Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইতিবাচক ধারায় মূল্যস্ফীতি

প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : মূল্যস্ফীতিতে ইতিবাচক বার্তা দিয়ে শুরু হয়েছে চলতি অর্থবছর। তবে ঈদুল আযহা উপলক্ষে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়তে পারে। কারণ এই সময়ে বাজারে টাকার প্রবাহ অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটা বেশি। এর নেতিবাচক হিসেবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি নির্ভর পণ্যগুলোর দাম কম হওয়ায় মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী। তবে, আন্তর্জাতিক বাজারের হিসাবে আরো কমতে পারতো এটি। এদিকে সাধারণ সূচকে মূল্যস্ফীতি কমলেও বেড়েছে খাদ্য সূচকে। এছাড়া গ্রামের তুলনায় শহর অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে কৃষক ও ভোক্তা স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষায় দু’একটি পণ্যের সাময়িক দাম বৃদ্ধিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য অর্থমন্ত্রীর। তার এ লক্ষ্য পূরণে স্বস্তির খবর দিয়েই শুরু হয়েছে অর্থবছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আগস্টে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর চলতি বছরের প্রথম মাসে জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। যা গেল প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগস্টে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা জুলাইয়ে ছিল ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
দেশের এ মূল্যস্ফীতির পরিমাণকে স্বস্তিদায়ক বলছেন বিশ্লেষকরা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে তুলনা করলে এ পরিমাণ আরো কম হতে পারতো বলেও অভিমত তাদের।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে ক্রমান্বয়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক ছিল। এতে আমদানিকৃত ও দেশে উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা গেছে। মাঠপর্যায়ে সামঞ্জস্য থাকার কারণেই গত কয়েকমাসে মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হচ্ছে। তবে ঈদুল আযহা উপলক্ষে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঈদে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। এর ইতিবাচক দিক হলো, এ সময় বণ্টন ব্যবস্থায় একটি পরিবর্তন হয়। এতে অধিকাংশ মানুষের কাছেই টাকা পৌঁছে যায়। আর নেতিবাচক দিক হলো মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সূত্র মতে, আগস্টে খাদ্য খাতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আগের বছরের আগস্টে ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এদিকে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি আগের মাসের (৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ) চেয়ে কিছুটা বেড়ে আগস্টে ৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের বছরের আগস্টে ছিল ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আগস্ট পর্যন্ত একবছরের গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা তার আগের এক বছরে (সেপ্টেম্বর ২০১৪-অগাস্ট ২০১৫) ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ ছিল। এদিকে বিবিএস’র তথ্য অনুযায়ী, শহর অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা বেড়েছে। গত জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে শহর অঞ্চলে খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত উভয় খাতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। তবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমেছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, শহর অঞ্চলে আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা জুলাই মাসে ছিল ৭ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা জুলাইতে ছিল ৬ দশমিক ১১ শতাংশে। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা জুলাইয়ে ছিল ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশে।
শহরাঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বিবিএস পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শহরে বাড়ি ভাড়া, পরিধেয় বস্ত্র, পরিবহন ও গৃহস্থালী পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্য পণ্যে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশে, যা আগের মাসে ছিল ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল বলেন, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি যেটা হচ্ছে, সে সবকিছু মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক এবং সহনীয় পর্যায়ে আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, সরকারী লোকজন ও বাংলাদেশ ব্যাংক যতই কৃতিত্বের দাবিদার হোক না কেন, তাদের নীতিকৌশল অবশ্যই সহায়ক হয়েছে। কিন্তু সারা পৃথিবীতে এখন মূল্য দ্রুত গতিতে নিম্নগামী।
ড. ফরাসউদ্দিন মনে করেন মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক রাখতে শুধু মুদ্রা সরবরাহ নয়, বেসরকারী বিনিয়োগের দিকেও জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, এখনই বাংলাদেশের দ্রুতগতিতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের সুযোগ। কি কি করা গেলে বেসরকারী খাত আরও বেশি বিনিয়োগে যেতে পারবে সেখানে আমাদেরকে যেতে হবে।
সার্বিক মূল্যস্ফীতির বিশ্লেষণ বলছে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে দাম কমলেও খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি শূন্য দশমিক এক দুই শতাংশ বেড়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, চাল আমদানির উপর একটা অতিরিক্ত কর বসানো হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি যদি সহনীয় পর্যায়ে থাকে তাহলোতো কোন হুমকি থাকার কথা নয়। বরং দাম কিছুটা বাড়লে, যদি এই দাম বৃদ্ধির সুফল কৃষক পর্যন্ত পৌঁছায় তাহলে কিন্তু উৎপাদন বাড়বে। যেভাবে রিজার্ভ বাড়ছে তাতে টাকার মান কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতির আশংকা দেখা দিতে পারে। তাই টাকার মান যেন না কমে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইতিবাচক ধারায় মূল্যস্ফীতি

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ