Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রংপুরে কৃষি বিপ্লব

তামাকের জমিতে এখন আলু, ভুট্টা, বাদাম, সূর্যমুখী, নানা ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে

স্টালিন সরকার (রংপুর থেকে ফিরে) | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের ধনীদের গ্রাম হলো রংপুরের হারাগাছ। বাংলাদেশের আর দশটা গ্রাম থেকে ব্যতিক্রম। অসংখ্য শত কোটি টাকার মালিকের গ্রাম। অথচ বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার উপায় নেই। বাতাসে তামাটে গন্ধ। ধুলিকনায় তামাকের গুল্ম। ঘরের আঙিনায় পা ফেলবেন তামাকের গন্ধ। রান্নাঘরে খাবার খাবেন তামাকের গন্ধ। সর্বোত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তামাক পাতা। বিড়ি তৈরির সরঞ্জাম। আশপাশের রাস্তার দুধারে চোখ মেলবেন, দেখবেন তামাক ভরা ক্ষেত। চিরচেনা সেই হারাগাছে পা ফেলতেই মনে হলো এ কোন হারাগাছে এলাম? তামাক নেই, তামাক পাতার গন্ধ নেই! এমনকি বিশাল বিশাল প্রাচীরের ভিতরে অট্টালিকাসম বাড়িগুলোতে বিড়ি বানানোর ধুম নেই! হারাগাছ কি পাল্টে গেল? রহস্যজনক কান্ড! স্থানীয় সাংবাদিক মো. মেহেদী হাসান সুমন হারাগাছের এই পরিবর্তনের রহস্যের জট খুললেন। বললেন, হারাগাছে খুব কম বাড়িতে এখন বিড়ি তৈরি হয়। আর রংপুরের ৮ উপজেলাসহ পাশের জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নিলফামারীতেও তামাকের চাষ কমে গেছে। গ্রামের কৃষকরা নিজেরাই সচেতন হয়ে তামাকের বদলে জমিতে নানা ধরনের ফসলের চাষ করছেন। তিস্তা নদীর কয়েকটি চর ঘুরে হারাগাছে ঢুকেছি। সেখানে চা পর্বের পর বের হতেই চোখে পড়ল এই এলাকায় কয়েক বছরে চাষাবাদের পরিবর্তনটা বেশ হয়েছে। তামাকের জমিতে আলু, ভুট্টা, বাদাম, সূর্যমুখি, পেঁয়াজ নানা ধরনের সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বঙ্গবন্ধু সেতু (যমুনা ব্রিজ) চালু হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের সবজি প্রতিদিন ঢাকায় যায়। ফলে কৃষকরা শাকসবজি বিক্রি করতে পারেন। সে জন্যই তারা তামাকের বদলে শাকসবজিসহ অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

রংপুরে সব বড় রাস্তাই পাকা। বাইকে ঘুরছি তো ঘুরছি। দুই দিনে রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, গংগাছড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রাম ও নিলফামারী জেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম কয়েকদিন ঘুরে মনে হলো ভিতরে ভিতরে বৃহত্তর রংপুরে কৃষি বিপ্লব ঘটে গেছে। ঢাকায় যারা কৃষি নিয়ে কাজ করেন, প্রশাসনে যারা বড় বড় পদে রয়েছেন; তাদের অজান্তেই রংপুরে ঘটেছে এই কৃষি বিপ্লব। আগে যে জমিতে তামাক চাষ হতো; এখন সেখানে আলু, পটল, ভুট্টা, সূর্যমুখির চাষ হচ্ছে। আলু চাষে রংপুরে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। কয়েক বছর আগেও মাইলের পর মাইল জুড়ে ‘সবুজ তামাক পাতা’ চাষ হতো। কয়েকটি উপজেলা ছিল তামাকের জন্য বিক্ষাত(!)। রংপুরে ব্যাপকহারে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণসহ তামাক নির্ভর কারখানা গড়ে ওঠেছে। নেশা জাতীয় পণের ব্যবসা করেন দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কোম্পানী চাষিদের আগাম অর্থ দিয়ে তামাক পাতা চাষে উৎসাহিত করেন। তা ছাড়া পোকা মাকড় তামাক পাতায় ক্ষতি করতে পারে না; সে জন্য চাষিরা তামাক চাষ করতেন। রংপুরের গ্রামগুলোতে আগে গেলেই চোখে পড়ত মাঠ-ঘাট কিংবা রাস্তার ধারে বাঁশের বেড়া, ঘরের চাল, টিন আর ছনের বেড়া কোথাও খালি নেই। রোদে শুকানো হচ্ছে তামাক পাতা। বাড়ি বাড়ি শুকনো তামাকের স্ত‚প করে মাচা ভর্তি করা হচ্ছে। হঠাৎ কেউ গ্রামে এলে তামাকের উৎকট গন্ধে নাকে রুমাল চেপে পথ চলতে হতো। আর এসব কাজ করত নারী পুরুষ, এমনকি শিশুরাও। এটা ছিল রংপুরের গ্রামীণ চিত্র। সেই তামাক পাতায় হারগাছে তৈরি হতো বিড়ি-সিগারেট-গুলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য। প্রাণঘাতি নিকোটিন আছে জেনেও যুগের পর যুগ ধরে চলেছে তামাক চাষ! কাউনিয়ার কৃষক মো. মকবুল হোসেন জানান, বিভিন্ন কম্পানির লোকজন কৃষকদের আগাম টাকা ও কীটনাশক দেয়। এজন্য জমিতে তামাক আবাদ করেছেন। তবে এখন মানুষ তামাকের চাষ কমিয়ে দিয়েছে।

বাইকে ঘুরতে ঘুরতে হারাগাছের চর চতুরা গ্রামে চোখে পড়লো খালি জমিতে লাইন ধরে আলু পড়ে রয়েছে। কয়েকটি জমিতে আলু পড়ে থাকার এই দৃশ্য চোখে পড়ায় কৃষক মো. আজহারুল ইসলামকে জিজ্ঞাস করলাম এভাবে মাঠে আলু চুরি হয় না? জবাব, ‘কে আলু চুরি করবে বাহে? সবার জমিতে আলু। কার আলু কে খায়? টোকাই বাচ্চারা দিনে ১০ থেকে ২০ কেজি আলু কুড়ায়। আপনি রংপুর জেলার প্রতিটি গ্রামে দেখবেন শত শত একর জমিতে এভাবে আলু তুলে ফেলে রাখা হয়েছে। কামলা (ক্ষেতমজুর) এখানেই বস্তায় ভরবে; কেউ বিক্রি করবেন; কেউ কোল্ড স্টোরেজে পাঠাবেন’। আগে কৃষকের ঘরে ঘরে ছিল তামাকের আবাদ। বেশি লাভের জন্য কৃষকরা তামাক চাষ করতেন। তামাকের ভয়াবহতা জেনেও বেশি লাভের আশায় তামাক চাষ করেছি। এখন তামাকের জমিতে আলু, ভুট্টা, ধান চাষ করছি। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কৃষক সলিমুল্লাহ বললেন, ‘তামাকের তেমন রোগ-বালাই হয় না। তামাক চাষ করলে কোম্পানির লোক বাড়ি এসে হামাক তেল নাগায় তামাক কিনি নিয়া যায়। নগদ টাকার জন্যে হামরা তামাক চাষ করচি’। তিনি আরো বললেন, ‘হামরা কৃষক যে ফসলে লাভ হবে সেটাই আবাদ করমু। কায়ো হামাক তামাক আবাদ কইরবার নিষেদ করেনি। তামাক ক্ষতিকর বুঝতে পেরে এখন আলু আবাদ করচি’। রংপুর, লালমনিরহাট, নিলফামারী, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে একই দৃশ্য চোখে পড়ল।

হারাগাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নানা বয়সের মানুষ শ্বাসকষ্টসহ নানান জটিল চর্ম রোগে আক্রান্ত। এরা সবাই বিভিন্ন বিড়ি কারখানায় শিশু ও নারী শ্রমিক ছিলেন। স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, রংপুরে তামাক কারখানা থেকে বিষাক্ত ধুলিকনা ও খালি পেটে থেকে অধিক হারে ধূমপানের কারণে ‘বার্জাস’ নামে এক ভয়াবহ রোগে বিড়ি শ্রমিকরা আক্রান্ত হন। এ রোগে আক্রান্ত হলে হাত-পায়ে ক্ষত দেখা দেয়। দ্রæত পচনশীল এ রোগের চিকিৎসা অধিকাংশ লোকের পা-হাতের ক্ষতের সৃষ্টি হলে তা এক সময় কেটে ফেলতে হয়। গত ৩০ বছরে হারাগাছে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির পা কেটে ফেলতে হয়েছে। এছাড়া তামাকের কারণে হারাগাছের প্রায় ৪০ শতাংশ লোক শ্বাসকষ্ট ও গলায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তামাক কারখানায় কর্মরত নারীদের গর্ভজাত সন্তান শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়; অনেক শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়। সারাইয়ের আবদুল ওহাব আগে বিড়ির ব্যবসা করতেন। এখন পান দোকান দিয়েছেন। বললেন, ‘তামাকোত বিষ আছে। ওই কারণে শরীরে শক্তি থাকে না। সব সময় ক্লান্ত মনে হয়। মাঝে মধ্যে দম বন্ধ হয়া আইসে। এ জন্য হামরা তামাক আবাদ করচি না।’

রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে রংপুরের ৮ উপজেলায় ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। ওই বছর সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। এখন অর্ধেকের কম জমিতে চাষ হয়েছে। গংগাচরার মোতালেব হোসেন বললেন, ‘এক সময় আমাদের এলাকায় প্রচুর তামাক চাষ হতো। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে তামাক ক্ষেতে আর কেউ কাজ করতে চায় না। তামাক ক্ষেতে দীর্ঘ সময় কাজ করলে শরীর অসুস্থ হয়। এ কারণেই তামাক ছেড়ে অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। আর বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় সবজি ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানো যায়। কৃষকরা দাম পাচ্ছেন’। তিনি জানালেন, মূলত ১৯৭১ সালে রংপুরে তামাক চাষ ছড়াতে শুরু করে। রংপুর সদর, হারাগাছ, তারাগঞ্জ ও গঙ্গাচরা, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলায় তামাক চাষ হতো। এখন কম চাষ হচ্ছে।

রংপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য হলো, প্রতি মৌসুমে রংপুরের পাঁচ জেলায় ৮৬ হাজার ৬৪২ হেক্টর থেকে এক লাখ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে রংপুর অঞ্চলে প্রতি বছর ২২ লাখ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন হয়ে থাকে। রংপুরের পীরগাছা, কাউনিয়া, লালমনির হাট সদর, হাতিবান্ধা ঘুরে সে চিত্র পাওয়া গেল। কৃষকরা বলছেন, গত বছরে আলুর ভালো দাম ছিল। এবার আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে দাম কমে গেছে। তারপরও তামাকের বদলে আলু চাষ করছি। সরকার এখন পর্যাপ্ত কোল্ডস্টোরেজ প্রতিষ্ঠা করলে কৃষকরা আর তামাকের দিকে যাবে না।

পীরগাছা উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন জানালেন, তার এলাকায় আগে যে জমিতে তামাক চাষ হতো এখন চাষ নেমেছে এক চতুর্থাংশ। সে সব জমিতে চাষ হচ্ছে গ্রানোলা, লরা, মিউজিকা, ক্যারেজ, রোমানা ও ফাটা পাকরি নামের আলু। তিনি আরো জানান, দুই তিন বছর আগেও ঢাকা টু দিনাজপুর মহাসড়কের রংপুর অংশে দুই পাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় তামাকের চাষ দেখা যেত। তামাকের সেই জমিগুলোতে এখন অন্য ফসল চাষ করা হচ্ছে। তবে হিমাগারের অভাবে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রংপুর অঞ্চলে আলু সংরক্ষণের জন্য রয়েছে মাত্র ৬৭টি হিমাগার। এরমধ্যে ৪০টি রংপুর ও ১০টি নীলফামারীতে। বাকি তিন জেলায় ১৭টি হিমাগার। অথচ এখানে চাহিদা শতাধিক হিমাগারের।

গঙ্গাচরা পয়েন্টে তিস্তা নদীতে যখন পৌঁছি তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সঙ্গী সাংবাদিক এক বাসায় নিলেন পানি পান করাতে। সেখানে চোখে পড়ল বিঘার পর বিঘা জমিতে কুমড়ার আবাদ। মো: শহিদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বললেন, ‘এখানকার কৃষকরা তিস্তার চরে কুমড়া আবাদ করেন। আগে তামাক চাষ করতেন। তবে কাউনিয়া ও পীরগাছা এলাকার তিস্তার চরে বাদাম চাষ বেশি হচ্ছে। লালমনিরহাটে তামাকের জমিতে এখন ভুট্টা চাষ হচ্ছে।

পথে ঘুরতে ঘুরতে জমির দৃশ্য দেখে মনে হলো রংপুরে তামাক চাষের জমিতে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৯ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিভাগ হিসেব মতে, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে ৮৩ হাজার ১শ’ ৯২ মেট্রিকটন জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। মাঠ দেখে সেটা বোঝা যায়।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর, পীরগাছার রহমতের চর এলাকায় ঘুরে বেশ কয়েকজন ভুট্টা চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা তামাকের চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টা চাষ করছেন এবং ফলন ভালো পাচ্ছেন। কেউ কেউ বাদাম চাষ করে সাফল্য দেখিয়েছেন। কুড়িগ্রাম শহর থেকে বাইকে যখন লালমনিরহাট যাচ্ছি তখন রাস্তার দুধারে চোখে পড়ছে ভুট্টা আর সূর্যমুখি ফুলের চাষ। তামাকের জমিতে সূর্যমুখি চাষ হচ্ছে। ধরলা দ্বিতীয় সেতুর পাড়ের আজির উদ্দিন জানান, আগে তামাকে লাভ বেশি হতো। তাই সেটাই চাষ করছি। এখন ভুট্টা করছি। প্রতি একর জমিতে ভুট্টা চাষ করতে কৃষকের খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর ভুট্টা উৎপাদন হয় ৭৫ থেকে ৮০ মণ। প্রতি মণ বিক্রি হয় সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকা। সে হিসেবে একর প্রতি ভুট্টা চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা লাভ হয়। তামাক বিষাক্ত হওয়ায় চাষ ছেড়ে দিয়েছি।

রংপুরের কৃষি বিপ্লব করা চাষিরা জানান, ৩০ বছর আগে রংপুরের জমিতে ধান, পাটের মতোই তামাক চাষ হতো। এখন তামাক চাষ কমে গেছে। ২০১৯ সালে ৫ জেলায় তামাক চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫৭ হেক্টর জমিতে। ২০২০ সালে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে। এবার তামাক চাষের পরিমাণ আরো কমেছে। তামাক চাষে শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকি থাকায় তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা, সবজি, আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা।

রংপুর কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে লালমনিরহাট জেলায় তামাক চাষ হয়েছিল ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। অতপর রংপুরে ১ হাজার ৫৪০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৪০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে তামাক চাষ করেননি চাষিরা, নীলফামারীতে ৩ হাজার ১০৭ হেক্টর। ২০১৯ সালে তামাক চাষ হয় লালমনিরহাট জেলায় ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর, নীলফামারী জেলায় ৩ হাজার ২৩ হেক্টর, রংপুরে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৫০ হেক্টর জমিতে। ২০২০ সালে লালমনিরহাট জেলায় ৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর, রংপুরে ১৫ হেক্টর, আর অন্য জেলাগুলোতে এখনও তামাক চাষ করা হয়নি। চলতি বছর তামাক চাষের পরিমাণ আরো কমে গেছে। কৃষকদের দেখা তথ্য মতে, প্রতি বছর বিষাক্ত তামাক চাষের বদলে অন্য ফসল বেশি ফলাচ্ছেন কৃষকরা। কাউনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আলম জানান, ২০১৮ সালের পর এ উপজেলায় তামাক চাষ হচ্ছে না। তিস্তা নদীবেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের সবজি, ভুট্টা, আলু চাষ হচ্ছে। তামাক চাষ এখন আর নেই বললেই চলে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, প্রতি বছর রংপুর অঞ্চল থেকে তামাক চাষ কমে যাচ্ছে। তামাক চাষ ছেড়ে সবজি চাষে ঝুঁকে পড়ছেন চাষিরা। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় মানুষ তামাকের জমিতে আলু, ভুট্টা, বাদামসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করছেন। এতে কৃষকরা ভালো লাভ পাচ্ছেন।

বৃহত্তর রংপুর সফর করে ঢাকায় ফেরার সময় রংপুর শহরের এরশাদ মোড়ে কথা হয় কেফায়েত হোসেনের সঙ্গে। তার বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলায়। তিনি জানালেন, তিস্তার চরাঞ্চলের কৃষকরা এখন প্রায় ৩৪ ধরনের সবজি চাষ করছেন। আগে তারা তামাক চাষ করতেন। আর আলু চাষে রংপুর জেলা অনেক আগেই মুন্সীগঞ্জকে ছেড়ে গেছে। তামাক চাষ করলে জমির মাটির উর্বরতা শক্তি কমে। অন্য ফসল চাষে প্রভাব পড়ে। তামাক চাষে শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকি থাকে। তামাক চাষের পরিবর্তে ভুট্টা, আলু, ফুল, সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষক। কোথাও কোথাও চা চাষ হচ্ছে। রংপুরের কৃষকরা যে নীরবে এতোবড় কৃষি বিপ্লব ঘটালেন তা নিয়ে মিডিয়া কিছু লেখে না। অথচ মিডিয়ায় দেয়া হয় আউল-ফাউল খবর। মিডিয়ায় লেখেন, কৃষকদের উৎসাহ দেন, এতে রংপুরের কৃষক আরো উৎসাহিত হবেন। রংপুরের কৃষকদের তামাকের ‘না’ বলে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা দেশের অন্যান্য এলাকার কৃষকদের অনুপ্রেরণা দেবে।

 

 



 

Show all comments
  • Rukon Uddin ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
    রুপালি বালুচরে ‘সবুজের বিপ্লব’ ঘটে গেছে রংপুর অঞ্চলে। নিজেদের বুদ্ধি ও অর্থ খরচ করে আলু, পেঁয়াজ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচসহ প্রায় সব ফসলই আবাদ করছেন কৃষকরা
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mofazzal Hossain ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৩ এএম says : 0
    একদিকে সরকারের কোনও নীতি-সহায়তা না পাওয়া, আরেক দিকে উৎপাদিত ফসলের দাম না পাওয়ায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না চরের কৃষি।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal Hossain Mizi ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
    মাইলের পর মাইল আলু, মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ-রসুন, ভুট্টাসহ নানা ফল-ফসলের সমাহার। চরের নারী-পুরুষ জড়িয়ে পড়েছে চাষবাসে।শুধু দরকার সরকারি সহায়তা।
    Total Reply(0) Reply
  • বদরুল সজিব, রংপুর ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
    কিস্তির টাকা দিয়ে জমির আবাদ করেছি। কিন্তু এখন ফসলের দাম না পেলে আমরা মাঠে মারা যাব।
    Total Reply(0) Reply
  • রুবি আক্তার ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
    অত্যন্ত ভালো খবর। তামাকের বদলে সবজি চাষ হলে অনেক ভালো হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৭ এএম says : 0
    এই করোনার সময় কৃষি বিপ্লব দিয়েই আমাদের উঠতে হবে। সরকারকে িচাষিদের সহায়তা বাড়ানোর দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • মহীয়সী বিন্তুন ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ, তামাকের মতো কুখাদ্য চাষ থেকে চাষিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে খুবই ভালো খবর।
    Total Reply(0) Reply
  • হাদী উজ্জামান ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
    তবে যাতে কুষকরাা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সেদিকে সরসকারকে খেয়াল রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • দেওয়ান মাহদী ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১১:৪৯ এএম says : 0
    স্টালিন সরকারের উত্তরাঞ্চল নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনগুলো নিয়মিত পড়ি। উত্তরবঙ্গবাসীর সুখ-দুখ নিয়ে প্রতিবেদন করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Mofazzal Hossain ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ১১:৪৯ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ, এই বৈশ্বিক করোনা সংকটে কৃষি বিপ্লব দিয়েই বাঁচতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mizanur Chowdhury ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ২:৩৩ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের পলি মাটি কৃষির জন্য উর্বর। উন্নত প্রযুক্তি আর শিক্ষার অভাব না থাকলে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক বিপ্লব সম্ভব।
    Total Reply(0) Reply
  • Oback Monjur ২৩ এপ্রিল, ২০২১, ২:৩৩ পিএম says : 0
    অথচ এরাই দিনশেষে দুবেলা খাবারের জন্য অন্য পায় না।।আর এই কৃষি থাকার কারনে কোন সরকার আমাদের রংপুরের দিকে তাকায়নি
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraful alam ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৪১ পিএম says : 0
    কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মুল্য পায় না, পায় মধ্য সত্বভোগীরা এটাই বাস্তবতা।ফলে উৎপাদন খরচ মিটিয়ে কৃষকের হাতে যা থাকে তা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল। ফলে ঋৃনের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে হয় সারা বছর। প্রতিটি ফসল বুনার সময় নুুতুন করে ঋৃন নিয়ে করতে হয়। বিশেষতঃ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা হয়ে পরে দিশেহারা।এ বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। সকল প্রকার কৃষকের সঠিক তালিকা প্রনয়ন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা দরকার। অনেক কৃষক আছেন নিজেরা মাঠে কাজ করতে না পারায় পোষাতে পারেন না,ফলে জমি বর্গা দিয়ে দেন। কিন্তু বর্গাচাষীর বিষয়টাও ভাবতে হবে। সব মিলিয়ে কৃষি ও কৃষককে নিয়ে ব্যাপক গবেষনা প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraful alam ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১০:৪৪ পিএম says : 0
    কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মুল্য পায় না, পায় মধ্য সত্বভোগীরা এটাই বাস্তবতা।ফলে উৎপাদন খরচ মিটিয়ে কৃষকের হাতে যা থাকে তা দিয়ে সংসার চালানো মুশকিল। ফলে ঋৃনের বোঝা মাথায় নিয়ে চলতে হয় সারা বছর। প্রতিটি ফসল বুনার সময় নুুতুন করে ঋৃন নিয়ে করতে হয়। বিশেষতঃ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা হয়ে পরে দিশেহারা।এ বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। সকল প্রকার কৃষকের সঠিক তালিকা প্রনয়ন করে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা দরকার। অনেক কৃষক আছেন নিজেরা মাঠে কাজ করতে না পারায় পোষাতে পারেন না,ফলে জমি বর্গা দিয়ে দেন। কিন্তু বর্গাচাষীর বিষয়টাও ভাবতে হবে। সব মিলিয়ে কৃষি ও কৃষককে নিয়ে ব্যাপক গবেষনা প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষি

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ