পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজবাড়ীর গাড়াকোলা গ্রামে অধিকাংশের হাতে এখন সুই-সুতা ও কাপড়। সুইয়ের ফোঁড়ে নান্দনিক নকশা ফুটে উঠছে একেকটা কাপড়ে। যে কাপড় ভাঁজের পর একটি বিশেষ কায়দায় সেলাই করে নিপুণ কারুকাজের মাধ্যমে তৈরি হয় টুপি। আর এইসব টুপি সউদী আরব, কাতার, দুবাই, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি করা হচ্ছে। গত অর্ধযুগ ধরেই দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে রাজবাড়ীর টুপি বিদেশে পাচ্ছে। বছরজুড়ে কারিগররা এই টুপি তৈরি ও রফতানিতে ব্যস্ত থাকলেও ঈদের মৌসুমে এর চাপ বেড়ে যায়। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে, অন্যদিকে, হাজারো অভাবের সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। এসেছে সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য।
টুপি কারিগররা জানান, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদের মৌসুমে টুপি তৈরির চাপ অনেক বেশি থাকে। প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে অর্ধ শতাধিক পরিবারের অসহায় নারী গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরি করে বাড়তি উপার্জনের মাধ্যমে সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এসব নারী তাদের হাতের নিপুণ কারুকাজের মাধ্যমে তৈরি করছে আধুনিক মানের টুপি। প্রবাসে টুপি রফতানিকারক মো. হুমায়ুনের স্ত্রী রোকেয়া বেগম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তার স্বামী প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে ওমান থাকেন। সেখান থেকেই কাপড় আসে। কাপড় কেটে ২০০ থেকে ৫০০ এর মতো টুপি কাটা হয়। কাপড় কেটে ছাপ দিয়ে তাতে নকশা তৈরি করা হয়। টুপিতে সুই সুতা দিয়ে নানা ধরনের নকশা কাটা হয়। পরে তা বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষেই তা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।
টুপি তৈরির কারিগর মোছা. কোহিনুর বেগম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে তিনটি টুপি তৈরি করতে পারেন তিনি। প্রতিটি টুপির মজুরি হিসেবে ৩৫ টাকা পান তিনি। সংসারের কাজের পাশাপাশি টুপি সেলাই করে সংসারের বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। গাড়াকোলা গ্রামের শেফালী বেগম (৩৫)। তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে টুপি তৈরি করেন। তার স্বামী মকবুল ভ্যানচালক। তিন সন্তানের জননী শেফালী বাড়ির উঠানে টুপি তৈরি করছিলেন। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনার কারণে পাইকারী ব্যবসায়ীদের টুপি কেনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন ঈদকে সামনে রেখে টুপি ব্যবসায় কিছুটা জোয়ার এসেছে। ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করছেন আমাদের সাথে।
স্থানীয় মুসল্লি মো. মুরাদ বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের গাড়াকোলা গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়ির নারী পুরুষেরা এই টুপি তৈরিতে যুক্ত। বিদেশে এই টুপি বিক্রি করে টাকা উপার্জন করছে। এই টুপি ওমানে প্রায় বাংলাদেশের টাকায় ৩/৪ হাজারে বিক্রি হয়। নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এলাকার অসহায় নারীরা টুপি তৈরির এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এর ফলে স্থানীয়ভাবে একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরির কাজ করায় তাদের আর্থিক উন্নয়ন ঘটছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, গাড়াকোলা গ্রামের নারীদের নিখুঁত সূচিকর্ম খচিত টুপিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সমাদৃত। গ্রামের অসহায় নারী ও পুরুষ এই টুপি তৈরি করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছে। অন্য সময়ের চেয়ে রমজানে টুপির চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণে শব-ই বরাতের পর থেকে পরবর্তী দেড় মাসে দ্বিগুণ বেশি উৎপাদন হয় টুপি। এই সময়ে আয়ও বেড়ে যায় নারীদের। এবার করোনার প্রভাব টুপি শিল্পেও পড়েছে। তবে এবার লকডাউন কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার কারণে ফের কর্মচঞ্চলতা বেড়েছে টুপির গ্রামগুলোতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।