Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আজিমপুরে নিহত আব্দুল করিমের আসল নাম শমসের ওরফে শমসেদ

সে আত্মহত্যা করেছে : ময়না তদন্ত রিপোর্ট : উদ্ধার ৩ শিশু ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আজিমপুরে নিহত জঙ্গি করিমের আসল নাম শমসের ওরফে শমসেদ হোসেন। পুলিশের অভিযানকালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। ওই বাসাটি থেকে উদ্ধার হওয়া পুত্র শিশুটি শমসেদের। অন্য দুই শিশু হচ্ছে মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদের। জঙ্গি আস্তানা থেকে ৪টি পিস্তল, ৫০ রাউন্ড গুলি, কিছু বিস্ফোরক, চারটি ল্যাপটপ ও তিন লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মেডিকেল মর্গে নিহত জঙ্গির লাশের ময়না তদন্ত হয়েছে।
গতকাল সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী আজিমপুরে নিহত জঙ্গি করিমের আসল নাম শমসের ওরফে শমসেদ। পিতার নাম মোসলেহ উদ্দিন। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার মেহেরচন্ডি। আবদুল করিম হচ্ছে শমসেদের সাংগঠনিক নাম। এনআইডিতে তার ঠিকানার জায়গায় লেখা, ৬৩০ নং সিটি করপোরেশন, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। শমসেদ হোসেনের  এনআইডি নম্বর- ৮১৯২২২৬৩৩৯১৫৩। তার ১৪ বছর বয়সী ছেলে ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলে লেভেল এইটে পড়ে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটি জানায়, তারা বাবা-মা ঘন ঘন বাসা চেঞ্জ করতো। বারিধারা (বসুন্ধরা) থেকে রূপনগর, সেখান থেকে কল্যাণপুর, তারপর আজিমপুরে আসে তারা। জঙ্গি করিম  গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের সহযোগী।
উল্লেখ্য, গত শনিবার সন্ধ্যায় আজিমপুরের বিজিবি সদর দফতরের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ২০৯/৫ নম্বরের হাজী কায়সারের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তখন নারী জঙ্গিরা অতর্কিতে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। নারী জঙ্গিদের নিক্ষিপ্ত মরিচরে গুড়া ও ছুরিকাঘাতে ৫ পুলিশ সদস্যরা আহত হন। ওই অভিযানে নেতৃত্বদানকারী ছানোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, যখন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা ওই বাসায় অভিযান চালায় তখন তারা সেখানে জঙ্গি করিমের লাশ এবং দুই নারী জঙ্গিকে আহত অবস্থায় পায়। অপর নারী জঙ্গি পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। তিন নারী জঙ্গিকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারা হলোÑ শাহেলা, শারমিন ও জেবুন্নাহার শিলা। এদের মধ্যে জেবুন্নাহার শিলা মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহিদের স্ত্রী।
আত্মহত্যা করেছে জঙ্গি শমসের : চিকিৎসক
জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা জঙ্গি শমসেদ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। নিহতের লাশের ময়না তদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ একথা জানান। তিনি আরো বলেন, আত্মহত্যাই করেছে জঙ্গি শমসেদ। তার গলার বামপাশে গভীর কাটা ছিলো। ওই ক্ষতটি ছিলো লম্বায় ৩ ইঞ্চি এবং চওড়া ও গভীরতায় দেড় ইঞ্চি। ধারালো অস্ত্রের আঘাত সে নিজেই এ কাজ করেছে। এছাড়া জঙ্গি শমসেদের ডান হাতে বোমা বিস্ফোরণের চিহ্ন ছিলো। তার শরীরে ৫টি আঘাত ছিলো। তবে সে মারা গেছে গলার আঘাতের কারণেই। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। আত্মঘাতী হওয়া জঙ্গি শমসেরের ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার থাই মাসল, রক্ত ও ইউরিনও সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া আত্মহত্যার সে আগে কোনও ড্রাগ নিয়েছিলো কী না, তা জানার জন্য মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ করিমের লাশের সুরতহাল শেষে মর্গে পাঠায়।
৩ শিশু সন্তানের কথাও ভাবেনি জঙ্গিরা
ঢামেকে নিয়ে আসা গুলিবিদ্ধ তিন নারী জঙ্গি নিজ তিন শিশু সন্তানের কথাও ভাবেনি জঙ্গিরা। জঙ্গি আস্তানায় নিজেদের সঙ্গেই তারা রেখেছিল তিন শিশু সন্তানকে। আজিমপুরে অভিযানের পর পুলিশ তাদের তিন শিশুকে উদ্ধার করেছে। এক শিশুর বয়স মাত্র এক বছর। অন্যদের বয়স ছয় থেকে আট বছরের মধ্যে। তিন শিশুকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া তিন শিশুর মধ্যে ছেলে শিশুটি হচ্ছে জঙ্গি করিমের। অন্য দুই শিশু হচ্ছে জঙ্গি মেজর জাহিদুল ইসলামের। অভিযানের পর শিশুদের ভয়ার্ত দেখা গেছে। এই জঙ্গি শমসেদ ওরফে করিমই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে ব্যবহার করে জঙ্গিদের আস্তানা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্নস্থানে বাসা ভাড়া নিতো। এর আগে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও জঙ্গি করিমকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
আটক নারী জঙ্গিরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য
আজিমপুর অভিযানের মূল নেতৃত্বদানকারী কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিরোধে তারা এলাকাভিত্তিক ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ ও সন্দেহভাজনদের সন্ধানে ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় আজিমপুরের বিজিবি সদর দফতরের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন ২০৯/৫ নম্বরের হাজী কায়সারের বাড়িতে যান তারা।
ওই বাড়ির নিচে গিয়ে তারা বাড়িওয়ালা কোনতলায় থাকেন জানতে চাইলে কয়েকজন বলেন, দ্বিতীয়তলায়। সেই কারণেই তারা ওই বাড়ির দ্বিতীয়তলায় গিয়ে দরজার কড়া নাড়েন। এ সময় এক নারী দরজা খোলেন। পুলিশ সদস্যরা জানতে চান বাড়িওয়ালা কোনতলায় থাকেন। এ সময় তারা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দাঁড়ান বলে ভেতরে চলে যায়। এর কয়েক মুহূর্ত পরেই তারা হঠাৎ পুলিশ সদস্যদের চোখে-মুখে মরিচের গুঁড়া ছুড়ে মারেন এবং ছুরিকাঘাত করেন। সে সময়ের অবস্থা বর্ণনা করে ছানোয়ার হোসেন বলেন, মরিচের গুঁড়া চোখে-মুখে পড়ায় হতবিহ্বল হয়ে পুলিশ সদস্যরা দৌড়ে নিচে নামেন। এ সময় তাদের চিৎকারে অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এলে নারী জঙ্গিরা তাদের ওপরও ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। এ পর্যায়ে জঙ্গি করিম তাদের ওপর বোমা ছুড়ে মারে। নারী জঙ্গিরা আত্মঘাতী দলের সদস্য। তারা যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় তখন তারা কাঁচ ভেঙে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। সে কারণে তারা আহত হয়েছে। ভেতরে অনেক কাঁচ ভাঙা পাওয়া গেছে। এছাড়াও ওই বাসা থেকে ৪টি পিস্তল, ৫০ রাউন্ড গুলি, চারটি ল্যাপটপ ও  তিন লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে।
এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় মামলা হয়েছে।
নিহত জঙ্গি শমসেরের প্রকৃত তথ্য জানার জন্য হন্যে হয়ে ফিরছে পুলিশ
রাজশাহী ব্যুরো : শনিবার রাজধানীর আজিমপুরে নিহত জঙ্গি করিমের পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুযায়ী তার আসল নাম মো. শমসের উদ্দিন। পিতার নাম মোসলেহ উদ্দিন। বাড়ি রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মেহেরচন্ডি গ্রামে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়ার পর রাজশাহী মহানগর পুলিশ তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য হন্য হয়ে ফিরছে। মেহেরচন্ডি এলাকায় তার বা তার স্বজনদের খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও রাজপাড়া জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইফতে খায়ের আলম বলেন, শমসের হোসেনের বাড়ি রাজশাহীতে এমন তথ্য তাদের কাছে আসার পর অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কিন্তু এর কোনো সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না। বিভ্রান্ত করার জন্য জঙ্গিরা সব সময় ছদ্মনাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে থাকে। তার ক্ষেত্রেও এমনটিই ঘটে থাকতে পারে। এর পরও বিভিন্ন সোর্স থেকে পুলিশ এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে। কোনো তথ্য পাওয়া গেলে অবশ্যই তা জানানো হবে। শনিবার রাতে আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় শমসের। তখন পুলিশ তার নাম করিম বলে জানিয়েছিলো। রোববার সকালে প্রকৃত পরিচয় পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। এ সময় তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে বলে তথ্য আসলে তোড়জোড় শুরু হয় মহানগর পুলিশের মধ্যে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আজিমপুরে নিহত আব্দুল করিমের আসল নাম শমসের ওরফে শমসেদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ