সার্বক্ষণিকভাবে রেকর্ড হয়। এতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সঠিক হিসাব আসে। কিন্তু তিতাসের কর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ইভিসি বসান না অথবা ইচ্ছা করেই গরমিল করেন। তিতাসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে অর্থের বিনিময়ে শিল্প এলাকায় পোস্টিং নিয়ে আছেন, যার কারণে এরা খুব সহজেই সিন্ডিকেট গড়ে দুর্নীতি করেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দুদক থেকে বলা হয়, ওই বছর আবাসিক খাতে অনুমিত প্রবাহ ছিল ১০ হাজার ৩১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ৫৬৮ ঘনফুট। কিন্তু ব্যবহার হয়েছে ৮ হাজার ৮৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৯ ঘনফুট। অনুমিত সরবরাহ থেকে ১ হাজার ৪৭৭ কোটি ৯৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৬৯ ঘনফুট গ্যাস কম ব্যবহার হয়েছে, যার মূল্য ২৯২ কোটি ৯৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯২১ টাকা। তারপরও সিস্টেম লস দেখানো হয়েছে। অনুসন্ধানে বিভিন্ন শিল্পকারখানায় অবৈধ সংযোগ বা বাইপাস করে তা গৃহস্থালিতে সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়।
রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরে গ্যাস সরবরাহ করে আসছে তিতাস। আবাসিক গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৮ জন, বাণিজ্যিক গ্রাহক সংখ্যা ১২ হাজার ৭৫টি, সিএনজি ৩৯৬টি, ক্যাপটিভ পাওয়ার ১ হাজার ৭০১টি, শিল্প গ্রাহক রয়েছে ৫ হাজার ৩১৩ এবং ৩টি সার কারখানা ও ৪৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করছে। গ্যাস বিতরণের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটি এমন সব দুর্নীতি সামনে এসেছে যা পুরোপুরি নতুন ও কল্পনাতীত। বৈধ সংযোগ বন্ধ, তখন সংযোগ দেয়া হয়েছে, আবার সেসব গ্রাহকের আস্থা সৃষ্টি করার জন্য কাগজপত্র তুলে দেয়া হয় তাদের হাতে। যথারীতি সেসব গ্রাহক বিলও জমা করেন। ২০১২ সালে এ রকম পে-সিøপের মাধ্যমে ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকা জমা পড়ে তিতাসের আবাসিক গ্রাহকরা যেসব ব্যাংকে প্রতি মাসে গ্যাসের বিল জমা দেয়া হয়। সেই ব্যাংকগুলো থেকে ওই বাড়তি টাকার হিসাব কোম্পানির কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগে আসে। কিন্তু এই টাকা তিতাসের হিসাবে জমা হচ্ছে না (পোস্টিং না হওয়া) তাই বেকায়দায় পড়ে তিতাস। আর তখনই বিষয়টি সামনে চলে এলে তখন বিষয়টি নিয়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।