পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রায় বৈশাখ মাস শেষ। এ সময় যেখানে নদ-নদীতে পানি থাকার কথা। গ্রামগঞ্জের খাল-বিল ভরা থাকার কথা। সেখানে পানি নেই, উন্মুক্ত ডোবানালা ও পুকুরে। এ সময়টায় ধানক্ষেতের পাশেই নালা-ডোবা, হাওর-বিল পানিতে থাকত টইটম্বুর। এ পানি দিয়েই বোরো ক্ষেতে সেচ দিতেন কৃষক। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কমায় ভয়াবহ সেচের পানি সঙ্কটে দেশ। গত দুই বছর ধরে দেশের ৫৩ জেলার ২১৬ উপজেলায় সেচ মৌসুমে দেখা দিয়েছে ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকট। মৌসুমের শুরুতেই সোয়া ৪ লাখ নলকূপে পানি উঠছে না। সেচের জন্য অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে মাটির নিচের পানি উত্তোলন করায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গবেষকরা বলছেন, প্রতি বছর ঢাকায় পানির স্তর ১ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যায়। গত ৫০ বছরে ঢাকার পানির স্তর এভাবে নেমে গেছে প্রায় ৭০ মিটার। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্কট মোকাবেলায় মাটির উপরিভাগের পানির ব্যবহার বাড়ানোর দাবি তাদের।
কৃষিনির্ভর বাংলা দেশে শুধু বোরো মৌসুমে সেচের পানি ৭৫ ভাগের যোগান আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, দেশে মোট ব্যবহৃত পানির প্রায় ৭৯ শতাংশ ভূগর্ভস্থ ও ২১ শতাংশ ভূউপরিস্থ। ব্যবহৃত পানিসম্পদের ৯০ ভাগ ব্যবহার হচ্ছেÑ কৃষি ও সেচ এবং শিল্পকারখানায়। এদিকে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, নাটোর, পাবনা ও রাজশাহীতে পানির স্তর গড়ে ৫-২৪ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। সবচেয়ে বেশি নেমেছে রাজশাহী ও নওগাঁ, খুলনা, ময়মনসিংহ অঞ্চলেও সেচের পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, মহানগর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নদীর পানি শোধন করে মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০৩০ সালে শুধু ঢাকা শহরেই পানির দৈনিক চাহিদা হবে ৫০০ কোটি লিটার, আর সারা দেশে চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০ হাজার কোটি লিটারে। কৃষিকাজে নদী খাল বিলের পানির ব্যবহার বাড়াতে ৮ হাজার ৭২২ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করেছে বিএডিসি।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ইনকিলাবকে বলেন, নদী-নালা, পুকুর, ডোবা ও হাওরের উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে পানি সংকট সমাধানে সরকার ডেল্টা প্ল্যান ও এসডিজি অর্জনে গুরুত্ব দিয়েছে। করোনার কারণে বেশিরভাগ কাজ কমে গেছে। তবে পানির অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে থেকে বলা হয়,সারা দেশে গৃহস্থালি ও খাবার পানির চাহিদার ৯৪ শতাংশই ভূগর্ভস্থ উৎস হতে আসে। ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। নদী-খাল খননের পাশাপাশি মাটির ওপরের পানি ব্যবহারে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ভূগর্ভের পানির স্তর দুই থেকে পাঁচ মিটার করে নিচে নামছে। এতে পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ভূমিধস ও মাটি দেবে যাওয়াসহ নানা দুর্ঘটনার।
পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, ভূউপরিভাগ ও ভূগর্ভস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভূগর্ভের পানি মজুদ রাখতে উপরিভাগের পানির ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত না করলে পানি নিয়ে বড় বিপদ খুব সন্নিকটে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) হিসাবে গত বোরো মৌসুমে সারা দেশের ৪ লাখেরও বেশি অগভীর নলকূপে পানি ওঠেনি। গত দুই বছর ধরে দেশের ৫৩ জেলার ২১৬ উপজেলায় সেচ মৌসুমে দেখা দিয়েছে ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সঙ্কট। মৌসুমের শুরুতেই সোয়া ৩ লাখ নলকূপে পানি উঠছে না। এর মধ্যে বগুড়া ও নাটোর, পাবনা জেলায় দেড় লাখ নূলকপে পানি পাচ্ছেন না কৃষক। রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ অঞ্চলেও সেচের পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
খাবার পানি, রান্না, গোসল, সেচসহ সব কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ। সুপেয় ও চাষাবাদের পানির চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে। ১৯৬৮ সালে যখন বাংলাদেশে ডিপ টিউবওয়েল বসানো শুরু হয়, তখন সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ ফুট নিচে টিউবওয়েল বসিয়েই পানি পাওয়া যেত। এখন ১৬০ ফুট বসিয়েও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
বিএডিসির ২০১৬ সালের গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপে দেখা যায়, দেশের মধ্যভাগ ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্তৃত ৪৮ জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ ও খাবার পানি সঙ্কটের আশঙ্কা রয়েছে। বছরের পর বছর গভীর নলকূপ বসিয়ে বোরো মৌসুমে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার সাত উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে।
গত বছরের বিএডিসির ভূগর্ভস্থ পানির জোনিং চিত্র বলছে, সেচ মৌসুমে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় দেশের পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বের ৩১ জেলায় পানির স্তর প্রতি বছর পাঁচ ইঞ্চি থেকে আড়াই ফুট করে নিচে নামছে। তাদের গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ নলকূপ রয়েছে। ১৭ লাখ শ্যালো টিউবওয়েল দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি ওঠানো হয়। এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। আর উত্তোলিত পানির ৮৭ শতাংশ সেচ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে- দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬ কোটি মানুষ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদু কৃষিবিদ বলেন, দেশের কৃষক নদী-নালা, পুকুর ও খাল-বিলের (ভূউপরস্থ) পানি ব্যবহার করে আগে বোরো মৌসুমে সেচ দিত। এখন ভূউপরি স্তরের পানি না পাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে। এর মধ্যে গভীর নলকূপ দিয়ে ১৫ শতাংশ জমিতে সেচ দেওয়া হয়। প্রায় ৬৪ শতাংশ জমিতে সেচ দেওয়া হয় অগভীর নলকূপের মাধ্যমে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।