পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য আজ থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় সব ধরণের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গতকাল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে চলতি বছর দেশের উপকূলীয় ১৪টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৫টি জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডে ১৬ হাজার ৭২১.৩২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সমুদ্রে নৌযান দিয়ে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা চেয়ে যথাক্রমে জননিরাপত্তা ও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মৎস্য অধিদফতর কন্ট্রোল রুম চালু করেছে এবং বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে তিনটি বিভাগীয় মনিটরিং টিম গঠন করেছে।
এদিকে, দীর্ঘদিন যাবৎ উপকূলীয় এলাকায় নোনাপানি বিদ্যমান থাকায় মৎস্য সঙ্কটে অভাব অনটনে দিশেহারা জেলে পরিবার। খাদ্য সহায়তা হিসেবে জেলেদের দেয়া হচ্ছে চাল। করোনার কারণে বিকল্প কোন কর্মসংস্থান না থাকায় শুধু চাল নয়, জেলেরা দাবি করছেন আর্থিক সহায়তা। অসংখ্য জেলে এখনো নিবন্ধনের তালিকায় না আসায় বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সহায়তা থেকে। মানবেতর জীবনযাপন করছে সহায়তাবঞ্চিত জেলে পরিবারগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিকরা পাচ্ছেন না ঋণ সুবিধা। বরাবরের মতো এবারও ট্রলার মালিক ও জেলেদের অভিযোগ, ভারত বাংলাদেশ একই সময় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিগত সময়ের মতো বাংলাদেশের জল সীমানায় ঢুকে মাছ শিকার করে নিয়ে যায় ভারতীয়রা।
বরগুনার পাথরঘাটায় বলেশ্বর থেকে বিষখালী নদীতে যাওয়ার খাল। ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মৎস্য শিকার নিষেধাজ্ঞা থাকায় খালের দু’পাড়ে শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা হয়েছে। সমুদ্রগামী জেলেরা হয়ে পড়েছে বেকার। এমনিতেই করোনাকাল, মাথায় ঋণের বোঝা, রোজগারে টানাপোড়েন, কিভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাবে সেই হতাশার ছাপ জেলেদের চোখমুখে। জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরা হয় ইলিশ মৌসুম কিন্তু মৌসুমের অর্ধেক সময় আটকে যায় নিষেধাজ্ঞায়।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার অর্ধশতাধিক জেলে পাড়ায় আট হাজার ২২৭টি জেলে পরিবারের ৩৭ হাজার ২২ জন সদস্য রয়েছে। এসময়ে উপকূলীয় এলাকার জেলেদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহায়তার স্বল্প পরিমাণের চাল প্রদানের বিষয়টি খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছেন জেলেরা। জেলেদের অধিকাংশের নিবন্ধন না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে। দীর্ঘ কর্মহীনতায় অনিবন্ধিত জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।
বিভিন্ন মৎস্য পল্লী সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপকূলীয় এলাকার সাগর ও নদ-নদী ঘেষা জনপদের বেশিরভাগ মানুষ জেলে। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশসহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, বাঁধাহীন প্রজননের জন্য অনেক জেলে নৌকা ডাঙায় তুলে রেখেছেন। বিভিন্ন ঘাটে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দকৃত চাল জেলেরা সময়মত পাচ্ছেন না। যখন চাল পাচ্ছেন তখন জেলেদের কোনো উপকার হচ্ছে না। ফলে জেলেরা বাধ্য হয়ে নদীতে নামছেন মাছ শিকারে। এমন দুর্দশার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জেলেদের উৎসাহিত করছে সাগরে মাছ শিকার করতে। ফলে পরিবারের খাদ্যের যোগান দিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে মৎস্য শিকারে সমুদ্র যাচ্ছে অনেক জেলে। এতে আইনের বেড়াজালে বন্দি হচ্ছেন অনেক জেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। আবার অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের সীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে ইলিশ মাছ শিকার করে। তারা বাংলাদেশী পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রক্ষার জন্য অবরোধ দিলেও ভারতীয় জেলেরা তা না মেনে ইলিশ শিকারে নেমে পড়েন।
পাথরঘাটার নিজলাঠিমারা গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান বলেন, মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোন কাজ জানা নেই জেলেদের। তাছাড়া মাত্র দু’এক মাসের জন্য কাজেও এদের কেউ নিতে চায় না। ফলে বাড়িতে অলস সময় কাটাতে হয়। যাদের সামান্য পুঁজি বা সঞ্চয় থাকে তা দিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ বহন করতে পারলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার দু-এক বেলা কিংবা আধা পেট খেয়ে দিন পার করে। তিনি জেলেদের জন্য সরকারি নিয়মে রেশন কার্ড দেয়ার দাবি জানান।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সুফল তারা পাচ্ছেন না। ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। অনেক জেলে আসেনি এখনো নিবন্ধনের তালিকায়। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ট্রলার মালিকদের ঋণ সহায়তার দাবি জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, বরগুনা জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৩৬ হাজার ২২ জন। তার মধ্যে সমুদ্রগামী ২৭ হাজার ২৭৭ জেলে খাদ্য সহায়তা হিসেবে পাবেন ৮৬ কেজি করে চাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।