পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার পদত্যাগ দাবি করে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, (প্রধান বিচারপতি) খালেদা জিয়ার মুখপাত্র হয়ে বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। উনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।” অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় ও আদেশ গতকাল সোমবার বিকালে আপিল বিভাগে জমা দেওয়ার আগে সুপ্রিমকোর্টের মাজার গেইটের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে এসব মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল সকালে সুপিপ্রকোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়া প্রেস কনফারেন্স করা যাবে না।
প্রধান বিচারপতি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ নিয়ে কাজ করছেন মন্তব্য করে শামসুদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, “উনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন সরকার নাকি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে... এসব মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন মানুষের কাছে সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার জন্য, মানুষের কাছে এই সরকারের ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য। আমি মনে করি তার পদত্যাগ করা উচিৎ।”
আগের দিন রোববার তিনি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ‘সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী’ আচরণের অভিযোগ আনেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে চিঠি লিখে তার অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় ও আদেশ গ্রহণ করতে বলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন। পরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ওই চিঠির বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। প্রধান বিচারপতিকে তিনি লেখেন, “আমি ইতিপূর্বে আপনাকে অবহিত করেছি যে, আপনার এরূপ আচরণ সংবিধান, আইন ও প্রথাবিরোধী ও একই সাথে ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।”
এর কয়েক ঘণ্টা পর সুপ্রিম কোর্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রধান বিচারপতি আশা করেন যে সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মিডিয়াতে মামলার রায় ও আদেশ সংক্রান্ত কোনোরূপ বক্তব্য না দিয়ে তার নিকট যতগুলো অনিষ্পত্তিকৃত রায়ের মামলার ফাইল রয়েছে, তা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অফিসে অতি সত্বর ফেরত প্রদান করবেন, যাতে বিচারপ্রার্থীদের আর ভোগান্তি না হয়।”
অবসরে যাওয়ার আগে বিচারপতি শামসুদ্দিন যে বেঞ্চে ছিলেন, সেই বেঞ্চে তার পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতির কাছে গতকাল সোমবার নিজের লেখা রায় ও আদেশ পৌঁছে দেন তিনি। এরপরই শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বিচারপতি মো. ইমান আলী আমার লেখা ৬৫টি রায় ও আদেশ এবং এ সংক্রান্ত নথিপত্র গ্রহণ করেছেন। এরপর এসব রায়-আদেশ পরবর্তী জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার কাছে যাবে। প্রক্রিয়া অনুসারে এরপর রায় ও আদেশ চূড়ান্ত হয়ে তার সই, পরবর্তী বিচারপতির সই শেষে আমার কাছে চূড়ান্ত সইয়ের জন্য আসবে।”
শামসুদ্দিন চৌধুরী গতকাল আরো বলেন, ‘রোববার সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে আমার বিষয়ে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। আমার বক্তব্যকে টুইস্ট করা হয়েছে। আমি রোববার সংবাদ সম্মেলন করিনি।’ তবে অনেক ‘নতুন তথ্য’ নিয়ে সামনে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানান তিনি।
সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রধান বিচারপতির ‘মতে’ আপনার সাম্প্রতিক কার্যক্রমে বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘দেখেন, চিফ জাস্টিসতো নিজেই বলেছেন, তিনি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং সাকা চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে মিটিং করেছেন। এতে করে কি বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষণœ হচ্ছে না?’
গতকাল সোমবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অনুমতি ছাড়া প্রেস কনফারেন্স করা যাবে না। এরপর কোর্টের ভেতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলে মাজার গেটে বটগাছের নিচে তিনি কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত সুখবর, আমি আপনাদের রোববার বলেছি বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সাহেব কালকে সন্ধ্যায় উনি রায় গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন। এটা খুশির খবর। আমার হাতে লেখা রায় ওনারা গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন। এটা যদি প্রধান বিচারপতি না করতেন। তাহলে অনেক আগে রায় লেখা শেষ হয়ে যেতো।’ তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ফাইলগুলো তার কাছে যাবে। ওনার সাথে আমি আলাপ করেছি। উনি এটা গ্রহণ করবেন বেল আমাকে জানিয়েছেন। এখনি যাচ্ছি তার কাছে যাওয়ার জন্য।’ এরপরেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের ভিতরে প্রবেশ করে ১৫টি রায় ও ৭০টি আদেশের কপি জমা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যের জবাবে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রায় দিয়েছি এটা বলিনি, রায় নিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু উনি (বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব) নিতে অপারগ।’
গত বছর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যাওয়া এই বিচারক এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। আপিল বিভাগে থাকা অবস্থাতেই গতবছর সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, রায় লেখা শেষ না করায় তার পেনশন আটকে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায়ের আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আরেক বিচারকের কথোপকথনের একটি অডিও টেপ প্রকাশ হয় এবং এ বিষয়ে জনকণ্ঠে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ওই অডিও টেপের অপর কণ্ঠটি বিচারপতি শামসুদ্দিনের বলে সে সময় গণমাধ্যমে খবর আসে। সাকা চৌধুরীর রায়ের সময়ের সেই বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে গতকাল সোমবারও প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় বিভিন্ন মন্তব্য করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার একবছর পূর্তিতে গত ১৭ জানুয়ারি এক বাণীতে বিচারপতি এস কে সিনহা অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখাকে ‘সংবিধান পরিপন্থি’ বললে সাম্প্রতিক আলোচনার সূত্রপাত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।