Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাড়ছে ব্যয় কমছে মান

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার হালচাল

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৮ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ফারুক হোসাইন : রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র রতন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী তমাকে কোচিংয়ের জন্য প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে আট হাজার টাকা। বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র হিমেলকে ভালো ফলের আশায় ক্লাসের বাইরে স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কোচিংয়ে গুনতে হয় ছয় হাজার টাকা। মিরপুরের মণিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শিক্ষার্থী লাবণ্যের পরিবারকে এ স্কুলের মাসিক বেতনের বাইরে প্রতিমাসে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। লাবণ্যের বড় ভাই রিয়াদকে একই স্কুলে তিন বিষয়ে প্রাইভেট পড়তে দিতে হয় ছয়-সাত হাজার টাকা। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়ন (ছদ্মনাম)। কলেজের বেতন, অন্যান্য ফি ছাড়াও নিজ কলেজের শিক্ষকদের কাছে কোচিং ও প্রাইভেট পড়তেই প্রতি মাসে তাকে গুনতে হয় ১১ হাজার টাকা। রাজধানীর নামি-দামি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ছোট-খাটো সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কোচিং ও প্রাইভেটের জন্য অভিভাবকদের একই পরিমাণ টাকা গুনতে হচ্ছে। এই খাতে প্রতিনিয়তই ব্যয় বাড়ছে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের। প্রতি বছর দেশজুড়ে কমপক্ষে ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং বাণিজ্য চলছে বলে মনে করেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বিনিময়ে উপহার হিসেবে অভিভাবকরা পাচ্ছেন জিপিএ-৫ নামের সর্বোচ্চ ফলাফল। জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও তরতর করে বাড়ছে প্রতি বছর। তবে সংখ্যার দিক দিয়ে ফলাফল আকাশচুম্বী হলেও মানের দিক দিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না কেউই। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শিক্ষাবিদরাই। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাদের মানের অবনমনের প্রমাণও মিলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা এমনকি সাধারণ আলাপচারিতায়ও শিক্ষার্থীদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি বিভাগে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থীর উত্তীর্ণ হওয়া এবং কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে শিক্ষার মান নিয়ে নতুন করে ভাবাতে থাকে সকলকে। প্রশ্ন উঠেছে সৃজনশীল পদ্ধতি ও গাইড বই আর মুখস্থ বিদ্যার ফলে কোথায় গিয়ে ঠেকছে শিক্ষার মান?
২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা থেকেই জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মান নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য মাত্র দু’জন উত্তীর্ণ হয়। অথচ ওই বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ৭০ হাজার ৬০২ জন। গত বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিতভাবে পাসের হার ছিল ১৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ফেলের হার ৮৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায়ই জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় শিক্ষাবিদরা শিক্ষার মান নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তখন তারা বলেছিলেন, পাসের হার বাড়লেও মান সেভাবে বাড়ছে না। এজন্যই ক্লাসের পড়ার বাইরে শিক্ষার্থীরা তেমন কিছুই পারছে না। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার গড়পড়তা মান বাড়ছে না। কিছু ছাত্র আছে যারা পারিবারিকভাবে সামর্থ্যবান তারা কিছু শিখছে। কিন্তু বেশিরভাগেরই তো সেই সামর্থ্য নেই তাই তারা তেমন কিছুই শিখছে না। আমাদের শিক্ষকদের গুণগত মান নেই। তারা ক্লাসরুম বহির্ভূত কাজে ব্যস্ত। আসলে মান বৃদ্ধিকে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকরাও গুরুত্ব দেয় না। তারা চায় জিপিএ কত পেয়েছে। কতটা শিখছে তা জানতে চায় না। তাই শিক্ষার্থীরাও শুধু নম্বর পাওয়ার কৌশল রপ্ত করছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, গুণগত শিক্ষা অর্জনের জন্য ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, অবকাঠামোসহ অনেক বিষয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের দরকার রয়েছে। প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার গুণগতমান অর্জনে ঝুঁকি থেকে যায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) পরিচালিত ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০১৫’ খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছরই প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এমনকি শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শ্রেণি কক্ষের পাঠদানে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অনেকে অভিযোগ করেন শিক্ষার গুণগত মান কমছে। কিন্তু এই অভিযোগ সত্য নয়। তবে যেটুকু বাড়া উচিত ছিল, হয়তো ততটা বাড়েনি। গুণগত মান অর্জন করা বর্তমান সময়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও গত জুলাইয়ে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মাধ্যমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার মান সবচেয়ে খারাপ। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও দুবর্ল মাধ্যমিক শিক্ষা। অর্থমন্ত্রী বলেন, এমপিও পদ্ধতি মাধ্যমিক শিক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
শিক্ষার সব সূচকেই দ্রুত এগিয়েছে দেশ। প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও পাসের হারে আকাশ ছোঁয়া সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। তবে গুণগত শিক্ষার মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বাজেটে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা না ফিরিয়ে পাসের দিকে বেশি নজর দেয়া, শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না দিয়েই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু, সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় কোচিংয়ের প্রভাব, গৎবাঁধা পাঠ্যক্রম, শ্রেণিকক্ষে সঠিক পাঠদানের ঘাটতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পাস করার প্রবণতা তৈরি, ক্লাসরুমে পাঠ্য বইয়ের পরিবর্তে প্রশ্নফাঁস ও গাইড বইয়ে সহজেই ভালো রেজাল্ট করার প্রবণতার কারণে দিনে দিনে কমে যাচ্ছে শিক্ষার মান। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও স্বীকার করছেন কেবল পাস করার জন্যই তারা গাইড বই ও মুখস্থ করে বেশি নম্বরের দিকে ঝুঁকছে।
নোয়াখালীর হরিণারায়নপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ জানায়, ক্লাসে শিক্ষকরাই বলে দিয়ে থাকেন যা পড়াবেন তার মধ্য থেকেই প্রশ্ন হবে। আর কোচিংয়ে আসলে এসব প্রশ্নের সেট ও কপি দিয়ে দেয়া হয় তা থেকেই প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই শিক্ষার্থীরাও ক্লাসের চেয়ে কোচিংয়ে যেতে বেশি আগ্রহী হয়, আবার বাধ্যও থাকে। তিনি জানান, সহায়ক বইগুলোতে অনেক প্রশ্নের নমুনা দেয়া থাকে। স্যাররা সেখান থেকেই প্রশ্ন করেন পরীক্ষায়। তাই সবাই সহায়ক বইয়ের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, নোট বইয়ের সব প্রশ্ন তৈরি থাকে। আমাদের কোনও কিছু চিন্তা করার দরকার হয় না। মুখস্থ করে লিখে দিলেই হয়ে যায়।
অভিভাবকরাও মানের চেয়ে জিপিএ-তে কত বেশি নম্বর আসলো তার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে কোচিং সেন্টার ও শিক্ষকরা। কেবল রাজধানীতেই এ ধরনের কোচিং সেন্টারের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার। অসংখ্য কোচিং সেন্টার তৈরি হয়েছে নামি দামি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বসত বাড়িতে। যেখানে না পড়লে স্কুলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের রোষানলে পড়ে শিক্ষার্থীরা। স্কুল পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দেবেন এই ভয়ে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকদের বাসায় গলাকাটা টাকার বিনিময়ে কোচিং করতে। এ অভিযোগ আছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল বড় শহরের প্রধান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই। আছে শিশুদের স্কুল ভর্তি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল ভর্তি ও সৃজনশীল প্রশ্নের জ্ঞান দেয়াসহ নানা ধারার কোচিং। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত নিত্যনতুন শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতির চালু, মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, শ্রেণিকক্ষে মানসম্পন্ন শিক্ষা না পাওয়া আর সরকারি অর্থের অপ্রতুলতার কারণে কোচিংনির্ভর হয়ে পড়ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিকসহ পুরো শিক্ষাব্যবস্থা। রাষ্ট্রের পরিবর্তে শিক্ষা ব্যয়ের চাপ বাড়ছে পরিবারের ওপর।
দেশের প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০ হাজার কিন্ডারগার্টেন ও ২৪ হাজারের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোচিং আর প্রাইভেট টিউশনিনির্ভর। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অবস্থাও মাধ্যমিকের চেয়ে উন্নত নয়। পাঠক্রমে পরিবর্তন এসেছে, বইয়ে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু স্কুলে পড়ানোর ধরন আর কোচিং বাণিজ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বহু স্কুলে কোনো শিক্ষার্থী ওই স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে তাকে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগ আছে অনেক। আর প্রাইভেট ও কোচিং করলে পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া, বেশি নম্বর পাওয়াসহ অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।
যদিও ২০১২ সালের ২০ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জনকে কোচিং করাতে পারবেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের পূর্বানুমতি নিতে হবে। লিখিতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকাও প্রধান শিক্ষককে জানাতে হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনাকে থোড়ায় কেয়ার করছেন সংশ্লিষ্টরা। বরং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা এখন কোচিংনির্ভর হয়ে গেছে। শিক্ষকরা স্কুলের চেয়ে কোচিং সেন্টারে পড়াতেই বেশি মনোযোগী। শিক্ষার্থীরাও কোনো মতে স্কুল-কলেজে হাজিরা দিয়েই ছুটছে কোচিং হোমে।
যদিও ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনো কোচিং সেন্টারে নিজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারবেন না বা নিজে কোনো কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারবেন না বা কোচিং সেন্টার গড়ে তুলতে পারবেন না। এমনকি কোনো কোচিং সেন্টারের নামে বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোচিং পরিচালনা করা যাবে না। কোচিং বন্ধে মন্ত্রণালয়ের এই নীতিমালা ভঙ্গ করলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকের ক্ষেত্রে এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন-ভাতা স্থগিত করা, এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা স্থগিতসহ আরও কঠিন শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সবকিছু সেই কাগজেই রয়ে গেছে। নীতিমালা মানা তো দূরে থাক তা ভঙ্গ করতেই যেন সবাই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে এবং আবাসিক এলাকার অলিতে-গলিতে বাসা ভাড়া করে গড়ে তোলা হয়েছে কোচিং সেন্টার।
একজন শিক্ষার্থীর পেছনে কোচিং ও প্রাইভেট বাণিজ্যে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা জানতে সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো একটি জরিপ করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অভিভাবকরা প্রতি মাসেই একজন শিক্ষার্থীর স্কুল-কলেজের বেতন, ফি ও অন্যান্য খরচ ছাড়াও কেবল কোচিং ও প্রাইভেটের পেছনেই তিন থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছেন। জরিপে দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী বছরে তার শিক্ষার পেছনে যে টাকা ব্যয় করে, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ চলে যায় কোচিং, আর হাউস টিউটরের ফি বাবদ। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী বছরে যদি শিক্ষা খাতে ১০০ টাকা খরচ করে, তার মধ্যে ৩০ টাকা খরচ হয় কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনিতে। বিবিএস বলছে, সাধারণত শহরের শিক্ষার্থীরা কোচিং ও প্রাইভেট পড়তে গিয়ে বেশি টাকা খরচ করে আর তাদের খরচের হার ৩৩ শতাংশ, আর গ্রামের শিক্ষার্থীরা ২৬ শতাংশ।
একজন শিক্ষার্থীর মোট খরচের ৩৯ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে কোচিং করতে গিয়ে। এছাড়া ২৪ শতাংশ ব্যয় হয় যাতায়াত খরচে। বই, খাতা, কলম এবং পোশাকে যাচ্ছে বাকি টাকা। ২০১২ সালের জুনে চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে চিটাগাং রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (সিআরআই)-এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন শিক্ষার্থীর মোট খরচের ৩৯ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে কোচিং করতে গিয়ে। স্কুল শিক্ষাকে বিনামূল্যে ভাবা হলেও প্রতিটি পরিবার এখাতে প্রতি মাসে মোট ব্যয় করছে ছয় হাজার ৮৪ টাকা।
শিক্ষকদের কোচিংয়ে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী নিজেই বলেছেন, দেশের বেশিরভাগ কলেজে বেলা ১১টার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ শিক্ষকরা মনে করেন ক্লাসে পড়ালে কোচিং-প্রাইভেটে শিক্ষার্থীরা আসবে না। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে আসে। তারা আসে কোচিং করতে। সকালে যে শিক্ষার্থী আসে, সে কোচিং করে ক্ষুধার্ত হয়ে বাড়ি চলে যায়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো শিক্ষক ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে না পড়িয়ে কোচিংয়ে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নোট বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত উপস্থিতি প্রভৃতি অভিযোগও কোনো কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাওয়া যায়। নিয়মিত পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব শিক্ষক নামধারী দুর্জন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Rumman ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ২:৪৫ পিএম says : 0
    Plz take necessary step against it
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাড়ছে ব্যয় কমছে মান

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ