পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : কোরবানি পশুর চামড়ার দরপতনে লোকসানের মুখে পড়েছে মওসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছে এ অঞ্চলের লাখ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে এবার প্রায় ৫ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা। এসব চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে অনেকটা পানির দরে। সকাল থেকে কিছু মওসুমী ব্যবসায়ী চড়া দামে দুপুরের পর তা লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছে। এতে করে তাদেরও মাথায় হাত।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে কোন টেনারী না থাকায় ঢাকার টেনারী মালিকদের কারসাজিতে চট্টগ্রামে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া ঈদের আগে হঠাৎ করে লবণের দাম বেড়ে যাওয়া ও সরকারিভাবে চামড়ার দাম কমিয়ে দেয়ার নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে বাজারে। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের হিসেবে চট্টগ্রাম তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারসহ এ অঞ্চলে এবার ৫ লাখের বেশি গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া কোরবানি হয়েছে। কোরবানি পশুর চামড়া বিক্রি করে পাওয়া টাকার পুরোটাই ব্যয় হয় সমাজের দরিদ্র, অসহায়, এতিম, মিসকিন ও বিভিন্ন মাদরাসা শিক্ষায়। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হয়েছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে চামড়া ব্যবসায়ীদের তিনটি সংগঠনের নেতারা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ বছর রাজধানীতে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ৫০ টাকা, রাজধানীর বাইরে ৪০ টাকা ঘোষণা দেন। এ ছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ২০ টাকা, বকরির চামড়া দাম প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা ও মহিষের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেঁধে দেয়া এ মূল্যের চেয়ে কমমূল্যে চামড়া বিক্রি হয়েছে।
মওসুমী ব্যবসায়ীরা গ্রাম-গঞ্জ এবং পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে। সকালে কিছুটা ভাল দাম থাকলেও দুপুরের পর দাম পড়ে যায়। মওসুমী ব্যবসায়ীদের অনেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সংগ্রহ চামড়া বিক্রি করতে পারেনি। অনেকে বাধ্য হয়ে লোকসানে এসব চামড়া বিক্রি করেছে।
নগরীর অক্সিজেন চালতাতলী এলাকা থেকে চামড়া সংগ্রহকারী মওসুমী ব্যবসায়ী আব্দুল গাফ্ফার বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামের মধ্যেই আমরা চামড়া সংগ্রহ করেছি। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা এবার চামড়া কিনতে আগ্রহী নন। আমি গড়ে ১২ থেকে ১৩ শ’ টাকার মধ্যে গরুর চামড়া কিনে অনেকটা জোর করে বাকিতে এক হাজার টাকা দরে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। আমার অন্তত অর্ধ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। অপর চামড়া ব্যবসায়ী মোর্শেদও জানালেন একই কথা। তিনি জানান, গরুর চামড়া লোকসান দিয়ে বিক্রি করা হলেও বকরীর চামড়াতো ট্যানারি মালিকরা কিনছেন না। ফলে যারা বকরী বা ছাগলের চামড়া কিনেছে তারা পুরোটাই লস দিয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আফতাব খান বলেন, মওসুমী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দরে চামড়া কিনে আমাদের ওপর লোকসানের দায় চাপাচ্ছেন। আমরা এর চেয়ে বেশি দরে চামড়া কিনে ট্যানারি মালিকদের কাছে লোকসান দিতে পারবো না। তিনি বলেন, ৭শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত দরে চামড়া কিনছেন তারা।
মদিনা ট্যানারির মালিক আবু মোহাম্মদ বলেছেন, চামড়া দাম ছাড়াও অন্য আরো কারণে চামড়া ক্রয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে ট্যানারি মালিকরা। এক সময় সারাদেশের মধ্যে চট্টগ্রামের ট্যানারি চামড়া সংগ্রহে এগিয়ে ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের দু’টি ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আবু মোহাম্মদ আরও বলেন, তার মালিকাধীন মদিনা ট্যানারিতে ৩০ লাখ পিস চামড়া মজুদ রয়েছে এবং ট্যানারি বন্ধ থাকার কারণে এগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তার মতে এসব কারণে এ ব্যবসার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে এবার কোরবানিতে জবাই করা গরু-ছাগলের প্রায় পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা যাবে বলে আশা করছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. সেকান্দার মিয়া বলেন, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটিসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকা থেকে গরু-মহিষ-ছাগল মিলিয়ে পাঁচ লাখের মতো কাঁচা চামড়া আড়তদাররা সংগ্রহ করবেন বলে আশা করছি। কোরবানির দিন দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আড়তে চামড়া আসা শুরু হয়। এসব চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণের পর প্রক্রিয়াজাত শেষে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হবে। চট্টগ্রামে সমিতির ১১২ জন সদস্য ছাড়াও ৭০ জন আড়তদার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।