পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে গিয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃক নকল ওষুধ প্রয়োগে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর, চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ এস এম জাকারিয়া। স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসায় এ ধরনের অনিয়মের কারণ জানতে চাইলে তারা ডা. জাকারিয়ার সঙ্গে আলোচনায় অপারগতা প্রকাশ করেন। এর প্রতিকার চেয়ে গত ২১ জানুয়ারি ডা. জাকারিয়া সরকারের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কউন্সিল (বিএমডিসি) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথ্যারাপিতে নকল ওষুধ বিক্রি ও প্রয়োগের প্রতিকার চেয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
অভিযোগ পত্রে দেখা যায়, ডা. এ এস এম জাকারিয়া কোলানজিও কার্সিনোমা নামক এক ধরনের লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত। এ সংক্রান্ত চিকিৎসার জন্য তিনি যথাক্রমে গত বছরের ২৭ অক্টোবর, ৩ নভেম্বর, ১৮ নভেম্বর, ২৫ নভেম্বর, ১০ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে কেমোথ্যারাপি চিকিৎসা নিতে যান। এই চিকিৎসায় তিনি ফ্রান্স বা ইউএএ’র তৈরি লিলি কোম্পানীর জেমজার ওষুধটি ব্যবহার করে থাকেন। উক্ত ছয় দিনের মধ্যে প্রথম ৪ দিনে তিনি নিজেই সরাসরি কোম্পানী থেকে ওষুধ কিনে হাসপাতালে গিয়ে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করেন। কিন্তু স্কয়ার হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আশ্বাসে ১০ এবং ১৭ ডিসেম্বর হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে উক্ত ওষুধটি কেনেন এবং শরীরে প্রয়োগ করেন। এরপর তিনি নিজেই এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন। এমনকি স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃক এই নকল ওষুধ প্রয়োগের পর তার শরীরের ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে যায় এবং অস্থিমজ্জাকে উদ্দীপ্ত করে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোন ক্যান্সার রোগী কেমোথ্যারাপি গ্রহণের পর তার শরীরের ওজন কমবে। এছাড়া রক্তের শ্বেত রক্ত কনিকা কমবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, কেমোথ্যারাপিতে সাইটো টক্সিক ড্রাগ ব্যবহƒত হয়। যা সাধারণত ক্যান্সার আক্রান্ত কোষের উপর কার্যকর থাকে এবং একই সাথে শরীরের অন্যান্য সুস্থ কোষ বিশেষ করে শ্বেত কনিকার উপর সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করে। যা রক্ত পরীক্ষায় পরিলক্ষিত হয়। এর বিপরিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে থাকার পরিবর্তে বেড়ে যায়।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)’র যুগ্ম সম্পাদক এবং বিএমএ’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য প্রফেসর জাকারিয়া বলেন, ওষুধ গ্রহণের পর শরীরের সম্পূর্ণ বিপরিত প্রতিক্রিয়া অনুভব করায় তিনি বিভিন্ন ধরনের রক্তের পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
পরীক্ষার ফল থেকে দেখা যায়, দ্বিতীয় সাইকেল কেমোথ্যারাপি গ্রহণের পর ৮ ডিসেম্বর তার রক্তে সিএ ১৯৯ লেভেল-এর মাত্রা ছিল ১২৯ এমএল। কিন্তু তৃতীয় সাইকেল কেমোথ্যারাপি গ্রহণের পর রক্তে এর মাত্রা হয় ১৮৪ এমএল।
একইভাবে দ্বিতীয় সাইকেল কেমোথ্যারাপি গ্রহণের পর রক্তে শ্বেত কনিকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পেলেও তৃতীয় সাইকেল গ্রহণের পর তা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়।
প্রফেসর ডা. জাকারিয়া বলেন, রক্ত পরীক্ষার ফলাফল দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শরাণাপণ্য হলে তারা অভিযুক্তের সঙ্গে আলোচনায় অনীহা প্রকাশ করেন। এমনকি হাসপাতালের পরিচালক ও সার্জারি বিভাগের কনসালট্যান্ট প্রফেসর সানোয়ার হোসেনের কাছে গেলে তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, তার এ বিষয়ে কিছু করার নেই বলে জানান।
এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালে সরাসরি যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কারো সাথে দেখা করার বা মতামত জানার সুযোগ পাওয়া যায়নি। তবে মোবাইল ফোনে পরিচালক ও কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। এছাড়া এখন তিনি পরিচালকের দায়িত্বে নেই বলেও জানান। ওই সময়ে পরিচালক ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানলেও এ বিষয়ে একজন কনসালট্যান্ট ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বিষয়টি নিয়ে বর্তমান পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
উক্ত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, অভিযোগ তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ওপরই সব কিছু নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে স্কয়ার হাসপাতাল দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. জেড এইচ বসুনিয়া বলেন, ডা. জাকারিয়ার একটি অভিযোগ তারা পেয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে স্কয়ার হাসপাতালকে অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা তাদের নেই। তবে তারা অভিযোগ পর্যালোচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতালকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করবেন।
এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সূত্রে যোগাযোগ করে জানা গেছে, নির্দিষ্ট ওষুধটি ইন্টারন্যাশনাল বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান আমদানী করে থাকে। তারাই বিভিন্ন হাসপাতাল বা দোকানে এটি সরবরাহ করে। স্কয়ার হাসপাতাল তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ওষুধ নিলেও গত জুনের পর থেকে আর কোন ওষুধ তারা নেয়নি। এদিকে অভিযোগ পাওয়ার পরে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সহকারী পরিচলক আইয়ুব হোসেন, উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন এবং ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক গোলাম কিবরিয়ার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ইতিমধ্যে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সকল দলিলাদি সংগ্রহ করেছে এবং যাচাই-বাছাই করছে। এক্ষেত্রে প্রতিবেদন প্রকাশে আরো এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।