পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের ফলে পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয়ে হুমকির মুখে দেশের জীববৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দূষণেও হুমকির মুখে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য। একদিকে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, ফণি, বুলবুল ও আম্পানের তাণ্ডব। অন্যদিকে অবাধে বন উজাড়, বনের পাশে ইটভাট নির্মাণ, বনের ভেতর রেল-সড়কপথ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অন্যান্য অনেক প্রাণীর জীবন বিপন্ন প্রায়। এ ছাড়া নদীর মুমূর্ষুতাও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ। এ অবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। বিশ্ববাসীকে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতন করতেই জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ২২ মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে। বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবসের ধারণটির সূচনা হয় ১৯৯২ সালে।
জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মায়ের মতো বুক পেতে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করছে সুন্দরবন। আজ মনুষ্যসৃষ্ট নানা দূষণে হুমকির মুখে সুন্দরবনের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য। আশপাশের নদীতে একের পর এক কয়লা ও তেলবাহী জাহাজ ডুবছে। বড় বন্যায় সুন্দরবনের নদীগুলোতে লবণ পানির পরিমাণ বাড়ছে। এতে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ইরাবতী ও গোলাপি ডলফিন। এক সময় রাত-দিনে ছয়বার রূপ বদল করত সুন্দরবন। এখন সেদৃশ্যের দেখা মেলে না। করোনায় নদী আর সমুদ্রতীরে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় ডলফিনের চলাচল দৃশ্যমান হয় কক্সবাজার ও সুন্দরবন এলাকায়। ডলফিনের লাফালাফি দেখে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। কিন্তু সাগরতীরে এসে মারা পড়ে অনেক বিরল ডলফিন। বৈরী আবহাওয়া ও মানুষের অত্যাচারে গভীর সাগরে ফিরে যাচ্ছে ডলফিন।
গবেষকরা বলছেন, সুন্দরবনের সোয়াচ অব নো-গ্রাউন্ডে রয়েছে তিমি, ডলফিন, হাঙ্গরসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য। সুন্দরবন থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সাবমেরিন ক্যানিয়ন বা সায়াচ অব নো-গ্রাউন্ডকে বলা হয় ডলফিনের স্বর্গ। সুন্দরবনে তিন ধরনের ডলফিন ও এক প্রজাতির পাখনাবিহীন শুশুক পাওয়া যায়। সম্প্রতি কয়েকটি মৃত ডলফিন উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে বন্যায় লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণেই ডলফিনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুন্দরবনের মধ্যে নদীগুলোর পানির উচ্চতা বাড়ছে বছরে তিন থেকে আট মিলিমিটার। ফলে জোয়ারের সময় বনভূমি ডুবে সংকুচিত হচ্ছে বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে নদীর পানির লবণাক্ততা বাড়ছে। এতে কমে আসছে বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে হিমবাহ ও মেরু অঞ্চলের বরফ গলার কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে সুন্দরবনের প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এলাকা লবণপানিতে ডুবে থাকে। পানিতে ডুবে গেছে ছোট ছোট কয়েকটি দ্বীপ। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে বিপন্ন ইরাবতী ও গোলাপি ডলফিন।
বন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন নানা ধরনের প্রাণীবৈচিত্র্যে অনন্য। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল হলো সুন্দরবন। সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, রেসাস বানর, বনবিড়াল, সজারু, উদবিড়াল এবং বন্য শূকর। প্রায় ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় সদস্য মোহনার কুমির। এদের সংখ্যা প্রায় ২০০। সাপের মধ্যে রাজগোখরা, অজগর, কেউটে উল্লেখযোগ্য। অমেরুদন্ডী প্রাণীর মধ্যে কতিপয় মোলাস্কা এবং ক্রাসটেসিয়ান গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যসম্পদ হিসেবে বিবেচিত। প্রজাতিগুলোর মধ্যে তালিকাবদ্ধ হয়েছে প্রায় ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, কয়েক প্রজাতির শামুক এবং ঝিনুক। সুন্দরবনে বসবাসকারী অধিকাংশ পাখিই স্থানীয় বা আবাসিক। প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখি পরিযায়ী এবং এদের অধিকাংশই হাঁস জাতীয়। সুন্দরবনের কীটপতঙ্গের বৈচিত্র্যও সীমাহীন। সর্বশেষ জরিপ মোতাবেক সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ, এক থেকে দেড় লাখ চিত্রা হরিণ, ২০ হাজার বানর রয়েছে।
জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। কিন্তু প্রভাবশালীদের বন দখল, অবাধে বৃক্ষনিধন, বনের ভেতর রেল-সড়ক পথ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই উদ্যানের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক সীমানা ঘেঁষে লামার ফাঁসিয়াখালীর বনাঞ্চলের ভেতরে ৮টি অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের কাঠ। পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়ছে এলাকায়। এতে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও সাফারি পার্কের গাছপালা। সাফারি পার্ক ও বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বনাঞ্চলের বন্যহাতি ও বন্য পশুপাখি পার্কের বাইরের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যের অভাবে বনাঞ্চলের বন্যহাতি মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ক্ষেত্রে নদীর মুমূর্ষুতা বা দূষণও একটি বড় কারণ। অপরিকল্পিতভাবে নদীতে বাঁধ দেয়া ও দূষণের মাধ্যমে এদেশের অসংখ্য নদী ধুঁকে ধুঁকে মারা পড়ছে। এক সময়ে বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো নদী ছিল। দখলজনিত কারণে দেশের ১৫৮টি নদী এখন রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। ১৭টি নদী একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অন্তত ৮টির অবস্থা এখন বিলুপ্তির পথে। সারা দেশে এখন মাত্র শ’খানেক নদী আছে যেগুলো দিয়ে নৌচলাচল করতে পারে।
ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যাসহ আশপাশের নদ-নদীগুলোর অবস্থা করুণ। এসব নদীতে মাছ বা অন্যান্য প্রাণীর বেঁচে থাকা দুষ্কর। বুড়িগঙ্গার দূষিত পানি চাঁদপুরে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বুড়িগঙ্গার দূষিত ও দুর্গন্ধ্যময় পানি আজ এ মিঠা পানির সাথে মিশে দূষিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে পৃথিবীর বিখ্যাত ইলিশ মাছ মেঘনা ছেড়ে পালাতে পারে। এর সাথে অন্যান্য সুস্বাদু মাছ ও প্রাণিজসম্পদ হারাতে হবে। এর পানি কৃষিকাজে ব্যবহার অযোগ্য বলে বিবেচ্য হবে।
ভারতের ফারাক্কার বাঁধের ফলে এক সময়ের প্রমত্তা যমুনা, তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের অনেক নদী মৃত্যুর মুখে। এ দিকে ভারত যদি টিপাইমুখ বাঁধ বেঁধে ফেলে, তাহলে মেঘনা নদীর অস্তিত্ব ভয়াবহ হুমকিতে পড়বে। ফলে ইলিশসহ সকল প্রকার মৎস্যসম্পদ ধ্বংসের মুখে পড়বে। কৃষি ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পতিত হবে।
জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত আহরণ, জলাভূমি ভরাট, নদীর নাব্যতা হ্রাস, কৃষিতে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার ও নগরায়নকে দায়ী করা হয়। এ ছাড়া ইট-ভাটা তৈরি, অপরিকল্পিতভাবে মোটরযান বৃদ্ধি, শিল্প-কারখানার বর্জ্য নিক্ষেপের মতো কারণও কম দায়ী নয়। এসবই জীববৈচিত্র্যকে হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।