পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : এবার কুরবানির ঈদে দেশী গরুর দিকে ঝুকে পড়েছেন ক্রেতারা। গরুর হাটে ঘুরে সে চিত্র পাওয়া গেল। ঢাকার পশুর হাটগুলোতে কিছু ভারতীয় সাদা গরু দেখা গেলেও সে সবের ক্রেতা খুবই কম। ক্রেতারা দেশী গরুর প্রতিই বেশি আগ্রহী। দামে একটু বেশি পড়লেও দেশী গরু কিনে ক্রেতারা খুশিমনে ঘরে ফিরছেন। ভারতীয় গরু কম আসায় খামারী ও বিক্রেতা উভয়েই খুশি। বিক্রেতা ও খামারীরা বলছেন, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হলে এবং এভাবে দেশী গরুর প্রতি ক্রেতারা আগ্রহী হলে আগামীতে দেশের খামারীরাই কোরবানির পশু এবং দেশের গোশতের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
জানা যায় বাংলাদেশে গরুর চাহিদার ৭০ ভাগ পুরণ করে দেশীয় গরু। মাত্র ৩০ ভাগ গরু আসে ভারত থেকে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয় বাংলাদেশে গরু যাওয়া বন্ধ হওয়ায় ভারতই অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বছরে যার পরিমাণ ভারতীয় রুপিতে ৩১ হাজার কোটি এবং বাংলাদেশী টাকায় ৩৯ হাজার কোটি। অর্থাৎ ভারত প্রতিবছর বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধ পথে গরু বিক্রী করে ৩৯ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যেত। এবার ঈদে ভারতীয় গরু না আসায় সে টাকা দেশেই থাকছে।
কয়েকদিন আগে বিজিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সীমান্ত ব্যাংক উদ্বোধনের সময় বিজিবির ভুয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আপনারা শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বিজিবির সুনামকে অক্ষুন্ন রেখেছেন। সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার ও সীমান্ত অপরাধ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এবং চোরাইপথে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা কমে এসেছে।’ সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা হ্রাস পাওয়ায় দেশী গরুই এবার ঈদের বাজারে বিক্রী হচ্ছে দেদারসে। পশুর হাটে ভারতের কিছু সাদা গরু দেখা গেলেও সেগুলোর ক্রেতা খুবই কম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, এই ঈদুল আযহায় একটু বেশি দাম দিয়ে কোরবানীর পশু কেনার ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এতে দেশীয় গবাদি পশু পালনকারীরা ভালো দাম পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে গরু পালনের হার বাড়বে। তাদের দেখাদেখি অন্যান্যরাও গরুর খামারের প্রতি আগ্রহী হবে। দেশের অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে শুধু গরু প্রতিপালনের মাধ্যমেই। ফলে প্রতিবছর গরুর জন্য ভারতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যেত সেটা দেশেই থেকে যাবে।
ঈদুর আযহায় দেশে কোরবানিতে কত গরুর প্রয়োজন হয় সে বিষয়ে গবেষণাভিত্তিক কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সারা বছরের চাহিদার অর্ধেক গরু জবাই হয় কোরবানিতে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ৮৬ লাখ ২২ হাজার গরু-মহিষ জবাই হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭২ লাখ গরু। এর অর্ধেক ধরলে ঈদুল আযহায় কোরবানিতে গরুর চাহিদা ৩৫-৩৬ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে দেশে এখন গরু রয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ। এর একটি বড় অংশ গাভি ও কম বয়সী। প্রায় ২৫ লাখ গরু কোরবানী করার উপযোগী। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন বাকি ১০ লাখ গরুর চাহিদা পূরণের জন্য কিছু গাভিও বাজারে চলে এসেছে। নেপাল, ভুটান, মায়ানমান থেকেও কিছু গরু এসেছে। তবে ভারত থেকে সামান্য কিছু গরু এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরে দেশে মোট গরুর চাহিদার ৭০ শতাংশের জোগান দেয় দেশীয় খামারিরাই। বাকি ৩০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। ভারতীয় গরু দামে কম হওয়ায় গত এক দশকে বাংলাদেশে গরু প্রতি-পালনের হার তেমন বাড়েনি। গত কোরবানির ঈদের পর থেকে ভারত থেকে সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় খামারীরা গরু প্রতিপালনের হার বাড়িয়ে দেয়। এক হিসবে দেখা যায় প্রতিবছর ভারত থেকে বছরে ১৫ থেকে ১৮ লাখ গরু বাংলাদেশে আসত। কোরবানির আগে এই আমদানি অনেক বেড়ে যেত। তবে গত দুই বছর খুব কম গরু বাংলাদেশে এসেছে। বরং নেপাল, ভুটান বা মিয়ানমার থেকে বৈধ পথে কিছু গরু এসেছে। আর দেশের কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুরসহ প্রায় অর্ধশত জেলায় গরুর খামার করা হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের কৃষকরা গরু প্রতিপালনের প্রতি জোর দিয়েছেন।
ভারতীয় গরুর ওপর নির্ভরশীল এমন প্রচারণা দীর্ঘদিন থেকে থাকলেও ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ওই বছর ডিসেম্বরে বিএসএফের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গরু পাচার বন্ধের নির্দেশ দেন। তখন থেকেই মূলত বাংলাদেশে ভারত থেকে গরু আমদানি কমে যায়। বিজিবির তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার গরু-মহিষ আমদানি হয়েছে। ২০১৪ সালে আমদানি হয়েছিল ২০ লাখ ৩২ হাজার গরু-মহিষ। তবে এ বছর এই পরিমাণ খুবই কম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতোদিন ভারতীয় গরুর অবৈধ প্রবেশের কারণে কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে এতদিন গবাদি শিল্প দাঁড়াতে পারেনি। ভারত যদি বাংলাদেশে গরু রফতানি/চোরাচালানের মাধ্যম প্রবেশ বন্ধ রাখে তাহলে গবাদিপশু শিল্পে বাংলাদেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। দেশের চাহিদা মেটাতে পোল্ট্রি খামারের পাশাপাশি জেলায় জেলায় মৎস্য খামারও গড়ে উঠেছে। অনেক শিক্ষিত তরুণ লেখাপড়া শেষে চাকরি না পেয়ে এসব খামার প্রতিষ্ঠা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন; বেকারদের কর্মসংস্থান করেছেন। এ খামারগুলোর মাছ মাংস দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। গরু-মহিষ পালনের বাংলাদেশ উত্তম যায়গা। বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে এবং চরাঞ্চলে গরু পালনের চারণভূমি। কক্সবাজার, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম,গাইবান্ধা, রাজশাহী, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার গরুর খামারের পাশাপাশি নদীর চরকে কেন্দ্র করে গরু-মহিষের বাতান গড়ে ্রুঠতে পারে। বিভিন্ন মিল-কারখানায় দুধ সরবরাহ এবং ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য দেশের কৃষকদের মধ্যে গরু প্রতিপালনের প্রবণতা বেড়ে গেছে গত দুই বছরে। বাণিজ্যিকভাবেও গরু প্রতিপালন করা হচ্ছে। দেশের নদী বিধৌত এলাকায় হাজার হাজার চরে লাখ লাখ হেক্টর জমি পড়ে থাকে। এসব জমিতে সবুজ ঘাস হয়। সরকারি উদ্যোগ এবং ব্যক্তি মালিকানায় ওইসব চরে গো-ফার্ম গড়ে তোলা গেলে হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ শিং দু’বছর আগে ভারতের গরু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে কঠোর নির্দেশ কার্যত বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।