Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তবুও নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ

সড়ক-মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট ভোগান্তি বিড়ম্বনা

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট। ৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ২৪ ঘণ্টা। বাসের জন্য টার্মিনালে দিনভর অপেক্ষা। লঞ্চ ও ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়। পথে সীমাহীন ভোগান্তি-বিড়ম্বনা। তারপরও নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপন বলে কথা। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল শুরু হয়েছে। ভোগান্তির শুরুও সেদিন থেকেই। আজও অব্যাহত থাকবে শেষ মুহূর্তের ঢল। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব মতে, এবার ঈদ উদযাপনের জন্য ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ঈদুল ফিতরে এ সংখ্যা ছিল ৬০ লাখের বেশি। এদিকে ঘরমুখো মানুষের ঢলে ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। ব্যস্ত রাজধানীর চিত্র পাল্টে গেছে।
আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের জন্য ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। প্রিয়জনের সাথে ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে আনন্দকে ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। এই ছুটে চলা অনেকটাই আনন্দের হতো যদি যাত্রাপথে কোনো ভোগান্তি না থাকত। ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরে ফেরার ভোগান্তি অতীতেও ছিল। কিন্তু এবার সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। এবার দেশের সবগুলো মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভয়াবহ যানজট ঈদযাত্রার ভোগান্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঈদযাত্রা শুরু হলে ওই দিন থেকে সেই যে যানজটের সৃষ্টি গতকাল পর্যন্ত তা নিরসন হয়নি। গতকাল রবিবার ঢাকা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় ৬০ কিলোমিটার যানজটে শত শত যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থাকে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার ঘরমুখো যাত্রী। ভুক্তভোগি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভোরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, সফিপুর, কোনাবাড়ী, ভোগড়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। হাইওয়ে পুলিশের কোনাবাড়ীর ইন্সপেক্টর হোসেন সরকার জানান, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হাইওয়ে ফাঁড়ির পাশে গতকাল ভোরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এর প্রভাব এসে পড়ে গাজীপুরে। এলেঙ্গা থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, সফিপুর, কোনাবাড়ী, ভোগড়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে, চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল রোববার সকাল থেকে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা থেকে ৬ ঘণ্টায় ময়মনসিংহে পৌঁছে রফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী ইনকিলাবকে বলেন, সকালে মহাখালী টার্মিনাল থেকে বাসে রওনা করেন তিনি। বাসটি গাজীপুর চৌরাস্তায় পৌঁছতেই চার ঘণ্টা সময় লাগে। এরপর পথিমধ্যে থেমে থেমে যানজট ছিল। সব মিলে ৬ ঘণ্টায় ময়মনসিংহে পৌঁছেন তিনি। পথিমধ্যে সীমাহীন ভোগান্তি ছাড়াও নানা বিড়ম্বনার কথা জানান তিনি। বলেন, এত কষ্টের পরেও বাড়ি ফিরে মনে হচ্ছে সব ভুলে গেছি। অনেক দিন পর বাবা-মা, ভাই-বোনদের সাথে ঈদ করতে এসেছিÑএর আনন্দটাই আলাদা। গাজীপুরের ভোগড়া এলাকায় হানিফ পরিবহনের যাত্রী রাশিদুল ইসলাম জানান, ভোরে টঙ্গী থেকে তিনি গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। কিন্তু যানজটের কারণে টঙ্গী থেকে গাজীপুরের ভোগড়া আসতে সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। নাওজোড় মহাসড়ক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুস সালাম বলেন, থেমে থেমে কিছু যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গাজীপুর ও আশপাশের কারখানাগুলো ছুটির পর শ্রমিকরা প্রায় একই সময়ে বাড়ি ফিরতে গিয়ে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানান, মহাসড়কের যানজট নিরসনের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছে কমিউনিটি পুলিশ ও রোভার স্কাউট সদস্যরা।
এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল যানজট থাকলেও যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে গেছে বলে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে। মেঘনা ও গোমতি সেতুর দুই প্রান্তে যানজট থাকলেও তা সহনীয় পর্যায়ে বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা। রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে বাসের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার পালা গতকাল শেষ হয়নি। বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি দিনভর অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঠাকুরগাঁওয়ের এক যাত্রী জানান, তার বাস ছাড়ার কথা ছিল শনিবার রাত ১১টায়। সেই বাস ঠাকুরগাঁও থেকে ফিরেছে রোববার বেলা দেড় টায়। আধা ঘণ্টা পর বাসটি আবার যাত্রী নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা করেছে। বাসটি গন্তব্যে কখন পৌঁছাবে তা কেউ জানে না। বাসে ওঠার পর ওই যাত্রী টেলিফোনে বলেন, বাসে উঠেছি, এখন এটা ঈদের আগে পৌঁছলেই চলবে।
ঘরমুখো যাত্রীদের একটা বড় অংশ ট্রেনের যাত্রী। তারাও ছুটছেন ট্রেনের বগিতে, ছাদে। গতকাল বিমান বন্দর স্টেশনে দাঁড়িয়ে সিরাজগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, স্টেশনে এত মানুষ আগে কখনও দেখিনি। এত মানুষ কীভাবে যাবে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, মনে হচ্ছে গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ (রোববার) ভিড় অনেক বেশি। ঈদকে কেন্দ্র করে ট্রেনের বড় ধরণের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে গতকাল সকালে। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের এয়ার ব্রেকিং সিস্টেম বিকল হয়ে যাওয়ায় ট্রেনটি আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকে। এতে করে অন্যান্য ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটে। ঈদের আগে এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা। ঢাকা থেকে দেশের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে সবগুলো ট্রেনের ভিতরে এবং ছাদে গাদাগাদি করে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছে মানুষ। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, শেষ মুহূর্তে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
ঘরে ফিরতে এত ভোগান্তি, এত কষ্ট, এত বিড়ম্বনা। তারপরেও থেমে নেই মানুষের ঢল। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাওয়ার আকুলতা ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষকে থামাতে পারেনি কোনোদিনও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তবুও নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ