Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে মহানগর গোধূলী লাইনচ্যুত যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহানগর গোধূলী লাইনচ্যুত হয়ে দশ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয় বুধবার গভীর রাতে। আর এর মধ্যে ঈদের দ্বিতীয় দিনে হাজার হাজার যাত্রীকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়। দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম-ঢাকা ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের সবক’টি নির্ধারিত ট্রেনের সিডিউলে বিপর্যয় নেমে আসে।
ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেনটি ওইদিন বিকাল সাড়ে ৩টায় পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় পেছনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এরপর দুর্ঘটনা কবলিত চারটি বগি রেখে বাকি ১৪টি বগি নিয়ে ট্রেনটি বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার পথে রওনা দিলেও পেছনে লাইন বন্ধ থাকায় রেলপথে চট্টগ্রাম সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত বগি সরিয়ে লাইন মেরামতের পর রাত ১টা ৫০ মিনিটে গুরুত্বপূর্ণ এই রেলপথে আবার চলাচল শুরু হয় বলে রেলওয়ের বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তা ফিরোজ ইফতেখার জানান। বুধবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মহানগর প্রভাতী ওই দুর্ঘটনার কারণে পথে আটকে ছিল পুরোটা সময়। লাইন খোলার পর প্রথমে মহানগর প্রভাতী চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিথা ও ঢাকা মেইল, সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ও জালালাবাদ এক্সপ্রেস এবং চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম ছেড়ে যায় তিন থেকে ১০ ঘণ্টা বিলম্বে।
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম পৌঁছায় প্রায় ১০ ঘণ্টা দেরিতে, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ২০মিনিটে। চট্টলা এক্সপ্রেস সাড়ে সাত ঘণ্টা দেরি করে গতকাল সকাল পৌনে ৬টায় এবং চাঁদপুর থেকে আসা সাগরিকা এক্সপ্রেস ১০ ঘণ্টা দেরিতে ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রাম আসে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহগামী মেইল ট্রেন নাসিরাবাদ এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয় বলে ফিরোজ ইফতেখার জানান।
যারা টিকিট না পাওয়ায় এবং ভিড়ের কারণে ঈদের আগে বাড়ি যেতে পারেনি তারাই মূলত ঈদের পরদিন কিছুটা নির্বিঘেœ বাড়ি যেতে এসব ট্রেনে উঠেছিলেন। তবে দুর্ঘটনার কারণে সব কয়টি ট্রেনের সিডিউল ভেঙে পড়ায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
রেল স্টেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকালে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঠিক সময়ে সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও অন্য ট্রেনগুলো ছাড়তে কিছুটা দেরি হয়। মহানগর গোধূলীর দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) ফিরোজ ইখতেখারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে ‘দ্রæত সময়ের মধ্যে’ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, একই দিন সকালে সীতাকুÐের ফৌজদারহাট স্টেশনের কাছে একটি মালবাহী ট্রেন (কন্টেইনারবাহী ট্রেন) দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় ঢাকামুখী ‘আপ লাইন’ বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে সীতাকুÐ ফৌজদারহাট স্টেশনের কাছে ফৌজদারহাট বাজারে কন্টেইনারবাহী ট্রেনটি মূল লাইনে ওঠার সময় ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। পূর্ব রেলের বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সকালের দুর্ঘটনার কারণে পাহাড়তলী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ‘আপ লাইনের’ পরিবর্তে ‘ডাউন লাইনে’ ট্রেন চালানো হচ্ছিল। বিকালের দুর্ঘটনায় তিনটি বগি কাত ও একটি বগি লাইন থেকে সরে গেছে বলে জানান তিনি।
সীতাকুÐে লাইনচ্যুত ট্রেনের
ইঞ্জিন উদ্ধার হয়নি দু’দিনেও
সীতাকুÐ উপজেলা সংবাদদাতা : সীতাকুÐের ফৌজদারহাটে মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে দুই ট্রেন চালক আহত হয়েছে। এতে একটি লাইনে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর উদ্ধারকারী ট্রেন এসে দুর্ঘটনা কবলিত ইঞ্জিন উদ্ধারের চেষ্টা করলেও একই দিন পাহাড়তলী স্টেশনে অপর একটি ট্রেনের ৪টি বগি দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ায় উদ্ধার কাজ শেষ না করেই ফিরে যায় সেটি। ফলে ঘটনার পর দু’দিন অতিবাহিত হলেও ইঞ্জিনটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
গত বুধবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ফৌজদারহাট রেলওয়ে স্টেশনের কয়েক’শ গজ দক্ষিণে চট্টগ্রাম বন্দর সংযোগ লাইন থেকে আসা ঢাকামুখী একটি মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন হঠাৎ লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এতে ঐ ইঞ্জিন চালনার দায়িত্বে থাকা চালক (লোক মাস্টার) মহিন উদ্দিন (৫৯) ও সহকারী চালক মাহিদুল ইসলাম (৩৫) আহত হন। এছাড়া ইঞ্জিনটি রেল লাইনের উপর পড়ে যাওয়ায় আপলাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঘটনার খবর পেয়ে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, রেল পুলিশ, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে আপলাইনটি বন্ধ রেখে উদ্ধারকারী ট্রেন (রেকার) আনার ব্যবস্থা করেন এবং ডাউন লাইন দিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী সকল ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করেন। এতে আপ ও ডাউন ট্রেনগুলিকে কুমিরা অথবা পাহাড়তলী স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য ট্রেনটিকে পাস করানোর মাধ্যমে রেলযোগ স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে এমনিভাবে একটি দুর্ঘটনাকবলিত ইঞ্জিন উদ্ধারের চেষ্টা ও অন্যদিকে রেল লাইন স্বাভাবিক রেখে ট্রেন চালানোর মধ্যে বিকালের দিকে পাহাড়তলী এলাকায় ডাউন লাইনে মহানগর গোধূলীর ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এতে আপ ও ডাউন দুটি লাইনেই যাতায়াত বন্ধ হয়ে চট্টগ্রামের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রামে মহানগর গোধূলী লাইনচ্যুত যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ