Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কলম্বিয়ার আধা সামরিক বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের মাদক বিরোধী লড়াই-১

প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : কলম্বিয়ার ক্যালাবাজোর অরণ্যময় জনপদে এক কম্যুনিটি সভা থেকে জুলিও হেনরিকুয়েজ সান্তামারিয়াকে অপহরণ করে আধাসামরিক গুÐাদল। এক টয়োটা পিকআপের পিছনে তারা ছুঁড়ে ফেলে তাকে। তারিখটা ছিল ২০০১ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি। তারপর হত্যা করা হয় তাকে।
কিছুদিন ধরেই হেনরিকুয়েজ কোকার পরিবর্তে ক্যাকাও-এর মত বৈধ ফসল চাষের জন্য কৃষকদের সংগঠিত করছিলেন। মাদক ব্যবসার ফলে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ অবসানের প্রান্তপর্বে এসে বর্তমান কলম্বিয়া সরকার মাদক বিরোধী কৌশল হিসেবে ক্যাকাও চাষ বৃদ্ধির চেষ্টা করছিল। কিন্তু হারমান জিরাল্ডো সেরনা নিজে বা তার লোকজনের এটা পছন্দ ছিল না।
প্রথমদিকে স্বল্পকালীন মারিজুয়ানা চাষী থেকে জিরাল্ডো এল প্যাট্রন বা মাদক সম্রাট এবং আধা সামরিক বাহিনীর কমান্ডারে পরিণত হন। তার বিদ্রোহী বিরোধী মিশন কলম্বিয়ার পর্বতময় উত্তর উপকূলে এক খুন-খারাবি ও অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।
হেনরিকুয়েজের একমাত্র শত্রæ ছিলেন জিরাল্ডো। জিরাল্ডোর আরেক নাম ছিল ড্রিল। কিশোরী ও বালিকাদের প্রতি অদম্য যৌন লালসার কারণে এ নাম হয়েছিল তার। হেনরিকুয়েজ হয়ে উঠেছিলেন মাদক অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক। তাকে হত্যা করা হলেও তার পরিবার ছিল এ লড়াইয়ে অনমনীয়। তাই ২০০৮ সালের ১৩ মে আরো ১৩ জন আধা সামরিক নেতা সাথে জিরাল্ডোকেও কলম্বিয়া থেকে তুলে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে মাদক অপরাধের বিচার শুরু হয়। তাতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে হেনরিকুয়েজের পরিবার।
মাদক সম্রাট ও তার সহযোগীদের কলম্বিয়া থেকে গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ছিল এক বিস্ময়কর ব্যাপার। তাদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ আনা হয়। এ বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার ব্যাপক চেষ্টা চলে। তবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলভারো ইউরাইবের দৃঢ়তা ও মাদক বিরোধী লড়াইকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার প্রদান করার ফলে তাতে সুবিধা হয়নি।
আটক মাদক অপরাধীদের আইনজীবীরা ১৪ জনের গ্রেফতারের ঘটনাকে ১৪ পিনোচেটকে রফতানি বলে আখ্যায়িত করেছেন। হেনরিকুয়েজের পরিবার তাদের অন্তত একজনকে দায়ী প্রতিপন্ন করার প্রতিজ্ঞায় অনড়। হেনরিকুয়েজকে যখন হত্যা করা হয় তখন তার মেয়ে বেলা হেনরিকুয়েজ চাসিনের (৩২) বয়স ছিল ১৬। আগামী মাসে তিনি জিরাল্ডোর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনে সাক্ষ্য দেবেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেনরিকুয়েজের পরিবারই প্রথম যারা ভিকটিমের পরিবার হিসেবে কোনো আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের অপরাধের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে সাক্ষ্য দেবেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধানে বলা হয়, জিরাল্ডোর সহযোগীদের সাথে বড় ধরনের মাদক চোরাচালানের অপরাধ সত্তে¡ও তুলনামূলকভাবে কম কঠোর আচরণ করা হয়েছে যদিও তারা সবাই গণহত্যা, গুম এবং গোটা গ্রামের অধিবাসীদের গৃহহীন করার মত মারাত্মক অপরাধে জড়িত।
কলম্বিয়ার এ কয়েক ডজন আধা সামরিক বাহিনীর লোক তাদের কারাদÐের মেয়াদ শেষ করার পর গড়ে আবার সাড়ে সাত বছর করে দÐ ভোগ করবে। যেসব নেতারা গণপ্রত্যর্পণের শিকার হয়েছে তাদের টন টন কোকেন পাচারের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে গড়ে ১০ বছর করে কারাদÐ ভোগ করতে হবে।
কয়েকজনের জন্য বর্তমান কারাদÐ ভোগের পর বিশেষ দÐের ব্যবস্থা রয়েছে। কলম্বিয়া সরকার সবাইকে দেশে ফিরে চাইলেও দু’জন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি লাভ করেছে। তাদের সাথে তাদের পরিবারগুলোও যোগ দিয়েছে। আরো ৩ জন একই সুবিধা চাইছে, অন্যরাও সে পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে।
কলম্বিয়ান কংগ্রেসের এক সদস্য আলিরিও ইউরাইব মুনোজ বলেন, পাবলো এসকোবারের প্রাধান্যের দিনগুলোতে মাদক অপরাধীরা বলত যে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কারাগারে থাকার চেয়ে তারা কলম্বিয়ায় কবরে থাকতে পছন্দ করে। তবে এখন তাদের কাছে প্রত্যর্পণ একটা ভালো চুক্তি বলে গণ্য হতে পারে।
গত ৫২ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সমর্থন নিয়ে কলম্বিয়া সরকার বামপন্থী বিদ্রোহীদের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকার আধাসামরিক বাহিনীকে সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে। ভূমি মালিক ও মাদক চক্র তাদের নিজেদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার কয়েক দশ পর সরকার তাদের উপর থেকে সরকারী অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০০ সালের দিকে তাদের অব্যাহতি দেয়ার আগে মিলিশিয়ারা বামপন্থী গেরিলা ও মাদক চোরাচালানিদের প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে দমন চালাত।
আধা সামরিক বাহিনীর নেতাদের প্রত্যর্পণের ৮ বছর পর এখন কলম্বিয়া সরকার তাদের প্রধান শত্রæ কলম্বিয়ার বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী ( ফার্ক)-এর সাথে এক শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এ চুক্তির ব্যাপারে ২ অক্টোবর ভোট গ্রহণের পর দেশটি এখন ফার্কের অপরাধ ও শাস্তি সম্পর্কে এক বিতর্কের মেরুকরণের মধ্যে রয়েছে। এবার কেউই বিচারের নামে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা বলছে না।
স্প্যানিশ ভাষায় কলম্বিয়ার আধা সামরিক বাহিনীর কর্মকাÐের ইতিহাস ‘রিসাইকলড ওয়ার’-এর লেখক মারিয়া তেরেসা রন্ডেরোস বলেন, তবে দেশের ইতিহাসে আধা সামরিক বাহিনীর অধ্যায়ের অবসান হয়নি এবং এখনো সে ব্যাপারে সব অজানা রয়ে গেছে। কেউ জানে না তার সদস্যদের ভাগ্যে কি ঘটেছে।
বছরের পর বছর বিচার বিভাগ মিলিশিয়াদের ঘটনা গোপন রেখেছে। শুধু স্পর্শকাতর দলিলপত্রই আটক রাখা হয়নি, মৌলিক তথ্যাদিও গোপন রাখা হয়েছে এবং কোনো কোনো সময় সরকারী নথি থকে জিরারেডার মত আসামীদের নাম মুছে ফেলা হয়েছে।
টাইমস পত্রিকা সাক্ষাতকার, সম্প্রতি অবমুক্ত মামলার ব্রিফ, শুনানির অনুলিপি, অভ্যন্তরীণ সরকারী দলিলপত্র এবং কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে ৪০ জন প্রত্যর্পিত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ও তাদের সহযোগীদের মামলা পরীক্ষা করে দেখে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস। (চলবে)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কলম্বিয়ার আধা সামরিক বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের মাদক বিরোধী লড়াই-১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ