Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঠাঁই নেই যানবাহনে

দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখী মানুষ

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ঈদুল আজহা পরবর্তী কর্মস্থলমুখী জনস্রোতে তিল ধরার ঠাঁই নেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো লঞ্চঘাটসহ বাস টার্মিনালে। গতকাল দুপুর ১২টা থেকেই বরিশাল বন্দরের টার্মিনালে ঢাকামুখী যাত্রীর ভিড় শুরু হয়। বিকেল ৫টার পরে এ নদীবন্দরে আর পা রাখার কোন স্থান ছিলনা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানীসহ সন্নিহিত এলাকার সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী দেশের দুটি প্রধান ফেরি সেক্টরে গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ঘন্টায় প্রায় ৯ হাজার যানবাহন পারাপারের পরেও আরো ৭শ’র মত অপেক্ষমাণ ছিল। দৌলতদিয়া ও কাওড়াকান্দীতে ঢাকামুখী যানবাহনের লম্বা লাইন জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করে চলেছে।
বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল রুটে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দৈনিক ৫টি করে বেসরকারী নৌযান যাত্রী নিয়ে বন্দর ত্যাগ করে, সেখানে গতকাল ১৪টি বেসরকারী ও ২টি সরকারী নৌযান ধারণ ক্ষমতার তিনগুণেরও বেশী যাত্রী বোঝাই করে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা হয় সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই। নির্ধারিত সময় রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা। এর বাইরেও সকাল ও দুপরে ‘গ্রীন লাইন ওয়াটার ওয়েজ’এর দুটি ক্যাটামেরন নৌযান প্রায় দেড় হাজার যাত্রী নিয়ে ঢাকায় গেছে। বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মিনিবাস টার্মিনালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্রই ছিল একই চিত্র। বিভিন্ন পরিবহন মালিক ও কর্মীদের মতে, আগামী শনিবার পর্যন্তই কর্মস্থলে ফেরা শ্রমজীবী মানুষের সাথে কর্মজীবীদের ভিড় অব্যাহত থাকবে। তবে এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি গতকাল থেকে নিয়মিত স্টিমার সার্ভিসের বাইরে সব বিশেষ সার্ভিস সমূহ বন্ধ করে দিয়েছে।
মঙ্গলবারে ঈদুল আজহা উদযাপনের পরে বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মস্থ’লমুখী কর্মজীবী মানুষের স্রোত শুরু হয় দক্ষিণাঞ্চল থেকে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের কর্মস্থলে ফেরার পালা। ফলে ঠাঁই নেই ছোট-বড় কোন যাত্রীবাহী নৌযানসহ সড়ক পথের যানবাহনগুলোতেও। বেসরকারী নৌযানগুলো গত তিন দিন ধরেই প্রতিদিন ডবল ট্রিপে বরিশাল থেকে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। ফলে গত তিন দিন গড়ে ১৪টি করে বেসরকারী নৌযানে ৬০হাজারেরও বেশী যাত্রী ঢাকায় ফিরছে। এর বাইরে বিআইডব্লিউটিসি গত কয়েকদিন তার নিয়মিত রকেট স্টিমারের বাইরে বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠী হয়ে চাঁদপুরÑঢাকায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি সংস্থাটি অপ্রয়োজনীয়ভাবেই ঈদের দিনও দক্ষিণাঞ্চল থেকে চাঁদপুরÑঢাকা রুটে রকেট ষ্টিমার পরিচালনা ছাড়াও ঈদের পরের দিনও যাত্রী শূন্য বিশেষ ষ্টিমার পরিচালনা করে। কিন্তু আজ থেকে চলতি সপ্তাহ জুড়েই যখন অতিরিক্ত যাত্রী ভিড় অব্যাহত থাকবে, তখন তাদের কোন বিশেষ নৌযান থাকছে না।
তবে ইতোমধ্যে সংস্থাটির দুটি নৌযান বিকলও হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩মাস ধরে মেরামত শেষে ‘পিএস টার্ণ’ জাহাজটি ঈদের আগে যাত্রী পরিবহনে ফিরলেও তিনটি ট্রিপে যাত্রী পরিবহনের পড়ে বিকল হয়ে শুক্রবার থেকে ঢাকায় পড়ে আছে। ছয়মাস ধরে ভারী মেরামত শেষে গত ঈদুল ফিতরের আগে যাত্রী পরিবহনে ফেরা ‘পিএস লেপচা’ জাহাজটিও চলছে খুঁড়িয়ে। গতকাল সকালে ঢাকা পৌঁছে নৌযানটিতে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। দু’ঘন্টা ধরে প্যাডেলে মেরামত শেষে সকাল ১০টার পরে ঢাকা ত্যাগ করে সন্ধা ৬টায় বরিশালে পৌঁছে যাত্রী বোঝাই করে নৌযানটি পুনরায় ঢাকায় ফেরে। এর সাথে স্ক্রু-হুইল ‘এমভি বাঙালী’ নৌযানটিও বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে যাত্রা করে পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর বিভিন্ন স্টেশন থেকে সহশ্রাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ফেরে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কেবিনসহ ডেকের সীমিত কিছু যাত্রী নিয়ে বাঙালী বরিশাল বন্দর ত্যাগ করে।
গতকাল বরিশাল থেকে ১৪টি বেসরকারী যাত্রীবাহী নৌযানই ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে বন্দর ত্যাগ করে। বিআইডব্লিউটিএ, প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে এ ঘটনা ঘটলেও যাত্রী ভিড়ের কাছে সকলেই ছিল অসহায়।
এদিকে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া সেক্টরের কাওয়াড়াকান্দী ফেরিঘাট মুখী বৈধÑঅবৈধ সব যানবাহনেও যাত্রীর কোন কমতি নেই। বিআরটিসি বরিশালÑকাওড়াকান্দী রুটে সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত ও বিশেষ এ/সি বাস পরিচালনা করছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া হয়ে বরিশাল থেকে রাজধানী মুখী বিভিন্ন নামি-দামী পরিবহন সংস্থার বাসগুলোতেও কোন টিকেট নেই। পদ্মার প্রবল স্রোত অতিক্রম করেও গতকাল সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ঘন্টায় পাটুরিয়া সেক্টরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার যানবাহন পারপার করে বিআইডব্লিউটিসি’র ফেরিগুলো। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ’র প্রবল বৈরী স্রোতের পরেও মাওয়া সেক্টরেও ৩ হাজার ৭শ’র মত যানবাহন পারাপার করা হয়েছে।
তবে দুটি প্রধান ফেরি সেক্টরে ৯হাজারের মত যানবাহন পারপারের পরেও দৌলতদিয়াতে প্রায় ৪শ’ ও কাওয়ড়াকান্দীতে আড়াইশ’র মত যানবাহন অপেক্ষমাণ ছিল। যাত্রী ও পণ্য বোঝাই যানবাহনের চাপে দুটি সেক্টরেই পদ্মার পশ্চিম তীরের ঘাটগুলোতে সব ধরনের শৃংখলা ভেঙে পড়ার উপক্রম।
চলতি সপ্তাহ জুড়েই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলমুখী কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের এ স্রোত কম বেশী অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এ অবস্থাতে আগামী শনিবার পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিসি’র নিয়মিত রকেট স্টিমারের সাথে অন্তত একটি নৌযান বরিশাল-চাঁদপুর রুটে পরিচালনার দাবী করেছেন সাধারণ যাত্রীগণ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঠাঁই নেই যানবাহনে

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ