পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : জিরাল্ডোর ছোট ভাই সান্তা মারটা মার্কেটে এক দস্যুতার সময় মারা যাবার পর তিনি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন। ভাই’র মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তিনি ড্রাকুলা নামক একুন্ডার নেতৃত্বাধীন একটি প্রাইভেট সিকিউরিটি গ্রুপের সাথে চুক্তি করেন। চোর, পতিতা, সমকামী, অবিশ^াসী স্ত্রীলোক, ডাকিনী ও বামপন্থীদের নির্মূলের মাধ্যমে সমাজ পরিষ্কারের দীর্ঘ অভিযানের শুরুতে ৬ ব্যক্তি নিহত হয়।
ড্রাকুলা নিজে নিহত হওয়ার পর জিরাল্ডো নিজে তার কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় ম্যাডেলিন কার্টেল নিয়ন্ত্রিত লাভজনক কোকেন ব্যবসার সাথেও তিনি জড়িত হন। ফার্ক তার এলাকায় পা রাখতে চাইলে ও তাকে হত্যার জন্য তিনবার চেষ্টা চালালে তিনি তার তথাকথিত সিকিউরিটি গ্রুপকে কুখ্যাত মিলিশিয়া বাহিনীতে পরিণত করেন। এক ইসরাইলি ভাড়াটে সেনা তার মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণ দেয়। তারা তাদের প্রশিক্ষণ থেকে কি শিখেছে তা প্রমাণের জন্য বামপন্থী গেরিলা শক্ত ঘাঁটি বলে সন্দেহকৃত একটি কলা খামারের ইউনিয়ন শ্রমিকদের হত্যা করে। এ গণহত্যার হোতা হিসেবে জিরাল্ডোকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তিনি আমেরিকানদের রাডারের আওতায় নিয়ে আসেন। কূটনৈতিক পরিভাষায় তাকে ম্যাডেলিন কাটেলের শীর্ষস্থানীয় খুনী বলে চিহ্নিত করা হয়। তার গ্রেফতার থেকে প্রমাণিত হয় যে, কলম্বিয়া প্রশাসনের কর্মকর্তারা ডানপন্থীদের এ হত্যাকা-ের ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে ছিলেন না।
শেষ পর্যন্ত জিরাল্ডো দোষী সাব্যস্ত হন ও তার ২০ বছর কারাদ- হয়। এ পর্যায়ে বিচার এড়িয়ে তিনি প্রত্যন্ত এলাকা সিয়েরা নেভাদায় আত্মনির্বাসনে যান। সেখান থেকে তিনি দু’দশক ধরে তার এলাকা শাসন করেন। তার ২শ’ সদস্যের এক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গ্রুপ ছিল। অভিজাত সমাজ ও তার উপর নির্ভরশীলরা তাকে সমর্থন করত।
জুনিগা বলেন, তিনি গেরিলাদের মত ক্যাম্পে থাকতেন না। তিনি ছিলেন সমাজের অংশ, তাই সমাজের মধ্যেই থাকতেন। তাছাড়া লোকজনের বাড়িই ছিল তার বাড়ি, খামারগুলোই ছিল তার খামার। আমাদের ভাষায় অপরাধী হওয়া সত্ত্বেও তাকে সবাই অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখত। তা ভয়ের কারণে করত না, বরং তিনি এলাকায় যে শৃঙ্খলা বজায় রেখেছিলেন, সে জন্য যেহেতু সেখানে রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
হেনরিকুয়েজের বড় মেয়ে নাদিয়েঝদা যখন প্রথম জিরাল্ডোর সাথে সাক্ষাত করেন তাকে তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে দেখতে পান। তিনি তখন ছিলেন একজন তরুণী শিক্ষিকা। তার ক্ষুদে স্কুলের কক্ষগুলো স্থানীয় জেলেরা মাছ ধরার জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে ভরে ফেলে। এ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ জিরাল্ডো যেভাবে মীমাংসা করে দেন, নাদিয়েঝদা তার প্রশংসা করেন।
নাদিয়েঝদা তার চরিত্রের জঘন্য দিকটিরও পরিচয় পান। তার স্কুলের তিন ছাত্রীকে তার মা এল প্যাট্রনের হাত থেকে বাঁচাতে দূরে পাঠিয়ে দেয়ার পর তিনি তাদের হারান। নাদিয়েঝদা বলেন, এক সময় জিরাল্ডো বালিকাদের ধর্ষণ করতে শুরু করেছিলেন।
কলম্বিয়ার এক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা বলেন, এক সামন্ত প্রভুর মত জিরাল্ডো এলাকার সকল বালিকাকে তার উপভোগের বস্তু মনে করতেন। লোকজন প্রাণে বাঁচতে তাদের মেয়েদের এনে তার কাছে দিত অথবা তাদের সাথে তার যৌন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করত। কারণ ছিল এটাই যে প্রধান ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক মানে নিরাপত্তা নিশ্চিত হত।
কলম্বিয়ার সরকারী কৌঁসুলিরা বালিকা ও নারীদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের তথ্যানুসন্ধান শুরু করেন। তিনি ২৪টি বালিকার মায়েদের কথা স্বীকার করেন। কৌঁসুলিরা জিরাল্ডোকে আধা সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে বৃহত্তম যৌনদানব হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
হিউমানাস কলম্বিয়া নামের একটি নারীবাদী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ১৩ জন অপ্রাপ্ত বয়স্কা বালিকা জিরাল্ডো কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়ে সন্তানের জন্ম দেয়। তাদের মধ্যে ৯ জনের বয়স ছিল ১৪ বছরের নীচে। আবার কিছু শিশু ছিল যারা গর্ভবতী হওয়ার যোগ্যও ছিল না। যেমন তার এক পাচকের ৯ বছর বয়স্কা শিশু কন্যা। জিরাল্ডো শিশুটিকে পুতুল কিনে দিতেন ও ভয় দেখাতেন যে সে তার মাকে এ কথা বলে দিলে মাকে মেরে ফেলা হবে।
জুলিও হেনরিকুয়েজের নিখোঁজের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রচ- বাধার শিকার হন। পুলিশের এক রিপোর্টে বলা হয়, সেখানে ছিল আইনের নীরবতা। হেনরিকুয়েজের স্ত্রী ও মেয়ে তিনি অপহৃত হয়েছেন বলে ফোনে জানতে পেরে গ্রামে ছুটে গিয়ে একই ভীতির সম্মুখীন হন। তাদের বলা হয়, এ নিয়ে কথা বলবেন না। এটা তার মেয়ে নাদিয়েঝদাকে ভীষণভাবে ক্রুদ্ধ করে। ৪২ বছর বয়স্কা নাদিয়েঝদা বর্তমানে মানবাধিকার আইনজীবী ও সাহসী নারী। তিনি বোগোটায় এক সাক্ষাতকারে বলেন, তারা একদিন আমাকে হত্যা করবে। তবে সে জন্য আমি ভীত নই।
তিনি বলেন, তার বাবা ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ পরিবেশবিদ, এ অঞ্চলকে মাদক ব্যবসা থেকে মুক্ত করতে কৃষক ও জেলেদের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করতেন। তার বিশাল সম্পত্তিতে তিনি একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা প্রতিষ্ঠা করেন, সেখানে দেশীয় বৃক্ষ রোপণ করছিলেন এবং তার অনুমতি ছাড়া চাষ করা মারিজুয়ানা ও কোকা উৎপাদন করতেন।
জিরাল্ডো কলম্বিয়ায় এক শুনানিতে হেনরিকুয়েজের নিখোঁজের ব্যাপারে তার সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন, তবে লোকজনকে নির্দেশ দেয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।
হেনরিকুয়েজ এম-১৯ গেরিলা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তবে অপহৃত হওয়ার ১৭ বছর আগে তিনি ক্ষমা লাভ করেন। তিনি মাদার আর্থ নামে একটি বেসরকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ জন্য এক সাবেক আধা সামরিক সৈন্য কারমেলো সিয়েরার হুমকির শিকার হন।
কারমেলো বলেন, হেনরিকুয়েজ চাষীদের যা বোঝানের চেষ্টা করছিলেন জিরাল্ডো তার সাথে একমত ছিলেন না, কারণ তিনি কোকার চাষ করতেন। তার প্রতি হুমকি সৃষ্টি যে কোনো লোককে হত্যার জন্য যথেষ্ট ছিল। মাফিয়ারা কাউকে ক্ষমা করে না।
সিয়েরা বলেন, জিরাল্ডো হেনরিকুয়েজকে তার ছেলে এল গ্রিলোকে পাঠান এ হুমকি দিতে যে হয় শহর ছাড় নইলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ কর। কিন্তু তিনি তাতে কান দেননি। তারপর তাকে অপহরণ করে হত্যার জন্য জিরাল্ডোর মিলিশিয়াদের মধ্য থেকে সাতজনকে পাঠানো হয়।
কারমেলো সিয়েরা তার সাক্ষ্যে বলেন, আমি সত্যি বলছি, তার কি ঘটেছে আমি জানি না। তাকে কি গলা কেটে হত্যা করা হয় নাকি কেটে টুকরো টুকরো করা হয় তা আমি জানি না। আমি জানি না কিভাবে তিনি মারা গেছেন বা কোথায় তাকে কবর দেয়া হয়েছে।
আট মাস পর জিরাল্ডোর মাদক ব্যবসা তদন্তকারী মাদক বিরোধী এজেন্টরা পর্যটক ও এক হোটেল কর্মচারীর সাথে এক সমুদ্রতীরস্থ হোটেলে নিহত হন। এ ঘটনায় এক বিরাট মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হয় যার পরিণতিতে দেখা দেয় আধা সামরিক বাহিনীগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী ক্ষমতার লড়াই। শেষ পর্যন্ত জিরাল্ডোর রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে কাবু করে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে আরেক যুদ্ধবাজ রডরিগো টোভার লুপো।
২০০৪ সালে জিরাল্ডো ও টোভার পুপোকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী কোকেইন উৎপাদন ও তা বিতরণের ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করা হয়।
২০০৬ সালে জিরাল্ডো ও তার এক হাজারেরও বেশী যোদ্ধা আধা সামরিক শান্তি প্রক্রিয়ায় তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে। তাদের মধ্যে ৫৯৭ জন ৭৩ হাজার ৪শ’ রাউন্ড গুলি জমা দেয়।
পরের বছর জিরাল্ডোর আইনজীবীর দেয়া তথ্য অনুসারে কর্তৃপক্ষ একটি গোপন কবর থেকে হেনরিকুয়েজের গলিত লাশ উদ্ধার করে। এ সময় মায়ের সাথে মেয়ে নাদিয়েঝদাও উপস্থিত ছিলেন।
৮ সেপ্টেম্বর মিসেস হেনরিকুয়েজ আদালতে দাখিলকৃত এক বিবৃতিতে বলেন, সিয়েরা নেভাদার একটি পাহাড়ি কবরে আমরা যেভাবে তাকে পেয়েছি সেভাবে তাকে পাওয়ার কথা কখনো ভাবিনি। তার দু’হাত পিছনে বাঁধা ছিল। তার মাথার পিছনে দু’টি গুলি করা হয়েছিল। তার গায়ে যে কাপড় ছিল তা তার ছিল না। পায়ের এক পাটি জুতাও অনুপস্থিত ছিল। একটি পা ছিল না, ছিল না মুখের কিছু অংশ। সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।