পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : কোরবানির পশুর গোশত আর চামড়ার কদর সবারই জানা। কিন্তু আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া পশুর হাড়, শিং, লিঙ্গ, অÐকোষ, ভুঁড়ি, মূত্রথলি, পাকস্থলী, রক্ত ও চর্বি কোনো কিছুই ফেলনা নয়। পশুর এসব উচ্ছিষ্ট অঙ্গ ওষুধ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল এবং রফতানিযোগ্য হওয়ায় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশুর কোনো কিছুই ফেলনা নয়। ওষুধ ক্যাপসুলের কাভার, অপারেশনের সুতা, বিভিন্ন ধরনের শিল্পের অন্যতম কাঁচামালসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি হয় পশুর এসব উচ্ছিষ্ট অঙ্গ দিয়ে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কিংবা প্রচার না থাকায় গবাদি পশুর হাড়গোড়, ক্ষুর, শিং, লেজ কিংবা রক্ত শত কোটি টাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে স্থান পায় ডাস্টবিনে। সরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিলে পরিবেশ দূষণ কমার পাশাপাশি অর্জন হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
পাড়া-মহল্লা থেকে হাড় সংগ্রহকারী মজিবর বলেন, রাজধানীতে ঈদের সময় পশু কোরবানির পর হাড় সংগ্রহ করে টোকাইরা। তারা হাড় ভাঙ্গাড়ির দোকানে বিক্রি করে। পরে সেই উচ্ছিষ্ট যায় হাজারীবাগের হাড্ডিপট্টির আড়তে। প্রকার ভেদে প্রতি টন হাড়ের মূল্য ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
হাজারীবাগের হাড্ডিপট্টিতে সরেজমিন দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হাড়ের বস্তা রেখে দেয়া হয়েছে। আর নোংরা পরিবেশে শুকানো হচ্ছে পশুর লিঙ্গ। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাব্বির জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু ও মহিষের লিঙ্গ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ লিঙ্গের রফতানি মূল্য ৫ থেকে ৬ ডলার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশুর হাড় দিয়ে ওষুধ ক্যাপসুলের কাভার, মুরগি ও মাছের খাবার, জমির সার, চিরুনি ও পোশাকের বোতাম তৈরি হয়। নাড়ি দিয়ে অপারেশনের সুতা, রক্ত দিয়ে পাখির খাদ্য, চর্বি দিয়ে সাবান, পায়ের ক্ষুর দিয়ে অডিও-ভিডিওর ক্লিপ, অÐকোষ দিয়ে তৈরি হয় জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাদ্য সুসেড রুল। গরুর রক্ত শুকিয়ে বøাড মিল তৈরি করা যায়। সিরামিক শিল্পের কাঁচামাল হিসেবেও হাড় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া জার্মানি ও ইতালিতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় পশুর শিং সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, পশুর বর্জ্য-হাড়, শিং, চামড়া, ভুঁড়ি, লিঙ্গ, মূত্রথলি, চর্বি, রক্ত ইত্যাদি সবই রফতানিযোগ্য। অধিকাংশ রফতানি হয় চীন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে। তিনি আরো বলেন, গত বছর পশুর গোল্লা (ভুঁড়ি) ও লিঙ্গসহ বর্জ্য রফতানি করে ১৭০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। এ দুটি (ভুঁড়ি ও লিঙ্গ) থেকে এ বছর ২৫০ কোটি টাকা আয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ বছর সার্বিকভাবে পশুর উচ্ছিষ্ট থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
হাড় ব্যবসায়ী রবিউল আলম বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য মানুষ ফেলে দেয়। কিছু কুকুরে খেয়ে ফেলে। আবার অনেকগুলো পচে-গলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। অথচ দুই মণ ওজনের প্রতিটি গরু থেকে প্রাকৃতিক সার তৈরির জন্য ২০ কেজি বর্জ্য তৈরি হয়। লিঙ্গ ও গোল্লা রফতানি হয়।
প্রতিটি পেনিসের রফতানিমূল্য ৪ থেকে ৬ ডলার ও গোল্লার মূল্য ১০-১২ ডলার। তিনি বলেন, স্থানীয় ওষুধ শিল্পের জন্য হাড়ের চাহিদা রয়েছে। এগুলো হাজার টাকার সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদনকারী বেক্সিমকো, অপসোনিনসহ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে পরিবেশ দূষণমুক্তের পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।