Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উগ্রপন্থা পরিহার করুন : হজের খুতবায় শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস

লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১০:৪৯ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : প্রায় ১৫ লাখ মুসলিম লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর করে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজ পালন করেছেন। তারা নিজের জীবনের সকল প্রকার পাপের জন্য মার্জনা কামনার পাশাপাশি নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বশান্তির জন্য আল্লাহপাকের কাছে হৃদয় নিংড়িয়ে দোয়া করেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামেরায় উগ্রতা ও উগ্রপন্থা পরিহারসহ চরমপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মসজিদুল হারামের প্রধান ইমাম ও খতিব শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস আরাফাতের ময়দানে সমবেত হাজীদের উদ্দেশে খুতবা প্রদান করেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে তিনি খুতবা শুরু করেন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আরাফার খুতবা দিলেন নতুন খতিব। সউদী আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আশ শায়খ স্বাস্থ্যগত কারণে খুতবা দেওয়া থেকে অবসর নিলে শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইসকে নতুন খতিব নির্বাচন করা হয়।
খুতবা প্রদানকালে মসজিদে নামিরায় উপস্থিত ছিলেন মক্কা শরিফের গভর্নর প্রিন্স খালেদ বিন ফায়সাল আল সউদ, গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আশ শায়খসহ সউদী আরবের সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও আমন্ত্রিত বিশিষ্টজনরা।
নতুন খতিব শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস লিখিত খুতবা পাঠ করেন। ৪৫ মিনিটব্যাপী খুতবা শেষ হয় স্থানীয় সময় দুপুর ১টায়।
হজের খুতবার শুরুতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা, নবী করিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিদায় হজের ভাষণ বিশ্ববাসীর জন্য শিক্ষণীয়
হজের খুতবায় শায়খ সুদাইস বলেন, আল্লাহ তায়ালার মেহমান হাজিদের সঙ্গে পবিত্র স্থান জাবালে রহমতে এসে একত্রিত হয়েছি। এজন্য আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করছি। আমরা এজন্য কৃতজ্ঞ যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র এই দিনে এই পবিত্র স্থানে একত্রিত হয়ে তার কাছে দোয়া করার সুযোগ দান করেছেন।
খুতবায় তিনি বলেন, এই পবিত্র স্থানেই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণ দেন। সেই ভাষণে বিশ্ববাসীর জন্য শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে।
‘যে গালি-অভিশাপ দেয়, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়’
তিনি বলেন, ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে, ইসলামে অজ্ঞতা-মূর্খতা কোনোটারই স্থান নেই। ভুলেও কাউকে গালি দেওয়া যাবে না। যে গালি-অভিশাপ দেয়, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।
তিনি বলেন, প্রিয় উপস্থিতি! মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই পবিত্র স্থানে দাঁড়িয়ে, এই জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেছিলেন। নবী বলেছেন, আমরা সবাই মুসলমান। মুসলমান কাকে বলে? যত কঠিনই হোক না কেন, অথবা আমাদের মনঃপূত হোক বা না হোক, আল্লাহ যা নির্দেশ করেছেন, যে তার সেই নির্দেশের অনুগামী হয় সেই মুসলমান।
হে আল্লাহর মেহমানবৃন্দ! আমরা সবাই জানি যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য এই দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। আমাদের নিঃশ্বাস বায়ু সীমিত। সকল জীবকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য আমাদের উচিত হলো, আমাদের এই সীমিত সময়কে সবচেয়ে ভালো কাজে ব্যয় করে, দুনিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
উগ্রতা পরিহার করতে হবে
ইমাম ও আলেমদের উদ্দেশে আবদুর রহমান আস সুদাইস বলেন, আমরা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত। আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি, ভুলে গেলে চলবে না। মানুষকে দ্বীনের পথে আনতে হবে সুন্দর হৃদয় দিয়ে। বলপ্রয়োগ করে ধর্ম প্রচার করা যাবে না। উগ্রতা পরিহার করতে হবে। ইসলাম প্রচারে সব মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।
খতিব আরও বলেন, আরব-অনারবের কোনো পার্থক্য নেই। জাতি ও দেশভেদের পার্থক্য ইসলাম সমর্থন করে না। এটা নবীর শিক্ষা। তিনি এখানে দাঁড়িয়ে এটা বলেছিলেন।
শায়খ সুদাইস বলেন, মুসলমানরা এক অঙ্গভুক্ত। একজনের থেকে আরেকজনকে আলাদা করার সুযোগ নেই। পরস্পরের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে। পরস্পরের মঙ্গল কামনা করতে হবে। বয়ানে তিনি ফিলিস্তিন, ইরাক ও ইয়েমেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন এবং তাদের মুক্তি কামনা করেন।
তিনি বলেন, মুসলমানরা ভাই-ভাই। আমাদের সেভাবে চলতে হবে। ইসলাম মানবতার ধর্ম, সহানুভূতির ধর্ম। ইসলাম গ্রন্থিত হয়েছে ন্যায়বিচার দ্বারা, সততা দ্বারা ও ভালো ব্যবহার দ্বারা। এটা আমাদের মানতে হবে। আপনারা এটা মানবেন, আপনারা নিরাপদ ভূমিতে যেভাবে চলছেন, হজপরবর্তী জীবনে সেভাবেই চলবেন।
যৌবনে গা না ভাসানোর পরামর্শ তরুণদের
যুবকদের লক্ষ করে তিনি বলেন, ইসলামের প্রচার ঘটেছে তোমাদের মতো যুবকদের হাত ধরে। তোমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি সেটা ভুলবে না। যৌবনে গা ভাসিয়ে চলবে না। অনেক তরুণ ইসলামের মূল শিক্ষা ভুলে ভিন্ন স্থান থেকে ভুল ইসলাম শিখছে। খতিব তাদের সঠিক ইসলামের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
বিশ্বব্যাপী চলমান সন্ত্রাসবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে খতিব বলেন, সারাবিশ্ব সন্ত্রাসবাদের জাঁতাকলে পিষ্ট। এটা কাম্য নয়। সন্ত্রাসীরা সমাজকে অস্থির করে তুলছে, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
নারীদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে
খুতবায় তিনি নারীর প্রতি সহানুভূতি প্রদশর্নের কথা বলেছেন, তাদের সকল অধিকারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেছেন। বিশ্ব নেতাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, মানবতার প্রয়োজনে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। আলেমদের রাসূলের উত্তরসূরি হিসেবে আখ্যায়িত করে মানুষকে বিভক্ত না করে, ইসলামের সঠিক বিষয় শেখানোর কথা বলেছেন। মানুষের প্রতি ইসলামের আহ্বানকে সহজ করে উপস্থাপনের পাশাপাশি দলাদলিমুক্ত থাকতে বলেছেন।
সংবাদে মিথ্যা না মেশানোর আহ্বান
নতুন খতিব হজের খুতবায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেন, মানুষের চারিত্রিক বিষয়টি মনেপ্রাণে গুরুত্ব দেবেন। সংবাদে মিথ্যা মেশাবেন না। মিথ্যা প্রচার করবেন না। সত্য গোপন করে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। মানবতার উপকার হয়, সমাজে শান্তি-স্বস্তি প্রতিষ্ঠিত হয় এমন বিষয় প্রচারের পাশাপাশি ইসলামি আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার করবেন।
পুরো খুতবায় ধর্মীয় উগ্রতা ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান নতুন খতিব। মক্কাকে নিরাপদ নগরী উল্লেখ করে এর নিরাপত্তা যেন অটুট থাকে, সে দোয়াও করেন।
ভাষণে শায়খ সুদাইস আরাফা দিবসের তাৎপর্যের নানা দিক তুলে ধরেন। স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় খুতবা শেষ হয়। খুতবায় সুন্নাতের প্রতি গুরুত্বারোপের সঙ্গে সঙ্গে হজ পরবর্তী চার দিনের কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে বলে দেন। সবার উদ্দেশে তিনি বলেন, ভালো কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করবেন। আল্লাহর ইবাদতে বেশি সময় কাটাবেন, নামাজকে গুরুত্ব দেবেন। নবীর প্রতি দরূদ পড়বেন, তার শাফায়াত প্রত্যাশা করবেন।
বয়ানে তিনি ইসলামের চার খলিফার নাম উল্লেখ করেন এবং তাদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
ভাষণের শেষ অংশে দোয়ায় তিনি বিশ্ব শান্তি কামনা করে মুসলমানদের ঐক্য প্রত্যাশা করেন। আত্মশুদ্ধি কামনা করেন। আল্লাহর গুণবাচক নিয়ে নিয়ে মানবতার মঙ্গল কামনা করেন। এসময় কান্নার আওয়াজ শোনা যায় আরাফার মাঠ থেকে। দোয়ায় তিনি নবীর দেখানো পথে চলার শক্তি কামনা করেন। উপস্থিত হাজীদের জন্য আল্লাহর দরবারে কবুল হজ কামনা করেন। হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য দোয়া করেন। সমগ্র বিশ্বের কবরবাসীদের মাগফিরাত কামনা করেন।
খুতবায় তিনি সউদী হাজীদের উন্নয়নে গৃহীত সউদী সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশংসা করেন। সেইসঙ্গে তিনি বাদশাহর সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন ও দোয়া প্রার্থনা করেন।
দোয়ার মাধ্যমে শায়খ সুদাইস খুৎবা শেষ করেন। খুৎবার মাঝে বলেন, মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করা বিশেষ কাজ। দীর্ঘ ৩৫ বছর এই মিম্বরে দাঁড়িয়ে শায়খ আবদুল আজিজ আশ শায়খ খুৎবা দিয়েছেন। মানুষকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। নসিহত করেছেন। অসুস্থতার কারণে তিনি আজ খুৎবা দিতে সক্ষম হননি। তার জন্য দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা তার ইলমে, হায়াতে বরকত দান করুন। তাকে সুস্থতা দান করুন। আমিন।
গতকাল সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করে হাজীরা ৮ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফাতের ময়দান ত্যাগ করেন। মুজদালিফায় এসে একই আযানে মাগরিব এবং ইশা এক সাথে আদায় করে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন এবং মুজাদালিফা থেকে জামারায় নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করেন। এরপর আজকের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পূরণের লক্ষ্যে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে রাত যাপন করেন।
মুজদালিফায় রাত্রি যাপনের পর আজ সকালে সূর্যোদয়ের পর জামারায় পাথর নিক্ষেপের জন্য রওয়ানা হবেন হাজীরা। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাবার পূর্বে জামারাতুল আকাবায় (বড় জামরায়) ৭টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। জামরাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপের পর হাজীরা পশু কুরবানী করবেন। তবে সউদী হজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আযাহি সংস্থার মাধ্যমে কুরবানী করতে হয়। এ সংস্থা দীর্ঘদিন থেকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে হাজীদের কুরবানীর ব্যবস্থা করে আসছে। হাজীরা নির্ধারিত বুথে কুরবানীর টাকা জমা দিয়ে টিকেট সংগ্রহের মাধ্যমে এই কুরবানী করেন। বুথ থেকে টিকেট সংগ্রহের সময় দেয়া কুরবানীর সময় পার হবার পর হাজীগণ মাথা মুন্ডন করে ইহরাম খুলে স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন। একে তাহাল্লুলে আসগর বলা হয়। তাহাল্লুলে আসগরের সময় স্ত্রীসঙ্গ ব্যাতীত সবকিছু হালাল হয় আর তাহাল্লুলে আকবর-এর পর সবকিছু হালাল হয়।
অনেক হাজী আজই পবিত্র কাবা শরীফে গিয়ে তাওয়াফে ইফাযা (ফরয তাওয়াফ) সম্পন্ন করবেন এবং সায়ী করবেন। এর মাধ্যমে তাহাল্লুলে আকবর হয়ে যাবে। অনেকে আগামীকাল এবং একাংশ ১২ যিলহজ মক্কায় হারাম শরীফে গিয়ে ফরজ তাওয়াফ বা তাওয়াফে ইফাযাহ সম্পন্ন করবেন। হজযাত্রীদের ১১ ও ১২ যিলহজ মিনায় অবস্থান করে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরায় পাথর নিক্ষেপ করে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করে মক্কার বাসস্থানে ফিরে আসতে হবে। যারা ১২ যিলহজ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগে অসমর্থ হবেন তাদের ১৩ যিলহজ সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাবার পর তিনটি জামারাতে ৭টি করে ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে তারপর মিনা ত্যাগ করতে হবে। এরপর দেশে ফিরে আসার পূর্বক্ষণে কাবা শরীফে গিয়ে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন।
এদিকে মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে হাজীদের ভাগ ভাগ করে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সউদী হজ কর্তৃপক্ষ। গত বছর মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে ৭৫০ জন হাজীর মৃত্যু হয়। তবে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা দাবি করেছে এ সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছিল। এরপরই হজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নেয় সউদী কর্তৃপক্ষ।
সরকারি বার্তা সংস্থা সউদী গেজেট জানিয়েছে, অবৈধ হজযাত্রীদের আটকে বাহিতা ও হাদা এলাকায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে হাজীদের নিরাপত্তায় দ্রুত তিন হাজার উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থানান্তরে ১৭ হাজার কর্মী মোতায়েন করেছে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ। হজের পাঁচদিন মক্কা ও পবিত্র স্থানগুলো পরিষ্কারের জন্য ২৬ হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সউদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য মক্কায় পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ ও যন্ত্রপাতিসহ আটটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মিনা, আরফাতের ময়দান ও মুজদালিফায় ২৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। চলতি বছর মাতাফের (পবিত্র কাবার চারপাশে তাওয়াফের স্থান) স্থানও সম্প্রসারিত করেছে সউদী কর্তৃপক্ষ। মক্কা শরিফের রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার ঘণ্টায় ৩০ হাজার হাজী একসঙ্গে তাওয়াফ করতে পারবে। এর আগে এখানে ১৯ হাজার হাজী একসঙ্গে তাওয়াফ করতে পারত। এছাড়াও আরাফাত ও মুজদালিফায় হাজীদের পিপাসা নিবারণের জন্য ১৫ লাখ গ্যালন জমজমের পানি প্রস্তুত রাখা হয়।
বিমানের সিটি চেকিং : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কয়েক বছর ধরে হাজীদের সুবিধার জন্য সিটি চেকিং শুরু করেছে। অর্থাৎ ফ্লাইট ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে মক্কায় এবং ফ্লাইট ছাড়ার ৩৬ ঘণ্টা আগে মদিনায় যাত্রীর লাগেজ বিমান গ্রহণ করবে। বিমানবন্দর থেকে বিমানের লাগেজ গ্রহণ করা হবে না। একজন যাত্রী বিনা ভাড়ায় সর্বোচ্চ ৪৬ কেজি মালামাল বহন করতে পারবেন। একটি লাগেজের ওজন ৩০ কেজির বেশি হবে না। তাছাড়া, সউদী আরবের নিয়ম অনুযায়ী হাজীদের নিজ নিজ ফ্লাইটের ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা আগে জেদ্দা হজ টার্মিনালে মোয়াল্লেম পৌঁছে দেন। বিমানবন্দরে এই ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বসে থাকায় অনেকের ধৈর্যচ্যুতি হয়। এই তথ্যটি অনেক হজযাত্রীর অজানা। ফিরতি ফ্লাইট শেষে হাজিরা নানা ভোগান্তির অভিযোগ করেন তথ্যটি না জানার কারণে।
আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৮২৯ জন হজ পালনের জন্য সউদী আরব যান। এর মধ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ১৮৩ এবং বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ৯৫ হাজার ৬১৪ জন রয়েছেন। তাদের মধ্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৩ জন বাংলাদেশী হাজীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ ও ৯ জন মহিলা হজযাত্রী রয়েছেন। মক্কায় ২৪, মদীনায় ৮ ও জেদ্দায় ১ জন হজযাত্রী ইন্তেকাল করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উগ্রপন্থা পরিহার করুন : হজের খুতবায় শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ