Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৯৮ ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ

পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউন প্রায় ২হাজার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৫১ পিএম

পুরান ঢাকার তিনটি কর অঞ্চলে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে প্রায় ২হাজার। এরমধ্যে ৯৮ শতাংশ গোডাউনই মাঝারি ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ। কেমিক্যাল গোডাউনের এই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন(ডিএসসিসি)। গত বৃহস্পতিবার ডিএসসিসির পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তালিকাটি পাঠানো হয়েছে। ডিএসসিসির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি দুর্ঘটনার পরেও পুরান ঢাকাকে কেমিক্যালের গোডাউনমুক্ত করার আশ্বাস দেয়া হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও এই সুপারিশ থাকে। কিন্তু এসব প্রতিশ্রæতির ফুলঝুরি হয়েই পুরান ঢাকার বাতাসে ওড়ে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ঢাকা মহানগরের আবাসিক এলাকা থেকে অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য বিসিকের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে আরেকটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালের ৩ জুন শিল্প সচিব বলেছিলেন, কেমিক্যাল পল্লিতে সাততলা ১৭টি ভবন তৈরি করে গুদাম সরানো হবে। পরের বছর ২ ফেব্রæয়ারি কেরানীগঞ্জে ২০ একর জায়গায় পল্লি স্থাপন করার কথাও বলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনও পুরান ঢাকায় হাজার হাজার কেমিক্যালের গোডাউন রয়েছে এবং এর অধিকাংশই অবৈধ।
সর্বশেষ আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানশনে কেমিক্যাল গোডাউন থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৫জন মৃত্যুবরন করে। এ সময় অগ্নিদগ্ধ হয় ২৩জন। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীতে ঘটে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারান ১২৪ জন মানুষ। এর ৯ বছর পর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ঘটে আরেক মর্মান্তিক ঘটনা। যাতে প্রাণ হারান ৮০ জনের বেশি। এই সবগুলো ঘটনার জন্য দায়ী কেমিক্যাল বা রাসায়নিকের গুদাম।
নাম প্রকাশ না করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, পুরান ঢাকার কর অঞ্চল ৩, ৪ ও ৫ এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯২৪টি কেমিক্যাল গোডাউনের সন্ধান পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তালিকা অনুযায়ী, কর অঞ্চল-৩ এ ১৩০১টি, কর অঞ্চল-৪ এ ৫৮৫টি এবং কর অঞ্চল-৫ এ ৩৮টি কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এর মধ্যে কর অঞ্চল-৩ ইসলামবাগে পাঁচশো’র মতো কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কেমিক্যালের ধরন এবং ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় মাঝারি আকারের ঝুঁকিতে থাকা কেমিক্যাল গোডাউনের সংখ্যা রয়েছে ৯৮ শতাংশ। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ০.৫ শতাংশ, নি¤œ ঝুঁকিপূর্ণ গোডাউনের সংখ্যা ১.৫ শতাংশ।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে এসব তথ্যসহ গোডাউনে রাখা রাসায়নিক দ্রব্যাদির ধরন উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তালিকা তৈরি করে। পরে তাদের মূল্যায়নসহ গত ২৬ এপ্রিল তালিকাটি সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়। এরপর যাচাই শেষে বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তালিকাটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এই তালিকা তৈরিতে সহায়তা করেছে বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, শিল্প মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
এর আগে গত বছরের ৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনের তালিকা তৈরির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে চলতি বছর জানুয়ারি মাসে সেই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। তখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কেমিক্যাল গোডাউনের ধরন উল্লেখ করে আবারও তালিকা পাঠাতে বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কেমিক্যালের ধরন উল্লেখসহ সর্বশেষ একহাজার ৯২৪টি গোডাউনের এই তালিকা তৈরি করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাকা

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ