পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস পরবর্তী শারীরিক জাটিলতায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছিল তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার। চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি সরকার না দেওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে বিএনপি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এই কথা অত্যন্ত সত্য কথা যে, একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যটা ছিল বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এটা আজকে নয়, ১/১১ থেকে এটা শুরু হয়েছে। এটা তো খুব পরিষ্কার যে এই সরকার ১/১১ এর ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চান। তারই ফলশ্রুতিতে আজকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বেগম খালেদা জিয়া। গত ৩ মে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তরিত করা হয়। এখন তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। চিকিৎসকদের সুপারিশ ও পরিবারের আগ্রহেই গত বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমণ্ডির বাসায়।
সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে আইনি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত রোববার আইন মন্ত্রণালয় আবেদনে মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। খালেদা জিয়ার আবেদন নাকচের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার আবেদনে অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একবার যখন একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ৪০১ ধারায় কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে। সেজন্য এটাকে আরেকবার রিওপেন করার সুযোগ নেই।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর পরই ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দলটির নেতাকর্মীরা বিগত দিনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে মানবিক হওয়ার আবেদন জানান। কেউ কেউ বেগম জিয়াকে বিদেশে যেতে না দেওয়ায় বিএনপিকে আন্দোলনে নামার দাবি জানান। বেশিরভাগ নেতাকর্মীই মনে করেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে না সরকার।
ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, তার ওপরে ৭৬ বছর বয়স এই অবস্থায় তার উন্নত চিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সরকার তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনিও কিন্তু ১/১১ সরকারের সময় বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। এখন তার সরকারই বলছে আইনে সম্ভব নয়। তাহলে তিনি কোন আইনে বিদেশে গিয়েছিলেন?
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য অনুমতি না দেয়ার অন্য কোন কারণ আমরা দেখি না, কেবল রাজনৈতিক। সরকার চায় বেগম জিয়াকে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। একারণেই মিথ্যা মামলায় তাকে কারাবন্দী করা হয়েছে, জামিনে মুক্তি দিলেও গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এখন যখন তার চিকিৎসা প্রয়োজন সেটি করতে না দিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে ধারাতে দেশনেত্রীর সাজা স্থগিত করেছে, ওই ধারাতেই কিন্তু তাকে বিদেশে যাওয়া বা একেবারেই সাজা-দণ্ড মওকুফ করার যথেষ্ট পরিমাণ সুযোগ সেই আইনের মধ্যে দেওয়া আছে। তারা (সরকার) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারেন, মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু একজন পপ্যুলার পলিটিক্যাল লিডার এবং এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ও গণতন্ত্রের যুদ্ধের সঙ্গে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তার জন্য তাদের কোনো মানবতা কাজ করে না।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো যুক্তি নেই দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিহিংসামূলক রাজনীতিকে চরিতার্থ করতেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
খালেদা জিয়া কি রাজনীতির শিকার কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবশ্যই। তিনি তো রাজনীতির শিকার হয়েই কারাগারে আছেন এবং এখন অন্তরীণই আছেন বলা যেতে পারে। এখন বিএনপির পদক্ষেপ কী হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তো পার্টির তরফ থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য তখনও আবেদন করেনি, এখনও আবেদন করিনি। তার পরিবার যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই করবেন। পরিবারই ডিসাইড করবে, তারা কী করবে?
খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি পুনর্বিবেচনা করার এখনো সময় আছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়া হোক।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী এড. খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি না দিয়ে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। এখন তার শারীরিক অসুস্থতা যে পর্যায়ে সেখানে সরকার এরকম একটি দায় দায়িত্ব কেন নিতে গেলো সেটাও কিন্তু রহস্যজনক ব্যাপার। আমার বিশ্বাস সরকার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে, পুনর্বিবেচনা করবে এবং বেগম জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বেেলন, বিশেষ বিবেচনায় অতীতে হিংস্র খুনি থেকে কুখ্যাত মাস্তানদের পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পাওয়ার নজির রয়েছে। অথচ দেশে দেশে রাষ্ট্রপ্রধানের মাধ্যমে এই ক্ষমা করার বিধান রয়েছে শুধু চরম মানবিক বিষয় বিবেচনার জন্য। যেমন স্কটল্যান্ডের লকারবিতে বিমান উড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত লিবিয়ার অপরাধী আবদেল মেগরাহিকে ২০০৯ সালে ক্ষমা করা হয়েছিল ক্যানসারের কারণে, তাঁর অবধারিত মৃত্যুর আগের শেষ দিনগুলো স্বজনের সঙ্গে কাটাতে দেওয়ার মানবিক দিক বিবেচনা করে। শুধু তাই নয়, দণ্ড স্থগিত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো নজিরবিহীন ঘটনা নয়। থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, পাকিস্তান সহ অনেক দেশে চিকিৎসার জন্য অনেক সাবেক রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের বেলায় এমনটি ঘটেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ৭ বছরের সাজা হলেও লাহোর হাইকোর্ট তাকে জামিন ও সাজা স্থগিত করে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দুটো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কেঙ্কোরির মতো বিষয় নয়।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিবে। তা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
শারীরিক অবস্থা উন্নতির লক্ষণ: খালেদা জিয়ার অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তার কিছু কিছু প্যারামিটার বেটার এবং তিনি এখন অক্সিজেন ছাড়াই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন এবং সেখানে তার খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না। তবে শঙ্কা এখনও রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও তার যে লাংগ ও পেটে পানি আসছিল, সেটার জন্য কিন্তু টিউব লাগানো আছে। ডাক্তাররা বলেছেন, পোস্ট কোভিড যে কমপ্লিকেশন, সেই কমপ্লিকেশনগুলো তার পুরো মাত্রাই আছে।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।