Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের দিনের এমপির নেতৃত্বে কারারুদ্ধ ব্যবসায়ীর বাড়ি লুট!

প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার : সাতক্ষীরা শহর উপকণ্ঠের মাগুরার ধণাঢ্য ব্যবসায়ী জেলহাজতে অন্তরীণ থাকা মিলন পালের সম্পদ লুণ্ঠনে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য মিসেস রিফাত আমিন ও তার ছেলে রুমন। ইতোমধ্যে গরু, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ লুটপাট করেছেন সংসদ সদস্য। সবশেষ কারাগারে অন্তরীন মিলনের নিকট থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ারও চেষ্টা করেছেন তারা।
গত মঙ্গলবার সকালে এলাকার পুরুষেরা সবাই যখন ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে গিয়েছেন, সেই সুযোগে সংসদ সদস্য মিসেস রিফাত আমিন তার ছেলে রাশেদ সরোয়ার রুমনসহ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মিলন পালের মাগুরা বৌ বাজারস্ত বাগানবাড়িতে যান। সাংসদের উপস্থিতিতে বাড়ির গেটের তালা ভাঙা ও খোলা হয়। পরে তারা ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন কাগজপত্র ছাড়াও টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন সেখানে রাখা একটি অস্ত্রও নিয়ে যান তারা।
গ্রামবাসীকে রিফাত আমিন বলেন ‘আমি এসপি সাহেবের অনুমতি নিয়ে এসেছি’। তাছাড়া ওসিকে ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বলেও দিয়েছেন’। তবে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন এবং ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা দুজনেই বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন ‘এটা মিথ্যা কথা। আমরা কাউকে এ ধরনের কাজের অনুমতি দেইনি’।
এদিকে ঘটনার পর সাতক্ষীরা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি স্বপন কুমার শীল, গোষ্ঠ বিহারী সরকার এবং নিত্যানন্দ আমিনসহ কয়েক নেতা মিলনের বাড়িতে যান। তারা তালা ভাঙ্গাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় তারা সাংসদ রিফাত আমিনের এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মিলন পরিবারের দাবি, মিলন জেলে রয়েছে এই সুযোগে তাদের শহরতলির মাগুরা গ্রামের বাগানবাড়ির সম্পদ লুটপাট শুরু হয়েছে। কয়েকদিন আগে রুমন বাগানবাড়ির খামারের ১৩টি নেপালি জাতের মূল্যবান গরু ধরে নিয়ে গেছেন। ঈদ উপলক্ষে এর দুটি নিজেদের জন্য রেখে বাকি ১১টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। একই দিনে ফের এসে রুমনের কথিত স্ত্রী বেলী পুলিশের উপস্থিতিতে মিলনের এলিয়ান মডেলের প্রাইভেটের গøাস ভেঙে জিনিসপত্র বের করে নিয়ে গেছেন। মিলনের বাবা দেবদাস পাল বলেন, মিলনকে মুক্ত করানোর নামে রুমন তার মার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এরপর আরও দশ লাখ টাকা না হলে এলিয়ান প্রাইভেট কারটি চেয়েছেন।
এসব বিষয়ে জানতে সাংসদ মিসেস রিফাত আমিনের সাথে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে দুই দফা কথা হয়। তিনি বলেন ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার। আমি এখন আওয়ামী লীগের জন্য অনেক কাজ করছি। এটা আওয়ামী লীগের কিছু লোক সহ্য করতে পারছেন না। তাই তারা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি ভাবছি, প্রধানমন্ত্রীকে বলে এদের সাইজ করে দেবো’।
মঙ্গলবার বিকেলে রাশেদ সরোয়ার রুমন কারাগারে আটক মিলন পালের সাথে দেখা করতে যান। সেখানে তার কাছে ২৫০ টাকার একটি সাদা স্ট্যাম্প ধরে তাতে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসতেই তা কেড়ে নেন কারারক্ষীরা। জব্দ করেন স্ট্যাম্পটি। অজ্ঞাত ওই যুবককে জেল গেট থেকে দ্রæত সরিয়ে দেন তারা।
জেল সুপার আবু জাহেদ জানান ‘কয়েকদিন আগে নারী সাংসদ মিসেস রিফাত আমিন টেলিফোনে তাকে অনুরোধ করেছিলেন স্ট্যাম্পে মিলনের সই করিয়ে দিতে। এজন্য স্ট্যাম্পসহ পুত্র রুমনকেও পাঠিয়েছিলেন’। সুপার বলেন ‘এটা আইনসিদ্ধ নয়। কেবলমাত্র জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সংশ্লিষ্ট কোনো আদালতের নির্দেশনা ছাড়া সই করানো বেআইনি, কারাবিধির লংঘন’। তিনি জানান ‘আমি রুমনকে ফেরত পাঠিয়েছিলাম’।
এ প্রসঙ্গে মিলনের স্ত্রী শম্পা বলেন ‘তারা এখন নতুন ফন্দিতে জেলে থাকা আমার স্বামীর সই স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এ কারণেই জেল থেকে সই আনার চেষ্টা করেছেন তারা’।
এর আগে সোমবার সকালে রুমন মাতালাবস্থায় এক নারীসহ একই এলাকা থেকে জনতার হাতে আটক হন। গণপিটুনিতে মারাত্মক আহত হন তিনি। পরে যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করেন।
তার আগে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় টেন্ডার সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভা চত্বরে এমপি পুত্র রুমন ও তার বাহিনীর হাতে প্রহৃত হন আ.লীগ নেতা জুলফিকার রহমান উজ্জ্বল। একই সময়ে মারপিটের শিকার হয়েছেন উজ্জ্বলের সহযোগী মিলন ও সালাম নামের আরও দুই যুবক। তাদের সবাইকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উজ্জ্বল জেলা যুবলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমানে সদর উপজেলা আ’লীগের একজন সদস্য।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরার মিলন জুয়েলার্সের মালিক মিলন পাল সোনা চোরাচালান মামলায় গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে আটক রয়েছেন। মিলন জেলহাজতে যাওয়ার আগে রুমনের সাথে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক ছিল। এদিকে বেসামাল অবস্থায় গাড়ি চালানো, সাংসদের নিজের নামে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে যেখানে সেখানে রাত কাটানো ও যাকেতাকে মারধর করা রুমনের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। কিছুদিন আগে তার মায়ের ব্যবহৃত জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়িসহ তিন তরুণিকে নিয়ে শ্যামনগরের একটি রিসোর্টে ধরা পড়ে জেল খাটেন রুমন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদের দিনের এমপির নেতৃত্বে কারারুদ্ধ ব্যবসায়ীর বাড়ি লুট!
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ