Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চলনবিলে মুক্তা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা বিদেশে রফতানি করে কোটি কোটি টাকা আয় সম্ভব

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : বৃহত্তর চলনবিল এলাকায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ঝিনুক চাষের মাধ্যমে মুক্তা আহরণ করে বিদেশে রফতানি করে কোটি কোটি টাকা আয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, জনসচেতনতার অভাব এবং সুষ্ঠুভাবে বাজারজাতকরণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে ব্যাপক সম্ভাবনাময় ওই মুক্তা বিপুল পরিমাণে আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, চাটমোহর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুরসহ বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের নদী-নালা, বীল ও জলাশয়ে ঝিনুক থেকে মুক্তা, চন্দ্রিকা, মতিপাল, চুমকি ও শ্বেতী আহরণ করা হয়ে থাকে। বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের নদীনালা, খালবিল, ডোবা-পুকুর ও বিস্তৃত জলসীমায় প্রাকৃতিক নিয়মে ঝিনুক জন্মে থাকে। এসব ঝিনুকের মধ্যে সাদা, গোধূলি, ধূসরসহ বিভিন্ন আকার ও ধরনের মুক্তা ও মতিপাল জন্মে থাকে। এ অঞ্চল থেকে বছরে হাজার হাজার মণ ঝিনুক আহরণ করা হয়। ঝিনুক আহরণকারীদের সিংহভাগই অদক্ষ, আনাড়ি ও কচি কাঁচা।
তাদের সম্যক জ্ঞানের অভাব ও ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণের সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকায় চলনবিলে জন্ম নেওয়া বিপুল পরিমান মুক্তা আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ওইসব ঝিনুকের মধ্যে জন্ম নেওয়া মুক্তার সিংহভাগই চলনবিলের নদী-নালা, খাল-বীল ও বিস্তৃত জলসীমাভ্যান্তরেই থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতার অভাবে এ অঞ্চলের হতদরিদ্র জেলেরা অজ্ঞতার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে উঠতে না পেরে বিলাঞ্চলে জন্মানো সিংহভাগ মুক্তা, চন্দ্রিকা, মতিপাল, চুমকি ও শ্বেতী আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে অশিক্ষিত আনাড়ি জেলেরা ও জেলে কর্তৃক পরিচালিত অদক্ষ কচিকাঁচারা চলবিলাঞ্চল থেকে বছরে মাত্র প্রায় দেড় কোটি টাকার মুক্তা আহরণ করছে। জানা গেছে, দেশের কক্সবাজার ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং উত্তরাঞ্চলের রংপুরের বিভিন্ন ঝিনুকের হ্যাচারীতে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত মুক্তার গুণগত মানের চেয়ে সমুদ্রে ও বিল অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঝিনুক থেকে আহরিত মুক্তা বহুগুণে মানসম্পন্ন। শুধু তাই নয় প্রাকৃতিক উপায়ে বিলাঞ্চলে ও সমুদ্রে উৎপাদিত মুক্তার দাম কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত মুক্তার দামের চেয়েও প্রায় ২০/২৫ গুণ বেশী। সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলা পৌরসদরের মণিরামপুর বাজারস্থ এক জুয়েলারী দোকানদার জানান, দেশে কৃত্রিম উপায়ে ঝিনুকের হ্যাচারীতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে যে ধরনের মুক্তা উৎপাদন করা হচ্ছে তা স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারকদের কাছে আকার ও প্রকারভেদে ভরিপ্রতি ৫শ’ থেকে ২৫শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একেকটি ছোট আকৃতির কৃত্রিম মুক্তার দাম পড়ছে প্রায় ১০ টাকা ও অপেক্ষাকৃত একটু বড় আকৃতির মুক্তার দাম পড়ছে ৮০ টাকা থেকে ১শ’ টাকা। তিনি আরও জানান, সমুদ্র ও বিলাঞ্চলের ঝিনুকের অভ্যান্তরে জন্ম নেওয়া ওই একই আকারের (৮০/১০০ টাকার কৃত্রিম মুক্তা) মুক্তার দাম পড়ছে প্রায় ২ হাজার টাকা। অর্থাৎ কৃত্রিম উপায়ে ঝিনুকের হ্যাচারীতে উৎপাদিত মুক্তার মান ও দামের তুলনায় সমুদ্রগর্ভে ও বিলাঞ্চল থেকে আহরণ করা মুক্তার মান ও দাম প্রায় ২০/২৫ গুণ বেশী। এছাড়া, সমুদ্রগর্ভে ও বিলাঞ্চল থেকে অহরিত মুক্তা যদি বিদেশে রফতানি করা যায় তাহলে দেশের বাজারে বিক্রিকৃত প্রাকৃতিকভাবে আহরিত মুক্তার দামের চেয়েও অনেক বেশী মূল্যে রফতানি করা সম্ভব।
জনশ্রæতি রয়েছে, বৃহত্তর চলনবিলে জন্ম নেওয়া মুক্তা, চন্দ্রিকা, মতিপাল, চুমকি ও শ্বেতীর গুণগত মানের কথা বিদেশেও প্রচলিত রয়েছে। এ অঞ্চলে ঝিনুকের মাঝে জন্ম নেওয়া মুক্তার মান ও গুণ ভালো হওয়ায় বিদেশে রফতানির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। মুক্তার দাম নির্ভর করে এর সৌন্দর্য, মাধুর্য, আকৃতি ও রংয়ের ওপর। একতোলা মুক্তার ১২শ’ টাকা থেকে ২৫শ’ টাকা। মুক্তা সোনার গহনাসহ অলংকারের শোভাবর্ধনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মুক্তা থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি করা হয়। গুটিবসন্ত, হৃদরোগ, হাড় ও দাঁতের রোগের প্রতিষেধক হিসাবে মুক্তা ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। নানা গুণে গুণান্বিত ওই মুক্তা সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে আহরণ করা হলে জাতীয় অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিজ্ঞ মহল মনে করে।
জানা গেছে, গবেষণা ও মুক্তা আহরণের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশ মুক্তা সংগ্রহ করা সম্ভব যার মুল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। এ ব্যাপারে স্থানীয় মুক্তা সংগ্রহকারীদের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে মুক্তা আহরণ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকায় আয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এক নবদিগন্তের সূচনা ঘটবে। ফলে ভাগ্যবিড়ম্বিত হতদরিদ্র জেলে স¤প্রদায়সহ মুক্তা আহরনকারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলস্বী হয়ে উঠবে। এটি নিঃসন্দেহে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহল জানিয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চলনবিলে মুক্তা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা বিদেশে রফতানি করে কোটি কোটি টাকা আয় সম্ভব
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ