Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ওবামার প্রতি সর্বোচ্চ জনসমর্থন ট্রাম্পের জন্য বড় রকমের সমস্যা হতে পারে

প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দু’বছর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রচারণা পর্যায় থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন। সম্ভাব্য এবং পদে থাকা সিনেটর ও হাউজ সদস্যরাও ছিলেন তা থেকে দূরে। ওবামার জনপ্রিয়তা তার মেয়াদকালের নি¤œপর্যায়ের কাছে নেমে গিয়েছিল।
দু’বছর পর চিত্রনাট্যের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি আধুনিক প্রেসিডেন্সিয়াল ইতিহাসে দ্বিতীয় কম জনপ্রিয় মনোনীত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে তার উত্তরসূরি হতে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। তিনি সম্ভবত তার সেরা পৃষ্ঠপোষক।
ওবামার বক্তৃতা লেখার সাবেক পরিচালক জন ফ্যাভরু বলেন, ওবামা হচ্ছেন হিলারির সবচেয়ে কার্যকর একক পৃষ্ঠপোষক। আমি স্মরণ করতে পারি না যে আর কোনো পদাধিকারী প্রেসিডেন্ট তার দলের মনোনীত প্রার্থীর জন্য এত জোর প্রচারণা চালিয়েছেন কিনা।
ওবামা মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারণায় আবার অবতীর্ণ হন। নিউমোনিয়া আক্রান্ত হিলারি যখন আরোগ্য লাভের জন্য বিশ্রামে রয়েছেন তখন মঙ্গলবার ওবামা ফিলাডেলফিয়ায় তার জন্য প্রচারণায় নামেন। গত সপ্তাহটি নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের তুলনায় খারাপ গেছে।
গত সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশিত জনমত জরিপে দেখা যায়, ওবামার জনপ্রিয়তা বিস্ময়করভাবে ৫৮ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০১৪ সালে মধ্যবর্তী পর্যায়ের নির্বাচনের ঠিক আগে নির্বাচনোত্তর জরিপে তার যে জনপ্রিয়তা ছিল তার চেয়ে এটা ১৫ শতাংশ বেশি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে তার যে জনপ্রিয়তা ছিল তখনকার চেয়েও এটা বেশি।
সাবেক ওবামা প্রচারণা অবস্থা পরিচালক স্টিভ শেল বলেন, তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেমোক্র্যাট। তার মেয়াদ যখন শেষ হয়ে আসছে তার জন্য ভালোবাসার তীব্রতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘প্রেসিডেন্ট ওবামার উত্তরাধিকার রক্ষার জন্য হিলারিকে নির্বাচন করুন’ ডেমোক্র্যাটদের জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী বার্তা।
এ উদ্যোগ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হতে পারে। তবে পূর্বনজিরের ইতিহাস বলে যে এটা ওবামার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য ভালো হতে পারে।
এ বছরের গোড়ার দিকে দৈনিক জনমত জরিপের সাপ্তাহিক গড়ে ওবামার প্রতি জনসমর্থনের হার ছিল ৫০ শতাংশ। মঙ্গলবার তা দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ। ওবামার দ্বিতীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তার পারদ যেখানে নি¤œ থেকে মধ্য ৪০ পর্যন্ত ওঠানামা করেছে সেখানে এ উল্লম্ফন উল্লেখযোগ্য।
গ্যালাপ-এর একজন বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ডুগান ও সংগঠনের প্রধান সম্পাদক ফ্রাংক নিউপোর্ট এ বছরের প্রথম দিকে এক উপসম্পাদকীয়তে বলেন, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সম্প্রতি ওবামার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা শক্ত, তবে সম্ভাব্য কিছু ব্যাখ্যা আছে।
তারা বলেন, একটি ব্যাখ্যা হল যে রিপাবলিকান দলের নির্বাচন পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক অবস্থা, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা পদ্ধতি ও বাগাড়ম্বর তার তুলনায় ওবামাকে রাষ্ট্রনায়কোচিত মর্যাদায় স্থাপন করে থাকতে পারে।
শেল বলেন, তিনি দোদুল্যমান ভোটদাতাদেরকে তারা রাজনীতির যে মৌলিক সৌন্দর্য মিস করে সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি তার শেষ পর্যায়ের এ জনপ্রিয়তার কারণ ট্রাম্পের ক্ষতিকর কথাবার্তার কারণে মানুষের অন্তর্জাত প্রতিক্রিয়া। মানুষ ওবামাকে দেখছে মাপা ও চিন্তাশীল হিসেবে। তার পদ্ধতি ট্রাম্পের বিপরীত এবং তা হিলারির জন্য লাভজনক।
ট্রাম্প হিলারিকে ঘায়েল করতে গিয়ে বারবার ওবামার নিশানার আওতায় পড়ছেন। এর ভালো দিক হচ্ছে সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাথে এত বেশি সম্পৃক্ত হয়েছেন।
রিপাবলিকান প্রার্থী হেলথকেয়ার বিষয়ে স্বাক্ষর সাফল্য (সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য সেবা আইন), পরিবেশ (জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যে নতুন আইন) এবং পররাষ্ট্রনীতি (ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি) বাতিল করার অঙ্গীকার করেছেন।
ট্রাম্প ওবামার আমলকে একটি বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করতে চান। কিন্তু প্রেসিডেন্টের প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন ও জনপ্রিয়তা বলে যে তার এ যুক্তি দোদুল্যমান ভোটারদের কাছে অধিকতরভাবে অসার হয়ে পড়ছে।
জেব বুশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকালীন প্রচারণার সাবেক মুখপাত্র ও ট্রাম্পের সমালোচক টিম মিলার বলেন, দোদুল্যমান ভোটারদের ওবামার প্রতি মনোভাব ক্রমেই অনুকূল হচ্ছে।
ফ্যাভ্রু বলেন, ট্রাম্প নিজেকে বুঝিয়েছেন যে ওবামার ব্যাপারে ফক্স নিউজের মত হচ্ছে জনগণের মত, তাই আমি আশা করি যে তিনি তৃতীয় মেয়াদের যুক্তি মেনে নেবেন।
এ পর্যায়ে ওবামার প্রতি জনসমর্থনের হার তার পূর্বসূরী জর্জ বুশের চেয়ে অনেক ভালো। বুশের অজনপ্রিয়তার কারণেই ২০০৮-এ ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তার জনপ্রিয়তা সরাসরি সাবেক প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের জনপ্রিয়তার সাথে তুলনীয়, ১৯৮৮ সালের মার্চে যার জনসমর্থন ছিল ৫১ শতাংশ।
একই বছর ভোটদাতারা রিগ্যানের ভাইস প্রেসিডেন্ট এইচ ডব্লিউ বুশকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে।
ওবামার জনপ্রিয়তা রিপাবলিকান পার্টির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে যাচ্ছে কিনা বলে এ বছরের গোড়ার দিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি আরি ফ্লেইশারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাবে বলেন, হ্যাঁ। বিজনেস ইনসাইডারকে তিনি বলেন, আপনি যদি ক্ষমতাসীন দল হয়ে থাকেন তবে কম জনপ্রিয় কোনো ব্যক্তির চেয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে জনপ্রিয় ক্ষমতাসীন একজন প্রেসিডেন্টকে পাওয়া অবশ্যই ভালো।
এ বছরের গোড়ার দিকে এক গ্যালাপ জরিপে দেখা যায়, ৪২ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে অত্যন্ত অপ্রিয় মনে করে, পক্ষান্তরে ১৬ শতাংশ ভোটার তাকে অত্যন্ত প্রিয় মনে করে। গ্যালাপ মতে, ১৯৫৬ সালের পর কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর জন্য সমর্থনের সর্বোচ্চ নেতিবাচক হার।
এনবিসি/ডব্লিউএসজে সহ-ভোটগ্রহণকারী পিটার হার্ট এনবিসিকে এ বছরের গোড়ার দিকে বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে আমি এ কাজ করছি যেটা ছিল গোল্ডওয়াটার বছর। আমার কাছে এটা হচ্ছে সর্বনি¤œ জনসমর্থন। আমি বিরক্তি ও মেরুকরণ দেখেছি। কিন্তু কখনোই এ রকম কিছু দেখিনি। তারা উপরের দিকে যাচ্ছে না, নিচের দিকে নামছে।
ট্রাম্পের কাছাকাছি কে ছিলেন? ক্লিনটন। ৩৩ শতাংশ ভোটদাতা তাকে একেবারেই অপছন্দ করতেন।
হিলারি কেন নিজেকে ওবামার উত্তরাধিকারের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন তার ব্যাখ্যা করতে এটা সাহায্য করে। নভেম্বরের ভোটে সেসব আসনে হিলারির সমর্থন লাভ প্রয়োজন সেগুলোর এক বিরাট অংশে ওবামা এখনো জনপ্রিয়। আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে তার প্রতি সমর্থন ৯০ শতাংশ, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ৮২ শতাংশ, ল্যাটিনোদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ।
শেল বলেন, আপনি ওবামা জোট পুনঃসৃষ্টি করতে পারবেন না, হিলারিকে হিলারি জোট তৈরি করতে হবে। তবে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন মোটিভেটর, বিশেষ করে আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের ক্ষেত্রে। সূত্র বিজনেস ইনসাইডার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবামার প্রতি সর্বোচ্চ জনসমর্থন ট্রাম্পের জন্য বড় রকমের সমস্যা হতে পারে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ