Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঙ্গি অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশের সুযোগ নেই- অর্থমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জঙ্গি অর্থায়নে সম্পৃক্ত ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
গতকাল (সোমবার) দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে ঢাকা-৫ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১৫ সালের সংশোধনীসহ) অনুসারে ওই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নামে একটি পৃথক কেন্দ্রীয় সংস্থা রয়েছে। আইন অনুযায়ী উক্ত ইউনিট রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসমূহ থেকে নগদ লেনদেন রিপোর্ট (সিটিআর) এবং সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) সংগ্রহ করে বিশ্লেষণপূর্বক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ করে। প্রয়োজনে সরেজমিন পরিদর্শন করে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের সাথে জঙ্গি অর্থায়নের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে প্রেরণ করা হয়ে থাকে।
মুহিত বলেন, এই আইনের অধীন ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা এজেন্ট কর্তৃক চাকরিরত বা নিয়োগকৃত থাকা অবস্থায় কিংবা চাকরি বা নিয়োগজনিত চুক্তি অবসায়নের পর তৎকর্তৃক সংগৃহীত, প্রাপ্ত, আহরিত, জ্ঞাত কোনো তথ্য এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণ ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার বা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ আছে। এ পেক্ষাপটে, জঙ্গি অর্থায়নের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশের সুযোগ নেই।
নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরীর প্রশ্নোত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন কাজে বিভিন্ন দাতাদেশ বা সংস্থার সাথে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ সর্বমোট ১ হাজার ৪৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তার মধ্যে অনুদান বাবদ ১৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা এবং ঋণ বাবদ ১ হাজার ৩০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।
বিভিন্ন দাতা দেশ বা সংস্থা হতে একই সময়ে ডিসবার্সমেন্ট হয়েছে ১ হাজার ৫৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে অনুদান বাবদ ২৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ঋণ বাবদ ১ হাজার ২৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হয়েছে জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ আর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রাক্কলন করা হয়েছে গড়ে জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে মোট অনাদায়ী ঋণ হবে জিডিপির ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ। যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ আর বহিঃখাতে ঋণ হবে জিডিপির ১২ দশমিক ১ শতাংশ।
বেগম পিনু খানের প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। এর মধ্যে ১১ দশমিক ৫০ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করে থাকেন।
ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কল চার্জের বিপরীতে ১ হাজার ২৫৩ দশমিক ১৪ কোটি টাকা এবং সিম বিক্রয়ের উপরে ২৯১ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা মিলে মোট ১ হাজার ৫৪৪ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
মাদারীপুর-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২০০২-২০০৬ সালে মোট ১৯ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স আহরিত হয়েছিল। অপরদিকে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম ৫ বছর এবং দ্বিতীয় মেয়াদের দুই বছরসহ মোট সাত বছরে মোট প্রবাসী রেমিটেন্সের পরিমাণ ৯২ হাজার ১৫৯ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বেগম লুৎফা তাহেরের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের জনগণের কল্যাণে অর্থনীতিকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য বিগত মেয়াদে ‘রূপকল্প ২০২১’কে সামনে রেখে বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২১) প্রণয়ন করেছিল। সরকারের সফল অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ অব্যাহত রাখতে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৫-২০) গত ২০ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে অনুমোদন লাভ করে।
সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার মূল চালিকাশক্তি হবে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ। আগামী পাঁচ বছরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৪ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এটি বিনিয়োগের ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে ২২ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে (৯১ শতাংশ) এবং অবশিষ্ট ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন হবে বিদেশি উৎস হতে।
তিনি জানান, জুলাই ২০১৫ হতে জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৩১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। যার সিংহ ভাগ অর্থাৎ ২৮ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন হবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে। অবশিষ্ট ৩ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন হবে বহিঃসম্পদ থেকে।
মন্ত্রী বলেন, সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ বছরে সরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে ৭ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট বিনিয়োগের ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৬ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন হবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে এবং অবশিষ্ট ৮৭ হাজার কোটি টাকার অর্থায়ন হবে বহিঃসম্পদ হতে।
ফেনী-৩ আসনের রহিমউল্লাহর প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, অন্যান্য দেশে বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলের সাথে বাংলাদেশ ব্যাগেজ রুলের সামঞ্জস্য আনার লক্ষ্যে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেট শুল্কভাবে স্বর্ণালংকার আমদানির সীমা ২০০ গ্রাম থেকে হ্রাস করে ১০০ গ্রাম করা হয়। তবে বর্তমানে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা পাওয়ায় এটি পর্যালোচনা করা হবে।
‘উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ সরকারি প্রতিষ্ঠান’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান। যে লক্ষ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান রাখার প্রচলন শুরু হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (ডিবিবিএল) একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকার লভ্যাংশের একটি চেক অর্থমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন আলী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ডিবিবিএল প্রত্যেক বছর আমাদের ডিভিডেন্ড দেয়। সরকার প্রতিবছর বহু পয়সা আদায় করে ঠিকই, কিন্তু সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক যখন আমাদের ডিভিডেন্ড দেয় Ñ এটা মনে হয় একটু ব্যতিক্রমী ব্যাপার। কারণ আমাদের ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুব ভালো নয়। বিশেষ করে বড় বড় ব্যাংকের সমস্যা আছে। তাদের আমাদের পয়সা দিতে হয়। মন্ত্রী বলেন, আমরা ভাবছি, কবে সব সরকারি ব্যাংক এই অবস্থায় যাবে?
সরকারি ব্যাংক আমরা রেখেছি কেন? বহু আগে বলা হতো, কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার। দিস ওয়াজ দ্য ফিলোসফি অব পোস্ট ওয়ার ইউনাইটেড কিংডম আফটার নাইনটিন ফরটিফোর। তখন ছিল, এ ধরনের এক-আধটা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসাবে। হুইচ উড বি ফলোড। তাদের ট্র্যাডিশন, তাদের অ্যাক্টিভিটিস, তাদের কম্পেটিবিলিটি উইথ ল’ Ñ এগুলো অন্যের কাছে আদর্শ হবে। আই অনলি রিমেমবার দ্যাট ড্রিম। ইট নেভার অ্যাকচুয়ালি হ্যাপেন্ড। সার্বিকভাবে সরকারি খাত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও মন্ত্রী ডিবিবিএলের পাশাপাশি জনতা ব্যাংকেরও প্রশংসা করেন।
মন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে জনতা ব্যাংক এসেছিল, সেখানেও রেকর্ড ভালো। ডিবিবিএল সরকারি ব্যাংক, কিন্তু এর রেকর্ড সব সরকারি ব্যাংকের মধ্যে ভালো। এটা এক হিসাবে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি।
অনুষ্ঠানে ডিবিবিএল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ তুলে মুহিত বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠান একত্রিত করে এটা (ডিবিবিএল) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এগুলোকে বিশ্বব্যাংক সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে কেবল নয়, ভারত, কলম্বিয়া ইত্যাদি দেশেও করেছে।
চার্টার অনুসারে প্রথম থেকে বেসরকারি বিনিয়োগে অবদান রাখার সুযোগ বিশ্বব্যাংকের কম ছিল বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএফসি হয়েছে প্রায় ১০ বছর পর। বিশ্বব্যাংক দেখল, কেবল সরকারি খাত দিয়ে বিনিয়োগ, বিশেষ করে শিল্পায়ন হবে না। একটা উপায় বের করল। এজন্য ওই ব্যাংকগুলোর সৃষ্টি করে বেসরকারি খাতে পুনঃঋণ দিতে সেগুলোতে তারা ঋণ দিত।
এখন বিভিন্ন দেশে এমনকি উন্নত বিশ্বেও এই ধরনের ব্যাংক আছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, জার্মানিতেও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক আলাদা আছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বেসরকারি খাতের প্রমোশন। সেই কাজটাই তারা করছে। এই প্রফিট হোক, ডিভিডেন্ড যা হোক, সেটা বেসরকারি খাত থেকেই তারা আহরণ করেছেন। এটা আহরণ করতে ব্যবস্থাপকরা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গি অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশের সুযোগ নেই- অর্থমন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ