পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719816439](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৯৭৫-এর হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিদেশে জনমত গঠনের আহ্বান
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনি অভিযুক্ত অপরাধীদের প্রত্যার্পণের ব্যাপারে জনমত তৈরির জন্য কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কিভাবে একটি সভ্য দেশ অভিযুক্ত খুনিকে আশ্রয় দিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সামনে এই দাবি রেখে যাচ্ছি, যে দেশে আপনারা বসবাস করছেন, সেই দেশের জনপ্রতিনিধিদের চিঠি লিখুন এবং এই চেতনাজাগ্রত করুন কেন এসব দেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের আশ্রয় দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার সেন্টার মন্ট রয়েলে তাকে দেয়া এক সংবর্ধনায় এ কথা বলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কানাডা শাখা এই সংবর্ধনার আয়োজন করে। আওয়ামী লীগ কানাডা শাখার সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়া এতে সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রিন্স অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যতদূর আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর এক খুনি যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছে। একজন কানাডায়, দুইজন পাকিস্তানে এবং অপর দুইজন কোথায় আছে সন্ধান পাওয়া যায়নি, আমরা তাদের আটকের জন্য খুঁজছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারকে বলেছে, কেন তারা খুনিদের লালন করছে এবং আশ্রয় দিচ্ছে। তারা বলেছে, কানাডার সংবিধানে উল্লেখ আছে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের আদেশ থাকলে তাকে তার দেশে ফেরত পাঠাবে না, ‘এটি কি ধরনের কথা’ বলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, পিতা হারানোয় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বাংলাদেশের নাগরিক এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে। কেন হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা হচ্ছে।
কেন এই দেশগুলো হত্যাকা-ের মতো অপরাধে অভিযুক্তদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদি এই খুনিরা তাদের দেশের নাগরিক হতো তাহলে সেটি বিষয় হতো। যদি তারা হত্যাকারীদের আশ্রয় দিতে চায় তাহলে সব হত্যাকারী সেই দেশের আশ্রয় চাইবে। একথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, তারা কি তাহলে সকল খুনিদের আশ্রয় দেবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর অর্থ হলোÑ যে দেশে মৃত্যুদ-ের শাস্তির বিধান নেই, সেই দেশ হত্যাকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এ জন্য জনমত সৃষ্টিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সামনে আমি এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।
তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৬ সাল থেকে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাধার সম্মুখীন হয়েছে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধকালে যারা ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই ঘৃণ্য খুনিদের বিচার বন্ধের জন্য অনেক বড় জায়গা থেকে তিনি টেলিফোন পেয়েছেন। আমি তাদের বলেছি, আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন এবং এখানে আমাদের দেশের আইন রয়েছে এবং আইন অনুযায়ী রায় কার্যকর হবে।
মন্ট্রিয়লে শনিবার ব্যস্ততায় কাটালেন প্রধানমন্ত্রী :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফরের তৃতীয় দিন গত শনিবার ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। সকালেই তিনি যোগ দেন ৫ম রেপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স অব গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ) এর দ্বিতীয় কর্মদিবসের প্রথম অধিবেশনে। এছাড়াও দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ, সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগদান এবং মন্ট্রিয়লে আওয়ামী লীগের কানাডা শাখার আয়োজনে বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান।
আইসিএও সদরদফতরের অ্যাসেম্বলি হলে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মেরি ক্লড বিবো, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও কানাডার গভর্নর জেনারেল ডেভিন জনস্টন। সকালে সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ডিবাল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও গভর্নর জেনারেল যৌথভাবে এই ভোজসভার আয়োজন করেন। দিনের পরের ভাগে শেখ হাসিনা সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশ নেন। আর সন্ধ্যায় তার সম্মানে কানাডা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে ফিফথ রেপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স অব গ্লোবাল ফান্ডে (জিএফ) অংশগ্রহণের উদ্দেশে চারদিনের সরকারী সফর শেষে গতকাল রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন। সফরকালে ৭১তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল রোববার স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৪০ মিনিট) নিউইয়র্কের উদ্দেশে এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে মন্ট্রিয়লের পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী। নিউইর্য়ক সময় বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) লা গুয়ার্দিয়া বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। বিমানবন্দর থেকে বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন আবাসস্থল নিউইয়র্কের হোটেল ওয়াল্ডোর্ফ অস্টোরিয়াতে নিয়ে যাওয়া হবে।
যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছানোর পরদিনই ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদফতরে জাতিসংঘ সম্মেলনের একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে শরণার্থী ও অভিবাসীদের বিষয়ে বক্তৃতা করবেন। এ দিন তিনি ‘নিরাপদ, নিয়মিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ অভিবাসনের জন্য বৈশ্বিক চুক্তি: টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ সালের এজেন্ডা উপলব্ধি এবং অভিবাসীদের মানবাধিকারের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধা অর্জন’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর দিন ২০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কের উদ্বোধনী সেশনে অংশ নেবেন। পরে শেখ হাসিনা হোটেল মারিওট ইস্টসাইডে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক আসিয়ান লিডারদের এক সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ সম্মেলনের আয়োজক জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদফতরের ২ নম্বর কনফারেন্স রুমে জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ‘জনসেবা প্রদানে সৃজনশীলতা আনুপাতিক হারে বাড়ানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা’ বিষয়ক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বাংলাদেশ। এরপর প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন শরণার্থী বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত বিশ্ব নেতৃত্বের সম্মেলনে। ২১ সেপ্টেম্বর সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোভেন আয়োজিত ‘গ্লোবাল ডিল ইনিশিয়েটিভ অন ইনহেনচড সোশ্যাল ডায়লগ ফর ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এ দিন তিনি জাতিসংঘ সদরদফতরের ৮ নম্বর কনফারেন্স রুমে পানি বিষয়ে উচ্চ-পর্যায়ের পরিষদের বৈঠকে অংশ নেবেন। এরপর শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের হোটেল গ্র্যান্ড হায়াটে বাংলাদেশী কমিউনিটি আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ২২ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে পুরো সফর নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণের ফাঁকে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন।
২২ সেপ্টেম্বর তিনি ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে নিউইর্য়ক ছেড়ে যাবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসির ডালাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে এমিরেটস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দুবাই হয়ে বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।