পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গৃহবধূ থেকে রাজনীতি এসেই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে খেতাব পেয়েছেন আপোষহীন নেতার। তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নেতৃত্বগুণেই জয় করেছেন কোটি মানুষের ভালোবাসা; হয়েছেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী। তার হাসিতেই কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটে, তার দুঃখে ব্যথিত হন লাখো জনতা। দেশ ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমান পরিচিত সেই নেত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ১০ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ২৭ এপ্রিল তিনি এই হাসপাতালে ভর্তি হন। এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতায় দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ উদ্বিগ্ন। সবার দাবি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশ পাঠানো হোক। গণমানুষের এই নেত্রীর রোগমুক্তির জন্য দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ নফল নামাজ পড়ছেন, মানত করছেন, রোজা রাখছেন, কোরবানি দিচ্ছেন, দোয়া করছেন।
দেশের সবকিছু ছাপিয়ে এখন সর্বোত্রই চলছে খালেদা জিয়াকে নিয়ে আলোচনা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত একই আলোচনা। তিনি কেমন আছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া কতদূর এগোলো, কোন দেশে যাচ্ছেন- এসব নিয়ে আলোচনা করছেন। তিনি কখন বিমানে উঠবেন, সেটা জানার জন্য মানুষ উদগ্রিব। গণমাধ্যম শুধু নয়, সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে- বিস্তর লেখালেখি, দাবি মতামত প্রদান।
জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। সরকারের অনুমতি পেলে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। খালেদা জিয়া এই মুহূর্তে বিমানে চড়ে বিদেশে যাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থায় আছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুমতি পাওয়ার পর এ নিয়ে ভাবা হবে।
খালেদা জিয়ার করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট এলেও এখন করোনা-পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অক্সিজেন ছাড়া তিনি স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছেন বিদেশে উন্নত চিকিৎসার। চিকিৎসকদের সুপারিশ ও পরিবারের আগ্রহেই কারণে তাকে বিদেশে নিতে এরই মধ্যে সরকারের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। অনুমতির বিষয়টি এখনো বিবেচনাধীন রয়েছে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও এখন অপেক্ষা কেবল সরকারের অনুমতির। বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে অনুমতি চেয়ে শামীম এস্কান্দার আবেদন করার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। এরপর থেকেই খালেদা জিয়ার পরিবার, বিএনপি নেতাকর্মীসহ সকলেই মনে করেছিলেন খুব দ্রুতই বেগম জিয়াকে বিদেশে নিতে পারবেন। কিন্তু এখনো সেটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরপরও প্রতিদিনই বিএনপি নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ খোঁজ নিচ্ছেন তার বিদেশ যাত্রার বিষয়টি।
ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিন বলেন, ম্যাডামের অসুস্থতার সংবাদ শোনার পর থেকেই আমরা উদ্বিগ্ন। চিকিৎসকরা যেহেতু মনে করছে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, আমরাও চাই তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হোক। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার সুস্থতার জন্য সারা দেশের মানুষ দোয়া করছেন, কোরবানিসহ অনেক মানত করছেন, আমাদের বিশ্বাস এতোগুলো মানুষের দোয়া বিফলে যাবে না।
নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, একজন প্রবীণ নাগরিক অসুস্থ তার অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে সরকারের দ্রুত অনুমতি প্রদান করা উচিত।
বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ এখন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সকলেই দোয়া করছেন তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে যান। তিনি বলেন, রিকশা চালক, পাড়ার দোকানদার, এলাকার শ্রমিক, মজুররাও তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। সকলের প্রত্যাশা উনি দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন।
বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী সকল সংগঠনের নেতাকর্মীসহ দেশের আপামর জনসাধারণ চরম উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত বলে জানিয়েছনÑ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম। নেতৃদ্বয় খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার নিমিত্তে তার স্থায়ী মুক্তিসহ প্রয়োজনে দ্রুত বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার এরই মধ্যে বিদেশে তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গিয়েছে। এমতাবস্থায়, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নেতৃবৃন্দ মনে করেন অযথা কালক্ষেপণ না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পরার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সাধারণ মানুষের মধ্যেই আলোচনার মূলবিষয় বেগম খালেদা জিয়া। সর্বত্রই আলোচনা চলছে তিনি কেমন আছেন? তার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইছেন শ্রমিক, কৃষক, গৃহবধূ থেকে শুরু করে রাজনীতির সর্বোচ্চ নেতারাও। চায়ের দোকানে, সরকারি-বেসরকারি অফিসে, ঘরোয়া কিংবা সামাজিক আড্ডায়ও খালেদা জিয়াকে নিয়েই আলোচনা। বেগম জিয়া অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে তাকে নিয়ে। নিজ দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ এমনকি বিরোধী রাজনীতির নেতাকর্মীরাও পোস্ট দিচ্ছেন তার অসুস্থতা নিয়ে। কেউ চাইছেন দোয়া, কেউ করছেন দোয়া। রোজা, ইফতারের পাশাপাশি দোয়া মাহফিলে সুস্থতা কামনা করে করা হচ্ছে দোয়া। পশু কোরবানি, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, মানত করে গরিবের মাঝে অর্থ বিতরণও করছেন সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে।
খালেদা জিয়ার ছোট বোন সেলিমা ইসলাম জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের আছে, তারা সরকারের গ্রিন সিগনালের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে অনুমতি মিললেও খুব দ্রত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া সম্ভব হবে কি-না সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে চিকিৎসক ও দলের নেতাদের মধ্যে। এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়াটা ভালো লক্ষণ নয়। ৬ বা ৮ ঘণ্টার ফ্লাইটে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তার নেই। অক্সিজেন ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতি হয়নি। কিন্তু, এই স্থিতিশীলতা ভালো লক্ষণ নয়।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান শারীরিক অবস্থায় দীর্ঘ উড়োজাহাজ ভ্রমণের ধকল সামলাতে পারবেন কি না, সংশয় প্রকাশ করেছেন তার চিকিৎসকরা। এছাড়া তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি তার পাসপোর্ট নবায়ন, যে দেশে যাবেন সে দেশের ভিসা ও বাংলাদেশ সরকারের অনুমতির ওপর নির্ভর করছে।
যদিও বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনের একটি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের ‘ইতিবাচক সাড়া’ পেয়েছে তার পরিবার। বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র পাওয়া মাত্রই খালেদা জিয়ার পরিবার তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করবে। তবে, কোন হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করানো হবে বা তাকে সেখানে নিয়ে যেতে বিশেষ ফ্লাইট বা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হবে কি-না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রক্রিয়াটির সমন্বয় করছেন। বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকারের ছাড়পত্র পাওয়াটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। কেননা, খালেদা জিয়া দেশ ছাড়তে পারবেন নাÑ এই শর্তেই সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে।
বিদেশ যাওয়ার জন্য অনুমতির সেই আবেদনটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। আজ রোববার সেটিতে মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমাদের মতামত এখনো পাঠাইনি। আজকে (গতকাল) পাঠাব না, আজকে (গতকাল) কোথায় পাঠাব? অফিস তো বন্ধ। আগামীকাল (আজ রোববার) সকালের দিকে আমরা আমাদের মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। আবেদনের বিষয়ে মতামতটা আমরা উনাদের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) জানিয়ে দেব। সিদ্ধান্তটা আপনাদের উনারাই জানাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।