পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এস এম উমেদ আলী, (মৌলভীবাজার থেকে) : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের যে বাড়িতে নববধূকে বরণ করে আনন্দ থাকার কথা ছিল কিন্তু সেই বাড়িসহ পুরো গ্রামে চলছে এখন শোকের মাতম। জরিনা বেগম তার পুত্র ও স্বামীকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ। আহত অপর পুত্র সজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে হাসপাতালের বিছানায়। বাড়িতে নববধূ না এসে একসাথে এলো ৮টি লাশ। পাশাপাশি ৮টি কবরে তাদের দাফন করা হয়েছে।
স্বজনদের নিয়ে পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে ঢাকার মহাখালীতে যাচ্ছিলেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর গ্রামের মাওলানা আবু সুফিয়ান। মাইক্রোবাসযোগে বাবা, ভাই ও স্বজনদের নিয়ে মোট ১১ জন ভোর ৬টায় যাত্রা করেন।
কথা ছিল বিয়ে করে স্ত্রীকে ঘরে তুলে মায়ের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখাতে সিলেট নিয়ে যাবেন আবু সুফিয়ান। কিন্তু তার সেই কথা আর পূরণ হলো না। লাশ হয়ে ফিরলেন বর আবু সুফিয়ান, সাথে বাবা আদিউর রহমান ওরফে সরফর মিয়া, চাচা মতিউর রহমান মুর্শেদ, চাচাতো ভাই আলী হোসেন, নিকটআত্মীয় মাওলানা সাইদুর রহমান, হাজী আব্দুল হান্নান, মুক্তার চৌধুরী ও দুরুদ মিয়াসহ মোট ৮ জন।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ৮টি লাশ নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একটি পিকআপ ভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্সে করে কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর গ্রামে পৌঁছলে কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনার সংবাদ শোনার পর রুপশপুর গ্রামটি নিস্তব্ধ হয়ে যায়, শুরু হয় শোকের মাতম। গোটা কমলগঞ্জে এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শত শত শোকার্ত মানুষ ছুটে যান শোকাহত রুপসপুর গ্রামে।
গত শুক্রবার সকাল ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের শশই গ্রাম এলাকায় মাইক্রোবাস ও এনা পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বর ১১ যাত্রী পরিবহনকারী মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই বর, চাচাতো ভাই, বাবাসহ ৭ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরেক বরযাত্রীর মৃত্যু হয়। ফলে আবু সুফিয়ানের বিয়ে করে মাহমুদা ইয়াছমিনকে আর ঘরে তোলা হয়নি ও মাকে নিয়ে ডাক্তারও দেখানো হলো না। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় একই পরিবারভুক্ত চারজনসহ আটজনের মৃত্যুতে গ্রামবাসী যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন।
দুর্ঘটনায় আহত বরের আপন ছোট ভাই কামরান মিয়া, স্বজন জাকির হোসেন ও গাড়িচালক সোহান মিয়াকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: কিশোলয় সাহা জানান, এদের মধ্যে জাকির হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রুপশপুর গ্রামে গেলে নিহত বর আবু সুফিয়ানের মা জরিনা বেগমের কান্নায় আকাশ যেন ভারী হয়ে উঠে। কেঁদে কেঁদে বলেন, তিন ছেলের মধ্যে আবু সুফিয়ান বড় ছিল। বিয়ে করে ঘরে ফিরে স্বজনদের আপ্যায়ন আর আনন্দে থাকার কথা ছিল। দুর্ঘটনায় এ আনন্দ শোকে পরিণত হলো। শোক শুধু শোক নয়, পুরো পরিবারটি এখন ধ্বংসের মুখে পড়ে গেল।
গ্রামবাসী একই কবরস্থানে একসাথে আটটি কবর খুঁড়ে আগেই প্রস্তুত রেখেছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লাশ পৌঁছার পর ধর্মীয় আনুষঙ্গিকতা শেষে রাত সাড়ে ১০টায় নামাজে জানাজা শেষে পাশাপাশি ৮টি কবরে দাপন সম্পন্ন হয়। নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমানসহ এলাকার সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ।
মুন্সীবাজার ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল মিয়া জানান, নিহত বর আবু সুফিয়ান ঢাকায় একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে আলেম পাস করেছেন। তিনি ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। মাওলানা আবু হানিফের মেয়ে মাহমুদা ইয়াছমিনকে স্ত্রী করে আনার জন্য যাচ্ছিলেন ঢাকায়। হাসিখুশিতে ভরপুর গ্রাম একটি দুর্ঘটনায় হাসির বদলে কান্নায় ভরে গেছে। রুপশপুর গ্রামে হাজারো জনতা ভিড় করছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক রুপশপুর গ্রামে যান। তারপর সাবেক চিফ হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদ রুপশপুর গ্রামে গিয়ে নিহতদের পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যদের সাথে কথা বলে সমবেদনা জানান। সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নগদ ৫০ হাজার টাকা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদ জানান, তিনি বর আবু সুফিয়ান ও মতিউর রহমান মুর্শেদের পরিবারকে নগদ ১৫ হাজার টাকা করে, দুরুদ মিয়ার পরিবার ও মাওলানা সাইদুর রহমানের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষে বর আবু সুফিয়ান ও তার চাচা মতিউর রহমান মুর্শেদের পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে, দুরুদ মিয়া ও সাইদুর রহমানের পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে ও হাজী আব্দুল হান্নান ও আব্দুল মুকিত চৌধুরীর পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়।
নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানোর পর সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ মো: আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, দুর্ঘটনার কারণে যে চারটি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে সেই পরিবারগুলোকে সচ্ছল রাখার একটি পরিকল্পনামাফিক চিন্তাভাবনা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।