পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লকডাউনের সুযোগে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলো বিদেশগামী কর্মীদের কাছ থেকে গলাকাটা হারে বিমান ভাড়া আদায় করছে। বিদেশগামী কর্মীদের তিনগুণ ভাড়া গুনতে নাভিশ্বাস উঠছে। সউদীগামী কয়েকজন প্রবাসী জানিয়েছেন, বিমানের ভাড়ার টাকা যোগাতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে তাদের। এক বছর আগে মাত্র ত্রিশ হাজার টাকায় ঢাকা-জেদ্দা রুটের ওয়ানওয়ে বিমানের টিকিট পাওয়া যেতো। আসন সঙ্কটের দোহাই দিয়ে সেই টিকিট ৭০ হাজার টাকা থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে জনশক্তি খাতে অভিবাসন ব্যয় হু হু করে বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে আগামী ২৭ এপ্রিল থেকে আল-জাজিরা এয়ারলাইন্স, কুয়েত এয়ারলাইন্স ও গালফ এয়ার চালু হচ্ছে। কিন্ত যৌক্তিক বিমান ভাড়া নির্ধারণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত ১৭ এপ্রিল সালাম এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট (ওভি-৩৯৮) এর যাত্রীরা ১ হাজার ৩০ মার্কিন ডলার দিয়ে ঢাকা থেকে জেদ্দায় গিয়েছেন। অথচ লকডাউনের আগে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ মার্কিন ডলারে ঢাকা-জেদ্দা রুটের টিকিট বিক্রি হয়েছে।
আটাবের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, ওমানের বেসরকারি এয়ারলাইন্স সালাম এয়ার বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে লুটের রাজ্য কায়েম করছে। লকডাউনের অযুহাতে আগের ক্রয়কৃত সকল টিকিটও বাতিল করে এয়ারলাইন্সটি চড়া দামে টিকিট বিক্রি করছে। এতে বিদেশগামী কর্মীরা চরম হয়রানি ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিদেশগামী অনেকেই টিকিটের বাড়তি অর্থ যোগাতে হিমসিম খাচ্ছে। বিদেশগামী কর্মীরা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বিমানের টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে, এয়ারলাইন্সগুলোর ভাড়া নিয়ন্ত্রণের যেনো কেউ নেই।
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ভ্রান্ত নীতির কারণে এয়ারলাইন্সগুলো বিদেশগামী কর্মীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আটাবের নেতৃবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আটাবের সাবেক মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারিতে প্রবাসী কর্মীসহ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। বিদেশগামী কর্মীদের বিমানের টিকিটের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে সকল বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিতে হবে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতার দরুণ কয়েকটি এয়ারলাইন্স সিন্ডিকেট করে বিদেশগামী কর্মীদের টিকিটের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। গত কয়েক দিন যাবত ঢাকা-জেদ্দা রুটের ওয়ানওয়ে টিকিট ৮০ হাজার টাকা থেকে ৮৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এক বছর আগে ঢাকা-জেদ্দা রুটের টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ২৮ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায়। আটাবের সাবেক মহাসচিব বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিদেশগামী কর্মীদের দ্রæত কর্মস্থলে গমন নিশ্চিতকরণে ওপেন স্কাই চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। টিকিট সঙ্কট নিরসনে দ্রæত সকল এয়ারলাইন্সগুলোকে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়ার দাবি জানান আব্দুস সালাম আরেফ।
বায়রার সাবেক অর্থ সচিব মিজানুর রহমান বলেন, সউদীগামী ফ্লাইটের টিকিটের দাম ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটিতে যেতে কর্মীদের ৯০ হাজার থেকে ৯৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ হযরত শাহজালাল (রহ.)আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের হ্যাঙ্গার ট্যাক্সসহ অন্যান্য ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়ায় বিদেশী এয়ালাইন্সগুলো বিদেশগামী যাত্রীদের ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বিদেশগামী কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বাড়ছে। এটা একটা ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৭% থেকে ১০% কর্মী পরিবহন করে থাকে। বাকি ৯০% কর্মী বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো বহন করে। বিমান ভাড়া কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোই বেশি লাভবান হচ্ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৭ হাজার ৮শ’ বিমান ভাড়ার পরিবর্তে গত ১৩ এপ্রিল সাউদিয়া এয়ালাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকা-রিয়াদ রুটে একজন কর্মী পাঠাতে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কিনতে হয়েছে। তিনি বিদেশগামী কর্মীদের কর্মস্থলে নির্বিঘেœ যোগদানের জন্য লেবার ফেয়ার নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রিক্রুটিং এজেন্সি ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান গতকাল শনিবার ইনকিলাবকে বলেন, সউদীগামী যাত্রীদের বিমান ভাড়া ৮০ হাজার টাকা থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বা তারচেয়েও বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত ও নেপাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মীদের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা। ফিলিপাইন, শ্রীলংকা ও পাকিস্তান থেকেও বিদেশগামী কর্মীদের বিমান ভাড়া খুবই কম। টিপু সুলতান বলেন, ২২ ঘন্টা আকাশপথ পাড়ি দিয়ে আমেরিকা যেতে বিমান ভাড়া লাগে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। আর মধ্যপ্রাচ্যের মাত্র ৬ ঘন্টার আকাশ পথের বিমান ভাড়া কয়েকগুণ গুনতে হচ্ছে। তিনি বিশ্ব শ্রমবাজার ধরে রাখতে অনতিবিলম্বে যৌক্তিক লেবার ফেয়ার নির্ধারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
গত ১৭ এপ্রিল থেকে সউদী আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সিঙ্গাপুরে বিশেষ ফ্লাইট চালু করা হয়। যাত্রী সংখ্যার ব্যাপারে বিধি-নিষেধের কড়াকড়ি শিথিল এবং অন্যান্য খরচ নির্ধারণ করে দেয়ায় ১৭ এপ্রিলের আগেই সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনগুলোকে টিকিটের দাম স্বাভাবিক নিয়মে রাখার অনুরোধ করে চিঠি দেয় ক্যাব। টিকিটের অতিরিক্ত দাম সম্পর্কে ক্যাবের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখব।’ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে এই বাড়তি দামের যোগস‚ত্র থাকতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল সরকার ঘোষণা দেয়, করোনার বিস্তার রোধে ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রাখা হবে। পরে নিষেধাজ্ঞা আরেক দফা বাড়ানো হলে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিশেষ ফ্লাইট অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ক্যাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।