Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিমানের এমডি পরিচয় কোটি টাকা আত্মসাৎ চাকরির প্রলোভনে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম


আসল নাম শামীম আহমেদ (৪৫)। কখনো পরিচয় দেন মোস্তফা মনির। কখনো তিনি মোশাররফ। তিনি কখনো পরিচয় দিতেন রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে, আবার কখনো তিনি এমডি। তিনি দাবি করেন, টাকা নিয়ে বিমানে চাকরি দিতে পারেন। তার বান্ধবীর নাম তানজীলা সুলতানা সমাপ্তি। তার বয়স ২৫ বছর। বিমানের কথিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। পরিচয় দিতেন বিমানের এয়ার হোস্টেস বা কেবিন ক্রু হিসেবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিমানবালার ৪ জনের চক্র মিলে বিমানে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করতেন তারা। হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

গত বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শামীম, তানজীলা ছাড়া গ্রেফতার বাকি দুইজন হলেনÑ বজলু রশিদ ও শরিফুল ইসলাম। গতকাল সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, শামীম নিজেকে বিমানের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আবার কখনো এমডি দাবি করেন। তিনি ও তার নেতৃত্বাধীন চক্র বিমানে চাকরি দেয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে ১৩-১৭ লাখ টাকা করে আত্মসাৎ করে চাকরি না দিয়ে প্রতারণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ ওমর ফারুক বলেন, চক্রের সদস্যরা বিমানের নিয়োগের সার্কুলার হওয়ার পর তাদের এলাকার লোকজনকে বিমানে চাকরি দেবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয়। তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা নিয়োগপ্রত্যাশীদের ভুয়া পরীক্ষা নেয় এবং তাদের সবাইকে ফেল করিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ফেল করাদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগের প্রতিশ্রæতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। বিমানের একটি বিভাগে সহকারী পরিচালকের চাকরির জন্য শামীমকে ২০১৯ সালে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছেন একজন ব্যক্তি। তিনি প্রতারিত হয়ে এ বিষয়ে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সিআইডি জানায়, দীর্ঘদিন আগে শামীম একটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। সেইসূত্রে বিমানবন্দরের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। সেখান থেকেই তিনি প্রতারণার কৌশলগুলো জেনে চাকরি ছেড়ে প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ফরমাল শার্ট, প্যান্ট, স্যুটসহ মোবাইল এবং ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বিমানে বিভিন্নজনকে চাকরি দেয়ার নামে প্রায় ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সিআইডির কাছে তথ্য রয়েছে।

তবে শামীম সিআইডির কাছে জানান, বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বেশ কয়েকজনকে বিমানের কেবিন ক্রু, এক্সিকিউটিভ অফিসার, সিগন্যাল ম্যান, চেকিং অফিসার, এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার পদে চাকরি দিয়েছে। তবে এবার তিনি নিয়োগের কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিমানের কথিত এয়ার হোস্টেজ তানজীলা সম্পর্কে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, তানজীলা নিজেকে একজন টিকেটিং অফিসার বলে দাবি করেন। তিনি কখনো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আবার কখনো রিজেন্ট এয়ারওয়েজের টিকেটিং অফিসার বলে দাবি করে।

তিনি শামীমের সঙ্গে যোগসাজশ করে তার এলাকার লোকজনকে চাকরি দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন। তানজীলা নিজেকে এয়ার হোস্টেস বুঝানোর জন্য তার ফেসবুক পেজে কেবিন ক্রু’র পোশাক পরে ছবি দিতেন। একবার তিনি নিয়োগপ্রত্যাশীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিমানে করে সৈয়দপুরেও যান। তানজীলা বিবাহিত নন। তাকে ঢাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে শামীমের সঙ্গে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার হওয়া তৃতীয়জন বজলুর রশিদ সেনাবাহিনীর সৈনিক হিসেবে যার্বের সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালে একটি ডাকাতির মামলায় তাকে চাকরিচ্যুত করে জেলে পাঠানো হয়। ৮ বছর জেল খেটে তিনি বের হয়ে এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যোগ দেন। প্রতারণা চক্রে বজলুর রশিদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বডিগার্ড দাবি করতেন। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের আভাস পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ