Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘালয় থেকে মৌলভীবাজার হয়ে ত্রিপুরায় ভারতীয় জ্বালানি পরিবহন শুরু

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এস এম উমেদ আলী (মৌলভীবাজার চাতলাপুর থেকে ফিরে) : ভারতের মেঘালয় থেকে তামাবিল স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশের ভেতরের সড়ক ব্যবহার করে চাতলাপুর স্থলবন্দর দিয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে ভারতীয় জ্বালানি পরিবহন শুরু হয়েছে।
গত শনিবার বিকেল ৩টায় জ্বালানি তেলভর্তি ১০টি ট্যাংক লরি তামাবিল স্থলবন্দরে পৌঁছায়। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল সোয়া ৪টায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে তেলভর্তি ৯টি ট্যাংক লরি ও ১টি গ্যাসবাহী লরি যাত্রা শুরু করে। তেলভর্তি লরির বহরে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশের ১৪০ কিলোমিটার রাস্তা পার করে নিয়ে আসা হয় এবং রাত সোয়া ১১টায় মৌলভীবাজারের চাতলাপুর স্থলবন্দরে পৌঁছায়।
জ্বালানি তেলের ১০ লরি ও ১০ জন চালক, সহকারী চালক ও সফরসঙ্গী ভারতের অয়েল কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের ভারতের ত্রিপুরার মনু চেকপোস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে বরণ করেন ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প, বাণিজ্য ও শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী। এ সময় ত্রিপুরার উনকোটি জেলার সরকারী উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ছাড়াও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। জ্বালানি তেলের লরি চাতলাপুর চেকপোস্টে গিয়ে পৌঁছার পর ইমিগ্রেশন ও শুল্ক বিভাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ত্রিপুরায় প্রবেশ করে। মৌলভীবাজার শহর ও শমশেরনগর বাজার অতিক্রম করার সময় শত শত উৎসুক জনতা ভারতীয় তেলবাহী গাড়িকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় ট্যাংকারগুলো উত্তর আসামের বঙ্গাইগাঁও থেকে যাত্রা করে মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে সিলেটের তামাবিল-মৌলভীবাজার-শমশেরনগর-চাতলাপুর হয়ে প্রায় ৭ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসহরে প্রবেশ করে। ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পর খালি যানবাহনগুলো বাংলাদেশের চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে একই পথে ভারতে ফিরে যাবে।
তামাবিল শুল্ক স্টেশনের ইমিগ্রেশন অফিসের ইনচার্জ এসআই রুনু মিয়া জানান, তেলবাহী লরির প্রতিটিতে ৯ টন তেল গ্যাসবাহী লরিতে ৭ টন গ্যাস রয়েছে। তিনি বলেন, বন্যায় ভারতের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সাময়িকভাবে বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করা হচ্ছে। শনিবার মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে ১০টি লরি ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঈদের পর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো জ্বালানি পরিবহন করা হবে বলে জানান।
জানা গেছে, সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর হয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করে তামাবিল-সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর-মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলাপুর স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের কৈলাশহরে যাবে ভারতের জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংক-লরি। ভারত প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮০টি লরিতে জ্বালানি পরিবহন করতে পরবে। সমান সংখ্যক খালি লরি একই দিনে নির্ধারিত সড়ক ব্যবহার করে আসামে ফেরত যেতে পারবে। এতে ভারতকে বাংলাদেশের ১৪০ কিলোমিটার সড়ক ব্যবহার করতে হবে। এই সড়ক ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছ থেকে টনপ্রতি মাত্র ১৪২ দশমিক ৮০ টাকা মাশুল পাবে বাংলাদেশ।
ভারী বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসে ভারতের আসাম থেকে ত্রিপুরা সড়ক (এনএইচ ৪৪) যোগাযোগ অনুপযোগী হয়ে পড়ায় মানবিক কারণে প্রতিবেশী দেশের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে জ্বালানি পরিবহনে (ট্রানশিপমেন্ট) ভূখ- ব্যবহারের সাময়িক ওই সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। দিল্লির অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। উক্ত সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং ভারতের পক্ষে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক মতে, মেঘালয়ের ডাউকি (তামাবিল-জাফলং) সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে ডিজেল, কেরোসিন, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসসহ জ্বালানিবাহী ভারতীয় লরিগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে আবার ভারতে যাবে।
সিলেট শহরের পূর্ব প্রান্তের শাহপরান বাইপাস সড়ক দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ-রাজনগর সড়ক হয়ে মৌলভীবাজার শহরের মধ্যদিয়ে লরিগুলো মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনা হয়ে শমসেরনগর-চাতলাপুর সড়ক হয়ে কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যর কৈলাশহর পৌঁছাবে।
 ট্রানশিপমেন্টের জন্য নির্ধারিত প্রায় ১৪০ কিলোমিটার ওই সড়ক ব্যবহারের জন্য প্রতি কিলোমিটারে প্রতিটন ১ টাকা ২ পয়সা হারে বাংলাদেশকে মাশুল দেবে ভারত। স্বাক্ষরিত সমঝোতার চুক্তির প্রাথমিক মেয়াদ চলতি বছরের ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত। এটি বাড়ানোর প্রয়োজন হলে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক সপ্তাহ আগে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফের আলোচনা হবে। উভয়ে সম্মত হলে মেয়াদ বাড়াতে কোনো বাধা থাকবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে কলকাতা থেকে ত্রিপুরায় ৩৫ হাজার টন চাল পাঠানোর জন্য মানবিক কারণে বাংলাদেশের ভূখ- ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। নেপালে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশকেও ভূখ- ব্যবহার করে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোর সুযোগ দিয়েছিল ভারত।
মৌলভীবাজারের পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আনসার মিয়া ও জেলা শ্রমিক পরিবহনের সভাপতি সঞ্জিত দেবসহ পরিবহনের সাথে যুক্ত নেতৃবৃন্দ বলছেন, সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার-চাতলাপুর সড়ক মজবুত মহাসড়ক হিসেবে গড়ে ওঠেনি। তারা বলেন ভারী যানবাহন বহনে সক্ষম নয় উক্ত সড়কগুলো। প্রতিবেশী দেশের ভারী যানবাহন চলাচল করলে এই সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদাহরণ হিসেবে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলেন-সম্প্রতি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুরে কুশিয়ারা সেতুতে ত্রুটি দেখা দিলে সংস্কার কাজের জন্য শায়েস্তাগঞ্জ-শেরপুর বাইপাস সড়কে যানচলাচল ১১ দিন যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপশি মিরপুর-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়। এসময় মৌলভীবাজার শহরের উপর দিয়ে মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট সড়কে যান চলাচল করে। এতে এ সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। অতি অল্প সময়ে এসব সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়, যা এখনও পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। এখন ভারতীয় জালানি তেলবাহী লরি চলাচল করলে সড়কগুলো আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেঘালয় থেকে মৌলভীবাজার হয়ে ত্রিপুরায় ভারতীয় জ্বালানি পরিবহন শুরু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ