পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শেখ জামাল : অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে শ্রম আদালত। বাথরুমের দুর্গন্ধ ও ময়লা-আবর্জনার মধ্যেও বিচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ভাঙাচোরা চেয়ার-টেবিল দিয়ে চলছে এ আদালত। বাথরুমের দুর্গন্ধে আদালত চলাকালে নাক চেপে বসে কোনোমতে সময়টি পার করান বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রম আদালতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও নেই। এছাড়া আইনজীবীদের আদালতে বসার মতো অবকাঠামোর অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ তিন আদালতের আইনজীবীরা। শ্রম আদালতের দিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
সরেজমিনে গিয়ে রোববার দেখা গেছে, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রম আদালতের দরজা বরাবর অপরপাশে বাথরুম রয়েছে। বাথরুমে ময়লা-আবর্জনায় স্তূপ পড়ে আছে। বাথরুমে ঢুকতেই আদালতের দরজার মুখে ভাঙা চেয়ার-টেবিলের স্তূপ দেখা গেছে। এর পাশেই মামলার নথিপত্র ও ছেঁড়া কাগজের টুকরাও পড়ে আছে। মাসের পর মাস গেলেও পরিষ্কার করা হচ্ছে না বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এছাড়া আদালতের পাশে রেকর্ড রুমে মামলার নথিপত্র ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর রাজউক এভিনিউস্থ ঢাকার তিনটি আদালতের দুটিতে কোনো রেজিস্ট্রার নেই। শুধু একটিতে আছেন রেজিস্ট্রার। একটিতে পরে একজন নামেমাত্র ভারপ্রাপ্ত করা হয়েছে।
শ্রম আদালতের আইনজীবী এস সেনগুপ্ত ইনকিলাবকে বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রম আদালত জেলা জজ পর্যায়ের আদালত। জেলা জজ আদালতগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে সরকার। আদালত কক্ষগুলোও বড় বড় করেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে জেলা আদালত। অথচ শ্রম আদালত কক্ষগুলো ছোট ছোট রয়েছে। আইনজীবীরা বসার জায়গাও পাচ্ছে না। এছাড়াও এই আদালতে শ্রমিকপক্ষ, মালিকপক্ষ, আইনজীবী ও বিচারকরা বাথরুমের দুর্গন্ধে বসতে পারে না। এই আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা প্র্যাকটিস করেন। শ্রম আদালতকে সরকারের মূল্যায়ন করা উচিত। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আদালত চলতে পারে না।
শ্রম আদালত আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো, সেলিম আহসান খান ইনকিলাবকে বলেন, এই আদালতে যারা আসে তারা তো মানুষ। এই আদালতগুলো ঘুরে দেখেন মানুষ কিভাবে এই আদালতে বসে বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। শ্রমিকরা আসে এই আদালতে। তারাতো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রাখতে হবে এটা বুঝে না। এজন্য বার বার পরিস্কার রাখা দরকার বাথরুম। আদালতে পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা তাও পরিস্কার করা হয় না। মাঝে মাঝে করে তাতে তো হয় না। কিছু কিছু বাথরুম আবারও বন্ধও রাখা হয়। এছাড়াও এই আদালতে কল-কারখানা, ইন্ডাস্ট্রিজসহ বড় বড় কোম্পানীর মালিকরা আসেন হাজিরা দিতে। অথচ এই আদালতের ওপর কেউ নজর দিচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আইনজীবী জানান, এই আদালতে কিছু অনিয়মও আছে। লিফটম্যান থেকে শুরু করে সবাই সিন্ডেকেটের সদস্য। মালিকপক্ষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মামলার নথিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে আসে। মালিকদের আদালতে আসতে হয় না। এই আদালতে আইনের বাস্তবায়নও হচ্ছে না। শ্রম আইনে বলা আছে, ৬০ দিনে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে হবে। অথচ মামলা ফাইল করলেই প্রথম তারিখটি ফেলানো হয় ৬০ দিন পর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে তিনটি আদালতের একটিতে র্দীঘ দিন বিচারকও ছিলেন না। পরবর্তীতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে করে শ্রম আদালতে মামলাগুলো যথাযথ সময়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন শ্রম আদালতের আসা বিচারপ্রার্থীরা। তাদের মতে, শ্রম আদালতে যারা জনবল কম। ফলে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হার কম দায়ের বেশি। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন জানালেন, যেভাবে শ্রম আইন করা হয়েছে এতে করে শ্রমিকরা তেমন সুবিধা পায় না। এই আইনটা আধুনিক করা প্রয়োজন।
ঢাকায় ৩টি, চট্টগ্রামে ১টি, খুলনায় ১টি, রাজশাহীতে ১টি করে শ্রম আদালত রয়েছে। এসবের মধ্যে ঢাকায় তিনটিতে মামলা সবচেয়ে বেশি।
শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের গত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের সাতটি শ্রত আদালতে মামলার সংখ্যা ১৬ হাজার ৯৯০টি। এ মধ্যে আপিল ট্রাইব্যুনালে ৫২৯টি। ১ম শ্রম আদালতে ৩ হাজার ৯৪৮। ২য় শ্রম আদালতে ৪হাজার ৫১৯, ৩য় শ্রম আদালতে ৫হাজার ৩৬৫। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ১ম আদালতে ৯০৮, ২য় শ্রম আদালতে ৫০৮। এছাড়াও খুলনা ৭২১, রাজশাহী শ্রম আদালতে ৪৫৪টি মামলা রয়েছে। এতে দেখা যায়, ঢাকার ৩টি আদালতে ৬৫৪টি মামলা দায়ের হয়। ঢাকার বাইরে চারটি আদালতে ১২২টি মামলা দায়ের হয়। নিষ্পত্তির হার গত বছরের চেয়ে বাড়ছে। একতরফাভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৬৩টি। দোতরফাভাবে নিষ্পত্তি সংখ্যা ২২৬টি। সর্বমোট ৭৮৯টি। এ বিষয়ে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামছুল হুদা ইনকিলাবকে বলেন, গত বছরে চেয়ে মামলা নিষ্পত্তি বাড়ছে শ্রম আদালতে। দেশের সাতটি শ্রম আদালতে হিসাবে দেখা যায়, শ্রম আপিল মামলা নেই বলেও চলে। তিনি আরো বলেন, শ্রম আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। কারন বর্তমান যে আইনে এই আইনে শ্রমিকরা তেমন সুবিধা পাচ্ছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকবার এটা সংশোধন করা উদ্যোগ নিয়ে কোন কাজ হয়নি। তিনি বলেন, ঢাকা শ্রম আদালতে একটু বেশি মামলা। সেখানে আবার জনবলও কম। আইন মন্ত্রণালয়ে বার বার সুপারিশ পাঠিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।