পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত
টঙ্গী থেকে মোঃ হেদায়েত উল্লাহ : টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় উদ্ভূত ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। গতকাল শনিবার বিকাল পর্যন্ত আর কোনো লাশ উদ্ধার না হলেও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা জীবিত না হোক অন্তত লাশটি পাওয়ার আশায় এখনো ধ্বংসস্তূপের পাশে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুমের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকের সংখ্যা ১০ থেকে ১১ জনে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জেলা প্রশাসকের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মামুন মিয়ার (ক্লিনার) (২৮) লাশ ভেবে চাঁদপুরের মতলব থানার হোসেন জুয়েলের (৩২) লাশ নিয়ে যান মামুন মিয়ার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। বাড়িতে নেওয়ার পর পরিবারের লোকজন সেই লাশটি মামুন মিয়ার নয় বলে নিশ্চিত হলে পুনরায় ঢাকা মেডিকেলে ফেরত পাঠানো হয়। পরে জানা যায় ফেরত আসা লাশটি চাঁদপুরের মতলব থানার হোসেন জুয়েলের লাশ। এই হোসেন জুয়েলের নাম পূর্বে উল্লিখিত নিখোঁজ তালিকায়ও ছিল না বলে জানান কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
অগ্নিকা-ে যে ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন তারা হলেনÑ মাগুরা সদরের চনপুর ইগরন গ্রামের আব্দুস ছালেক মোল্লার ছেলে কাজিম উদ্দিন (৩৬), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের উকলমি গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৭), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার শিবপুরের আবু তাহেরের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুরাদ, একই গ্রামের সুলতান গাজীর ছেলে আনিসুর রহমান (৩০), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার মেসেরা গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০)। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পলাখান গ্রামের ইউসুফ পাটোয়ারীর ছেলে নাসির পাটোয়ারী, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার টনকি গ্রামের তোফায়েল হোসেনের ছেলে মামুন আহমেদ (৩০), ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ভীমনগর গ্রামের মোজাম মোল্লার ছেলে চুন্নু মোল্লা, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ফানিশাইল গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে রেদোয়ান আহমেদ ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে জয়নুল ইসলাম, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মামুন মিয়া (ক্লিনার) (২৮)।
এদিকে ভারী সরঞ্জামাদি নিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কারখানার মূল ফটকের পূর্ব পাশ থেকে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ অব্যাহত রেখেছেন। একটু একটু করে তারা ভেতরে এগোচ্ছেন। কবে নাগাদ এই উদ্ধারকাজ শেষ হবে সেই প্রতীক্ষায় রয়েছেন নিখোঁজের স্বজনরা। সাত দিন পার হলেও এখনো থামেনি হতাহতের স্বজনদের চোখের পানি। কারখানার চারপাশ ঘিরে শুধু আহাজারি। তবে কেউ কেউ ভাবছেন, ভবনের ভেতর আটকে পড়া শ্রমিকরা হয়তো বেঁচে আছেন। এখনো তারা আশা ছাড়েননি। দিন নেই রাত নেই খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কারখানার পাশে গিয়ে স্বজনের অপেক্ষায় বিলাপ করতে দেখা গেছে অনেককে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ঘটনার দিন কারখানার পশ্চিম পাশে আটকে পড়া শ্রমিকরা জানালা দিয়ে হাত বের করে শুধু ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার করছিলেন। ওই শ্রমিকদের কেউ হয়তো বের হতে পারেনি। ধ্বংসস্তূপ ভবনের উদ্ধারকাজ শেষ হলে আরও অনেক শ্রমিকের লাশ বের হবে বলে মনে করছেন তারা। ওই কারখানার প্রিন্টিং অপারেটর মো. জহিরুল ইসলামের ভগ্নিপতি মো. আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ঘটনার পর থেকে এমনকি গতকাল সকালেও কারখানার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আমার স্বজনের লাশ এখনো পাইনি। জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুমে গিয়েও খোঁজ নিলাম।
এদিকে ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মোহাম্মদ হাসান (পিএসসি) বলেন, আমাদের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে কবে নাগাদ উদ্ধারকাজ শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্নোরকল মেশিন দিয়ে ওপর থেকে পানি দিয়ে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। এ সময় কারখানা ভবনের আশপাশের বাসিন্দা ও উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ করা গেছে। কারখানা এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা চারদিক ঘিরে রেখেছে। জনগণের চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
মামলা প্রত্যাহরের দাবিতে মানববন্ধন
ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকা-ের ঘটনায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে এবং কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ট্যাম্পাকো কারখানার পাশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য ও ট্যাম্পাকো কারখানা বাঁচিয়ে রাখার দাবি জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন কারখানার অপারেটর মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. জাকির হোসেন, লিটন মিয়া, মজিবুর রহমান প্রমুখ।
মনববন্ধনে ‘টাম্পাকো পুড়লো কেন তিতাস গ্যাস জবাব চাই’, ‘ট্যাম্পাকো পরিবার বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই’, ‘টাম্পাকো বাঁচলে ট্যাম্পাকো পরিবার বাঁচবে’, ‘সুখে ছিলাম, এখন দুঃখে আছি, আমরা টাম্পাকোকে ভালবাসি’, ‘ট্যাম্পাকোর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই করতে হবে’ ইত্যাদি নানা স্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফ্যাস্টুন নিয়ে কারখানার শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী মানববন্ধনে অংশ নেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।