পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পাকা আম। নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই আসা এই আমগুলো স্বাভাবিকভাবে পাকা নয়, পাকানো। অথচ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। রোজাদাররা ইফতারির জন্য চড়া দামে এসব আম কিনলেও প্রকৃত পাকা আমের কোনো স্বাদ নেই এগুলোতে। এমনকি বেশিরভাগ আমের আঁটিও শক্ত হয়নি। সে কারণে উপরে পাকা, ভেতরে কাঁচা। বিষাক্ত রাসায়নিক কার্বাইড দিয়ে পাকানো এসব আম অতিরিক্ত মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে বাজারজাত করছে। একই অবস্থা লিচু ও কাঁঠালের ক্ষেত্রেও। বাজারে অপরিপক্ক লিচু বিক্রি হচ্ছে সোনারগাঁও ও দিনাজপুরের লিচু হিসাবে। দামও আকাশচুম্বি। একশ’ লিচুর দাম ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে আম পারার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া আছে। সেই অনুযায়ী বাজারে ২০ মে’র আগে আম আসার কথা নয়।
রাজধানীর বাদামতলীর আড়তদাররা জানান, প্রতি বছর এই সময়ে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন মোবাইল কোর্টের অভিযান চলতো। এতে করে অসময়ে পাকা ফল বিক্রির সুযোগ ছিল কম। এবার মোবাইল কোর্টের দেখা নেই। প্রশাসনেরও কোনো নজরদারি নেই। এতে করে অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন বেপরোয়া। এদিকে র্যাব সূত্রে জানা গেছে, কখন কোন অভিযান চালানো হবে সে বিষয়ে প্রতিমাসে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়ে থাকে। এবার আম নিয়ে অভিযানের বিষয়ে এখনো কোনো গাইড লাইন দেয়নি মন্ত্রণালয়গুলো। এরপরেও যেসব জেলায় বেশি পরিমাণে আম চাষ হয় সেখানকার জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে যেন আম ছেঁড়া না হয় সেজন্য কাজ করছেন। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, তরমুজসহ যে ফলগুলো বাজারে রয়েছে সেগুলোর তদারকি সংস্থা মূলত বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদফতর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার কারণ দেখিয়ে কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তারা মূলত মাঠে নেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আমের সঙ্গে দেশীয় অপরিপক্ক কাঁচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এসব আমের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রঙ। পাকা আমের মতো দেখতে হলেও এতে নেই পাকা আমের স্বাদ। কৃত্রিমভাবে পাকানো এ আম মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
রাজধানীর বাদামতলী ছাড়াও কারওয়ানবাজার ও যাত্রাবাড়ী এলাকার নির্দ্দিষ্ট গোডাউনে রেখে ভেজাল কারবারীরা কার্বাইড মিশিয়ে অপরিপক্ক ফল পাকাচ্ছে। পচন ঠেকাতে সেগুলোতে আবার ফরমালিন দেয়া হচ্ছে। এই অসাধু কারবার সবচেয়ে বেশি হচ্ছে যাত্রাবাড়ীতে। সেখানে কয়েকটি গোডাউনে কার্বাইড মিশিয়ে ফল পাকানো হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় সিটি করপোরেশনের পার্কের সামনে এবং আল বারাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গলিতে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের ফলের গোডাউন। এগুলোতে কাঁচা ফল পাকিয়ে ব্যবসা করছে বেশ কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী। এর মধ্যে কয়েকজন হলেন আলম, আমীর, গিয়াস উদ্দিন, জামাল, কালাম, মাসুদ, ইব্রাহিম, নুরুজ্জামান, আল আমীন প্রমুখ। এরা বাজার থেকে আম এনে গোডাউনে রেখে কার্বাইড দিয়ে পাকায়। কৃত্রিম রঙ করে আমগুলোকে রঙিন করে যাত্রাবাড়ীর পাইকারি আড়তে বিক্রি করে। সূত্র জানায়, প্রশাসনের নাকের ডগায় এ ভেজাল কারবারির জন্য পুলিশকে নিয়মিত টাকা দিতে হয়। ভেজাল কারবারিদের পক্ষ হয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে কাবিলা নামের এক ব্যক্তি। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে হাজী ইউনুস আলী সুপার মার্কেটেও রয়েছে ফলের গোডাউন। এই গোডাউনে কৃত্রিমভাবে ফল পাকানোর ব্যবসা করে জাকির, শহীদ, মাইনুল, রাজু, মামুন ও খলিল। এদের নেতৃত্বে আছে তোরাব আলী। পুলিশকে ম্যানেজ করার দায়িত্বও তার। সূত্র জানায়, এদের অনেকেই ইতোপূর্বে মোবাইল কোর্টের অভিযানে জরিমানা গুনেছে, খেটেছে জেল। তারপরেও এরা আগের মতোই বেপরোয়া। এ ছাড়া কারওয়ান বাজার ও এর আশপাশের এলাকার কয়েকটি গোডাউন ও আড়তে কাঁচা ফলে কার্বাইড মেশানো হচ্ছে।
বাদামতলী ফল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অপরিপক্ক ফলের মধ্যে আম ছাড়াও এসেছে কাঁঠাল, লিচু এবং জামরুল। দেখলেই বোঝা যায়, এসব ফল এখনো ঠিকমতো পাকেনি। লিচু পাকলে দেখতে টসটসে লাগে। সেখানে মনে হচ্ছে জোড় করে ছিঁড়ে আনা হয়েছে। কাঁঠালের বিষয়ে জানতে চাইলে এক আড়তদার বলেন, এই কাঁঠাল নিয়েন না। খেতে পারবেন না। আপনি কাঁঠাল খাইতে চাইলে আরও এক মাস পরে আসেন। আম-লিচু কিছুই কিনেন না এখন। সবই অপরিপক্ক। তাহলে এগুলো আনছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আড়তদার। আমরা কিছু আনি না। এখানে এনে দিয়ে যায়। আমরা বিক্রি করি। যাদের দরকার তারা নিয়ে যায়। আমরা কাউকে জোর করে দিই না। যদি এসব অপরিপক্ক ফল না আসতো তাহলে আমরা বিক্রি করতাম না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আড়তদার জানান, এর আগে সপ্তাহে তিনদিন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসতো। তখন অপরিপক্ক ফল-ফলাদি উঠতো না। এখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নেই। তাই আবার অপরিপক্ক ফল ওঠা শুরু হয়েছে। এ জন্য অভিযান নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। যাত্রাবাড়ীর আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, বাঙ্গি, তরমুজ, আনারস, জামরুল, সফেদা, তালবীজ, পেয়ারা, লিচু, আম আর জাম সাজানো রয়েছে জামান ফল ভান্ডারে। মালিক নুরুজ্জামান বলেন, এর মধ্যে আম, তালবীজ আর লিচু ছাড়া নিঃসন্দেহে যে কোনোটাই কিনতে পারেন। আমগুলো অপরিপক্ক, ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে। লিচুগুলো এখনো পরিপূর্ণ হয়নি আর তালবীজ খেয়েও স্বাদ পাবেন না। সফেদায় আরও কিছুদিন পর পরিপূর্ণ স্বাদ আসবে। তিনি বলেন, এই ফলগুলো বেশি দামের আশায় পরিপক্ক হওয়ার আগেই গাছ থেকে পেড়েছে। কারা এগুলো নিয়ে এসেছে? জানতে চাইলে নুরুজ্জামান বলেন, অনেক সময় কৃষক নিজেই বেশি মুনাফার আশায় অপরিপক্ক ফল নিয়ে আসে। আবার ব্যবসায়ীরাও কোনো কোনো সময় জোর করে নিয়ে আসায়। আবার ব্যবসায়ীরাও এখন আগেই গাছ কিনে রাখে। ফলে তার কর্তৃত্বটা বেশি থাকে।
আম কিনে প্রতারিত হয়েছেন আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, গত ২৭ মার্চ গুলশান-২’র একটি গলি থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে আম কিনেছিলাম। বাসায় এনে ইফতারির আগে কাটতে গিয়ে দেখি, আমে কোনো আটি নেই। এমনকি গন্ধও নেই। এটা যে আম নামক ফল তার কোনো কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। কোনো কোনোটার বাইরে শক্ত, আবার কোনোটার ভেতরে কালো হয়ে গেছে। তার দাবি, রাজধানীতে অবিলম্বে অভিযান পরিচালনা করা দরকার।
এর আগের বছরগুলোতে অপরিপক্ক ফলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চললেও এবার নেই কেন? জানতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, রোজায় ভেজাল ট্যাং, ভেজাল সেমাইসহ ভেজাল খাদ্য নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। সেরকম কিছু পেলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, শুধু অভিযান চালিয়ে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। চাহিদা থাকলে যোগান আসবেই। আমাদের উচিত চাহিদা বন্ধ করা। এখন কেন আমরা আম কিনতে যাই? তিনি বলেন, নিজের গাছের আমটাও তো পাকেনি এখনো। তাহলে বাজারে এসব কীভাবে আসছে বুঝতে হবে। এরপরেও বাজারে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।